এক তুষ্ট হলে অন্যে রুষ্ট, আদর্শ হচ্ছে না গ্রাম

ঘোষণার পরে কেটে গিয়েছে তিন মাস। এক মাস আগে প্রকল্প চালুও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রীর আবেদনের পরেও নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের একটি গ্রামকে বেছে নিয়ে সেটিকে ‘আদর্শ’ হিসাবে গড়ে তোলার ব্যাপারে তেমন গা নেই সাংসদদের। এমনকী বিজেপি সাংসদরাও সে ভাবে এগিয়ে আসেননি। বেশির ভাগেরই ভয়, একটা গ্রামের পিছনে টাকা ঢাললে বাকি গ্রামগুলির বাসিন্দারা ভোটের সময় হাত উপুড় করবেন না। এই অবস্থায় সাংসদদের উজ্জীবিত করতে ফের আসরে নামছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০০
Share:

ঘোষণার পরে কেটে গিয়েছে তিন মাস। এক মাস আগে প্রকল্প চালুও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রীর আবেদনের পরেও নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের একটি গ্রামকে বেছে নিয়ে সেটিকে ‘আদর্শ’ হিসাবে গড়ে তোলার ব্যাপারে তেমন গা নেই সাংসদদের। এমনকী বিজেপি সাংসদরাও সে ভাবে এগিয়ে আসেননি। বেশির ভাগেরই ভয়, একটা গ্রামের পিছনে টাকা ঢাললে বাকি গ্রামগুলির বাসিন্দারা ভোটের সময় হাত উপুড় করবেন না। এই অবস্থায় সাংসদদের উজ্জীবিত করতে ফের আসরে নামছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

কেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনছেন না এমনকী বিজেপি সাংসদরাও?

কারণটা স্পষ্ট করে দিয়ে বিজেপির এক লোকসভার সাংসদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করা আমাদের লক্ষ্য নয়। কিন্তু কিছু বাস্তব সমস্যা রয়েছে, যেটি সরকারকেও বুঝতে হবে।” তাঁর ব্যাখ্যা, একটি গ্রাম বেছে নিয়ে সেখানে সাংসদ তহবিলের সিংহভাগ অর্থ খরচ করে ফেললে অন্য গ্রামগুলির বাসিন্দারা রুষ্ট হবেন। ভোটের সময় সর্বত্রই কিছু না কিছু করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাংসদ তহবিলের সিংহভাগ একটি গ্রামে খরচ করলে পাঁচ বছর পর ভোটের সময় সমস্যা হবে। ওই সাংসদের কথায়, “তখন বাকিরা বলবেন, একটি গ্রামের ভোটেই সন্তুষ্ট থাকুন!” বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ বিনয় কাটিয়ারের বক্তব্যেও সেই বঞ্চনারই যুক্তি। তিন বলেন, “আমি ফৈজাবাদ কেন্দ্র থেকে তিন বার জিতেছি। এখন না হয় রাজ্যসভায় আছি। চাইলে উত্তরপ্রদেশের যে কোনও গ্রাম বেছে নিতে পারি। কিন্তু আগে একটি হ্যান্ডপাম্প লাগাতে ১৫ হাজার টাকা লাগত, এখন ৫০ হাজার। এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে ৪০-৫০ লক্ষ টাকা লাগে। এত দিন সব জায়গায় অল্প-অল্প করে সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ করেছি। এখন একটি গ্রামকে আদর্শ করতে গেলে বাকিরা তো বঞ্চিত হবে!”

Advertisement

মোদীর ডাকে প্রথম সাড়া দেওয়া বিহারের সাসারামের বিজেপি সাংসদ ছেদী পাসোয়ান কিন্তু এই সব যুক্তি মানতে চাননি। ছেদী আজ বলেন, “একটি গ্রামের উন্নয়ন হলে বাকি গ্রামও তা অনুকরণ করতে পারে। শুধু কি এক জন সাংসদই সব করেন? কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নানান প্রকল্প, বিভিন্ন অসরকারি সংস্থাও বিভিন্ন গ্রামে কাজ করে। কোনও একটি জায়গা থেকে তো শুরু করা হোক। অনেক গ্রাম এমনিতেই তুলনামূলক ভাবে উন্নত। যেটি সবথেকে পিছিয়ে সেটিকেই তো প্রথম বেছে নিলে হয়।” সেই কাজই করেছেন তিনি। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমারকে হারিয়ে সাংসদ হওয়া ছেদীর কথায়, “আমি প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সবার আগে সাড়া দিয়ে একটি অনুন্নত গ্রাম মলহিপুরকে বেছে নিয়েছি। এ গ্রামের শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, কৃষির উন্নয়ন থেকে শুরু করে নেশামুক্তি, রোজগারের ব্যবস্থা করব আমি।”

স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লা থেকে বক্তৃতায় এই আদর্শ গ্রাম প্রকল্পের ডাক দিতে গিয়ে মোদী জানিয়েছিলেন, প্রত্যেক সাংসদ যদি একটি করে গ্রাম বেছে নিয়ে সেটির সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নয়ন করেন, তা হলে লোকসভা-রাজ্যসভা মিলিয়ে প্রায় আটশো সাংসদ এই প্রকল্পে যুক্ত হবেন। তাঁর বক্তব্য, দেশের প্রায় আড়াই লক্ষের বেশি গ্রাম আছে। প্রত্যেক সাংসদ আগামী পাঁচ বছরে যদি অন্তত তিনটি করে গ্রামকে আদর্শ হিসাবে গড়ে তোলেন, তা হলে দু’হাজারেরও বেশি গ্রাম উন্নত পরিষেবা পাবে। গত মাসে জয়প্রকাশ নারায়ণের জন্মবার্ষিকীতে ‘সাংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা’ নামে এই প্রকল্প চালুও করে দেন মোদী। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সেই ঘোষণার তিন মাস পরেও এখনও পর্যন্ত জনা দশেকের বেশি সাংসদ এগিয়ে আসেননি এই প্রকল্পে সামিল হতে!

ছেদী পাসোয়ানের পরে যে ক’জন এগিয়ে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ সচিন তেন্ডুলকর। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নেল্লোরে একটি গ্রামের ভার নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। সাইক্লোন হুদহুদের পর বেঙ্কাইয়া নায়ডু বিশাখাপত্তনমের একটি উপকূলবর্তী গ্রামের দায়িত্ব নিয়েছেন। দিল্লিতে বিজেপি সাংসদ মীনাক্ষী লেখি এক সঙ্গে পাঁচটি গ্রামের দায়িত্ব নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। মোদীর প্রাক্তন নির্বাচনী কেন্দ্র বডোদরার বর্তমান সাংসদ রঞ্জন ভাটও এগিয়ে এসেছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির দু’জন সাংসদ রয়েছেন। তার মধ্যে বাবুল সুপ্রিয় বিদেশে থাকায় তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। অন্য জন্য, সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, “এখনও গ্রাম বেছে নেওয়ার জন্য সময় রয়েছে।”

এই পরিস্থিতিতে সাংসদদের উৎসাহ দিতে আসরে নামলেন মোদী নিজেই। এই সপ্তাহের শেষে তিনি নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসী যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পর এই প্রথম। প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় সূত্রের খবর, বারাণসী থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে কাকরাহিয়া গ্রামটির ভার নেবেন মোদী। তখনও তিনি সাংসদদের এগিয়ে আসার জন্য ফের আবেদন জানাবেন। অমিত শাহকেও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন সাংসদদের এই কাজে এগিয়ে আসার জন্য। এ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে সংসদের অধিবেশনের সময় ফের এই বিষয়টি নিয়ে চাপ বাড়াবেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “একটি গ্রামকে দত্তক নিয়ে সেটিকে আদর্শ করার জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন সদিচ্ছার। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় অনায়াসে এই কাজটি করা যায়। সাংসদদের সেটিই আর এক দফা বোঝানো হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement