বিশ্বকবির কলমের সৃষ্টির মতো বাস্তবের চিত্রাঙ্গদাও একজন ছকভাঙা রাজকন্যা। যিনি রাজতন্ত্রের শৃঙ্খলের বাইরে গিয়ে নিজের মতো করে সাজিয়েছেন জীবন। মাধবরাও সিন্ধিয়ার একমাত্র মেয়ে, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দিদি চিত্রাঙ্গদা যেন রাজঐতিহ্য আর আধুনিকতার আদর্শ মেলবন্ধন।
গ্বালিয়রের রাজপরিবার সিন্ধিয়া বংশে চিত্রাঙ্গদার জন্ম ১৯৬৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। তাঁর বাবা প্রয়াত মাধবরাও সিন্ধিয়া ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। চিত্রাঙ্গদার মা মাধবীরাজে সাহিব সিন্ধিয়া জন্মসূত্রে নেপালের রাজ পরিবারের মেয়ে।
চিত্রাঙ্গদার থেকে তাঁর ভাই জ্যোতিরাদিত্য বয়সে চার বছরের ছোট। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
প্রথমে মুম্বই এবং তার পরে দেহরাদুন ও দিল্লির নামী প্রতিষ্ঠানে চিত্রাঙ্গদার পড়াশোনা। তবে তিনি কোনওদিন সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেননি। যদিও তাঁর পরিবারের মেয়েদের মধ্যে ঠাকুমা বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া এবং দুই পিসি বসুন্ধরারাজে সিন্ধিয়া ও যশোধরারাজে সিন্ধিয়া ভারতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য নাম।
১৯৮৭ সালের ১১ ডিসেম্বর বিয়ে হয় চিত্রাঙ্গদার। পাত্র, জম্মু কাশ্মীরের রাজপরিবারের বিক্রমাদিত্য সিংহ। তাঁর ঠাকুরদা ডোগরা রাজবংশের হরি সিংহ ছিলেন জম্মু কাশ্মীরের শেষ ক্ষমতাসীন রাজা।
বিক্রমাদিত্যর জন্ম ১৯৬৪ সালের ৫ অগস্ট। প্রথমে দিল্লির মডার্ন স্কুল, তারপর সিঙ্গাপুর ও আমেরিকার নামী প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করেন তিনি।
বিক্রমাদিত্য একজন সক্রিয় রাজনীতিক। ২০১৫ সালে তিনি জম্মু কাশ্মীর পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। দু’বছর পরে তিনি দলত্যাগ করে যোগ দেন কংগ্রেসে। ২০১৯-এ উধমপুর কেন্দ্র থেকে তিনি বিজেপি প্রার্থী জিতেন্দ্র সিংহের কাছে পরাজিত হন।
রাজসিক অনুষ্ঠানে যুবরাজ বিক্রমাদিত্যকে বিয়ে করার পরে দু’বছর কাশ্মীরে ছিলেন চিত্রাঙ্গদা। তার পরে তাঁরা সপরিবারে চলে যান দিল্লি। নির্বাচনের আগে স্বামীর সঙ্গে সক্রিয় ভাবে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন চিত্রাঙ্গদা।
বিক্রমাদিত্য সিংহের আরও একটি পরিচয়, তিনি হোটেল ব্যবসায়ী। মূলত স্ত্রীর উদ্যোগে তিনি এই ব্যবসা শুরু করেন। বিক্রমাদিত্য সিংহের ঠাকুমার একটি প্রাসাদ ছিল হিমাচল প্রদেশে।
হিমাচলের পালামপুর জেলার কাংড়া উপত্যকায় ১৫ একর জমির উপর দাঁড়িয়ে আছে তারাগড় প্রাসাদ। ১৯৩৭ সালে নির্মিত এই প্রাসাদ ছিল ভাওয়ালপুর নবাব বংশের গ্রীষ্মকালীন আবাস। ১৯৫১ সালে এই প্রাসাদটি জম্মু কাশ্মীরের রাজ পরিবারের অধীনে আসে।
দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা এই প্রাসাদকে ধীরে ধীরে হোটেলে পরিণত করা হয়। মূল উদ্যোগী ছিলেন চিত্রাঙ্গদারাজে সিংহ-ই। ২৬ ঘরের এই হোটেল বিখ্যাত হিমালয়ের ধৌলাধর শ্রেণির অপূর্ব রূপ দেখতে পাওয়ার জন্য। তবে পরবর্তী সময়ে মালিকানার হাতবদল হয়েছে।
বিক্রমাদিত্য-চিত্রাঙ্গদার ছেলে মার্তণ্ড তাঁর বাবাকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সাহায্য করেন। তাঁদের মেয়ে মৃগাঙ্কার বিয়ে হয়েছে পঞ্জাবের রাজপরিবারে।
স্বামী বিক্রমাদিত্যের মতো চিত্রাঙ্গদাও পোলো খেলায় উৎসাহী। অবসরে ভালবাসেন ছবি আঁকতে। সক্রিয় রাজনীতি বা প্রচারের আলোয় বিশেষ আসতে চান না। দ্বিধাহীন ভাবে জানান, তিনি প্রাইভেট পার্সন। ব্যক্তিগত পরিসরের নিভৃত কোণে থাকতে পছন্দ করেন নিজের মতো করে।
রাজপরিবারের মেয়ে হলেও চিত্রাঙ্গদা খোলা হাওয়ার পরিবেশ পছন্দ করেন। আভিজাত্য ও ঐতিহ্যের পাশাপাশি চিত্রাঙ্গদা ভালবাসেন সাধারণ মেয়েদের মতো ঘুরে ঘুরে শপিং করতে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতেও। (ছবি: আর্কাইভ ও সোশ্যাল মিডিয়া)