হারাতে হয়েছে রাজকৌলীন্যের বংশপরিচয়। কিন্তু নিজের বিশ্বাস থেকে এক বিন্দুও সরেননি মানবেন্দ্র সিংহ গোহিল। প্রকাশ্যেই সদর্পে স্বীকার করেছেন, তিনি সমকামী। তিনি ভারতের প্রথম রাজপুরুষ যিনি লেসবিয়ান, গে ও রূপান্তরকামীদের জন্য আশ্রয় দিতে এগিয়ে এসেছেন।
স্বাধীন ভারতে রাজতন্ত্র নেই। কিন্তু পুরনো নেটিভ এস্টেটের সামাজিক সম্মান সামাজিক স্তরে বজায় আছে। সে রকমই একটি এস্টেট পশ্চিম গুজরাতের রাজপিপলা। সেখানকার রাজবংশের ৩৯তম প্রজন্মের উত্তরাধিকার ছিলেন মানবেন্দ্র। তিনি মহারানা শ্রী রঘুবীর সিংহ রাজেন্দ্রসিংহ এবং মাহারানি রুক্মিনী দেবীর একমাত্র পুত্র।
কৈশোর থেকেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বন্ধুদের থেকে তিনি আলাদা। কিন্তু নিজের পছন্দ অপছন্দ মুখ ফুটে বলতে পারেননি। মনে হয়েছিল, তাঁর কথায় হয়ত গুরুত্ব দেওয়া হবে না। রাজপরিবারের রীতি অনুযায়ী মানবেন্দ্রর বিয়ে হয়েছিল এক রাজকন্যার সঙ্গে। কিন্তু সেই বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। ছেলের বিবাহবিচ্ছেদ এবং যে কারণে এই বিচ্ছেদ, কোনওটাই মেনে নিতে পারেননি মানবেন্দ্রর বাবা-মা। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজপরিবারের তরফে ঘোষণা করা হয়, মানবেন্দ্রর সঙ্গে তাঁর বাবা-মা সব রকম সম্পর্ক ত্যাগ করছেন।
পরিবার থেকে ব্রাত্য হয়ে মানবেন্দ্র আপন করে নিয়েছেন সমাজের প্রান্তিক মুখগুলোকে। যাঁরা বাকি সমাজের চোখে অবাঞ্ছিত, তাঁদেরকেই নিজের পরিবার করে নিলেন।
তাঁর প্রাসাদের পনেরো একর জমিতে আশ্রয় তৈরি করছেন। সেখানে আশ্রয় পাবেন সমকামী ও রূপান্তরকামীরা। তাঁদের জীবিকার সংস্থানের জন্যেও ব্যবস্থা করা হবে।
মানবেন্দ্রর মনে হয়েছে, তাঁর মতো এঁরাও সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই তাঁরা যেন নিজেদের মতো বাঁচতে পারেন, তার জন্য নিরাপত্তার আশ্রয় দিতে চান ছকভাঙা মানবেন্দ্র। এলজিবিটি মানুষের জন্য কাজ করে তাঁর সংস্থাও। বিদেশ থেকেও সাড়া পেয়েছেন তিনি।
মানবেন্দ্রর কথায়, তাঁর জীবনে তো আর সন্তান আসবে না। তাই তাঁর সম্পত্তি তিনি কাজে লাগাতে চান প্রান্তিক মানুষের কল্যাণে।
যে প্রাসাদে মানবেন্দ্র থাকেন, সেটি ১৯২৭ সালে নির্মিত। সেখানে সৌরশক্তির প্যানেল স্থাপন করে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। চেষ্টা চলছে জৈব চাষেরও।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শো-য়ে অংশ নিয়েছেন মানবেন্দ্র সিংহ গোহিল। তার মধ্যে অন্যতম ওপ্রা উইনফ্রে শো। সবখানেই তিনি সোচ্চার হয়েছেন সমকামী ও রূপান্তরকামীদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে।
মানবেন্দ্রই ভারতের একমাত্র রাজপুরুষ যিনি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন তিনি নিজে সমকামী। পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর মতো বাকি মানুষেরও। উজান স্রোতে সাঁতার কেটেই সুখী হতে চান তিনি। অস্কার ওয়াইল্ডের ‘হ্যাপি প্রিন্স’-এর মতো।