Malcha Mahal

পরিত্যক্ত, ভৌতিক মহলে চরম অনটনে আত্মঘাতী শেষ অওয়ধ-নবাবের ‘প্রপৌত্রী’, নিঃসঙ্গ মৃত্যু সন্তানদের

প্রায় দশ বছর তাঁরা অস্থায়ী ভাবে ছিলেন দিল্লি স্টেশনের ভিআইপি এনক্লোজারে। শেষে বহু টানাপড়েনের পরে স্থির হয়, তাঁদের ঠাঁই হবে মালচা মহলে। ১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর পদক্ষেপে বেগম ওয়ালিয়ৎ মালচা মহলে থাকার অনুমতি পান। ১৯৮৫ সালের মে মাসে তিনি তাঁর ছেলে, মেয়ে ও পোষ্য কুকুরদের‌ নিয়ে এসে ওঠেন সেখানে। যা কোনও এক সময়ে ছিল অযোধ্যার নবাব বংশেরই।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ১০:১১
Share:
০১ ১৩

ব্রিটিশদের সঙ্গে সন্ধিতে না যাওয়া ভারতের বেশির ভাগ দেশীয় রাজপরিবারের পরিণতি ছিল করুণ ও ভয়াবহ। এমনই এক পরিণতির শিকার হয়েছিলেন আলি রাজা। যিনি নিজেকে অওয়ধের শেষ ‘যুবরাজ’ বলে দাবি করতেন। দিল্লির ঐতিহাসিক এবং ‘ভৌতিক’ মালচা মহলে তাঁর নিঃসঙ্গ মৃত্যু হয়েছিল।

০২ ১৩

অভিজাত দিল্লিতে দাঁড়িয়ে থাকা মালচা মহল তৈরি হয়েছিল চতুর্দশ শতকে ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে। এটি ছিল তাঁর শিকারকুঠি। পরে এটি ‘মালচা মহল’ বা ‘বিস্তদারি মহল’ নামে পরিচিত হয়।

Advertisement
০৩ ১৩

মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ দিকে ভারতে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন প্রাদেশিক শাসকরা। তাঁদের মধ্যে অন্যতম অযোধ্যার নবাব-বংশ। মালচা মহল ছিল তাঁদেরই। স্বাধীন ভারতে সরকারের কাছ থেকে সেটি ফিরে পেতে মঞ্চে অবতীর্ণ হন বেগম ওয়ালিয়ৎ মহল। তাঁর দাবি ছিল, তিনি লখনউয়ের শেষ নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের প্রপৌত্রী।

০৪ ১৩

ওয়াজিদ আলি শাহকে কলকাতায় নির্বাসিত করেছিল ব্রিটিশরা। তাঁর বিশাল পরিবার টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল কলকাতা-সহ সারা দেশে। সেই বিচ্ছিন্ন পরিবারের একটি শাখার স্বঘোষিত উত্তরাধিকারী ছিলেন বেগম ওয়ালিয়ৎ।

০৫ ১৩

সাতের দশকের মাঝামাঝি নিজেদের হারানো সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার দাবিতে তিনি আবির্ভূত হন জাতীয় মঞ্চে। ছেলে, মেয়ে, বেশ কয়েকটি কুকুর ও কয়েক জন পরিচারক নিয়ে থাকতে শুরু করেন দিল্লি স্টেশনের প্রথম শ্রেণির বিশ্রামাগারে। স্পষ্ট বলেন, দিল্লিতেই থাকবেন তাঁরা।

০৬ ১৩

প্রায় দশ বছর তাঁরা অস্থায়ী ভাবে ছিলেন দিল্লি স্টেশনের ভিআইপি এনক্লোজারে। শেষে বহু টানাপড়েনের পরে স্থির হয়, তাঁদের ঠাঁই হবে মালচা মহলে। ১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর পদক্ষেপে বেগম ওয়ালিয়ৎ মালচা মহলে থাকার অনুমতি পান। ১৯৮৫ সালের মে মাসে তিনি তাঁর ছেলে, মেয়ে ও পোষ্য কুকুরদের‌ নিয়ে এসে ওঠেন সেখানে। যা কোনও এক সময়ে ছিল অযোধ্যার নবাব বংশেরই।

০৭ ১৩

‘ভ‌ৌতিক’ মালচা মহল ঘিরে অনেক আগে থেকেই ছিল গুপ্তধনের গুজব। বেগম ওয়ালিয়ৎ থাকার সময় থেকে তা আরও তীব্র হয়। বাড়তে থাকল হানাদারদের উপদ্রব। বেশ কয়েকটি পোষা কুকুরকে মেরে ফেলা হয় বিষ দিয়ে।

০৮ ১৩

ঘন গাছপালায় ঘেরা মালচা মহলে ওয়ালিয়ৎ বেগম ও তাঁর সন্তানদের জীবন ছিল রহস্যাবৃত। কী ভাবে সংসার চলত, কেউ জানেন না। শোনা যায়, বিদেশ থেকে সামান্য সাহায্য আসত।

০৯ ১৩

১৯৯৩ সালে বেগম ওয়ালিয়তের রহস্যমৃত্যু হয়। শোনা যায়, তিনি হিরের গুঁড়ো খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। মায়ের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি দুই ভাই বোন। তাঁরা মায়ের দেহ স্টাডি টেবিলে সাজিয়ে রেখেছিলেন।

১০ ১৩

মৃত্যুর দশ দিন পরে সমাধিস্থ করা হয় বেগমকে। কিন্তু তাঁর কবরেও গুপ্তধনের খোঁজে হানা দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। এরপর বিদ্যুৎহীন মালচা মহলে থাকতেন ‘প্রিন্সেস’ সাকিনা এবং ‘প্রিন্স’ আলি রাজা। অতীতের দোর্দণ্ডপ্রতাপ অওয়ধি নবাবের বংশধররা যুদ্ধ করতেন তীব্র অনটনের সঙ্গে।

১১ ১৩

২০১৩ সালে মারা যান সাকিনা। তার চার বছর পরে প্রিন্স আলি রাজা। সোফার উপরে পড়েছিল তাঁর নিথর দেহ। পুলিশ এসে উদ্ধার করেছিল। কবে মারা গিয়েছেন, স্পষ্ট হয়নি। তবে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা নস্যাৎ করেছিল পুলিশ।

১২ ১৩

ওয়াকফ বোর্ডের সাহায্যে নামমাত্র ভাবে সমাধিস্থ করা হয়েছিল অওয়ধের নবাবি বংশের উত্তরসূরিকে। ভগ্নপ্রায় মালচা মহলে ইতস্তত পড়েছিল কিছু তামা আর পোর্সেলিনের বাসন, ছেঁড়া কাগজ, পুরনো ফটোগ্রাফ আর অনটনের চিহ্ন।

১৩ ১৩

‘ভৌতিক’ এবং ‘গুপ্তধনের আধার’ পরিচয় ছেড়ে বেরোতে পারেনি মালচা মহল। আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছে সেই ইতিহাস, যা বলছে, এখানেই দারিদ্রে তিলে তিলে শেষ হয়ে গিয়েছেন তিন জন, যাঁদের পূর্বপুরুষরা এক সময় ছিলেন উত্তর ভারতের বড় অংশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। ছবি : সোশ্যাল মিডিয়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement