ফাইল চিত্র।
আলিগড়ের এক মুসলিম তালা ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর পিতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আজ স্মৃতিচারণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানালেন, উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভরসার কথা। যা দেখে বিরোধীদের বক্তব্য, অতীতে ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর মুখে নতুন-নতুন কাহিনি শোনা গিয়েছে। এ যাত্রায় উত্তরপ্রদেশে ভোট প্রচার শুরু হতেই নতুন কাহিনি সামনে আসা শুরু হল। তাঁদের এ-ও বক্তব্য, আজ প্রধানমন্ত্রী নিজের পরিবারের সঙ্গে মুসলিম ব্যবসায়ীর সুসম্পর্কের উদাহরণ টেনে দল তথা নিজের উদার ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করলেও, যাঁর আমলে গুজরাতে ও দিল্লিতে দাঙ্গা হয়, তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বছর ঘুরলেই উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন। ইতিমধ্যেই সে রাজ্যে হিন্দু ভোট মেরুকরণের উদ্দেশ্যে তৎপর বিজেপি শিবির। ঘটনাচক্রে, আজ আলিগড়ের মতো মুসলিম প্রধান এলাকায় জাঠ রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ সিংহের নামে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মোদী, সেটিরও উদ্দেশ্য হিন্দু বিশেষত জাঠদের তোষণ বলেই মত রাজনীতির অনেকের। পরে আলিগড়কে কেন্দ্র করে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত শিল্পতালুক সংক্রান্ত প্রদর্শনীতে প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিতা, গুজরাতের বডনগরের বাসিন্দা দামোদরদাস মোদীর সঙ্গে আলিগড়ের এক মুসলিম ব্যবসায়ীর সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “আজ থেকে ৫০-৫৫ বছর আগে গুজরাতের প্রত্যন্ত এলাকায় আলিগড়ের পরিচিতি ছিল তালা তৈরির জন্য। আমার এখনও মনে আছে, সে সময়ে কালো কোট পরে এক জন তালা ব্যবসায়ী আলিগড় থেকে গিয়ে আমাদের গ্রামের দোকানগুলিতে তালা রেখে যেতেন, বিক্রির জন্য। তালা বিক্রির টাকা আদায়ে প্রতি তিন মাস অন্তর তিনি গ্রামে আসতেন।’’ সে সময়ে ওই ব্যবসায়ী চার-ছয় দিন বডনগরে এসে থাকতেন এবং সংলগ্ন এলাকার দোকানগুলি থেকে তালা বিক্রির টাকা আদায় করতেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেই তালা ব্যবসায়ীর সঙ্গে আমার পিতার বন্ধুত্ব ছিল। ওই মুসলিম ব্যবসায়ী ফি দিনের সংগৃহীত টাকা আমার পিতার কাছে জমা রাখতেন। আদায় শেষ হলে তিনি জমা টাকা বুঝে নিয়ে আলিগড়ে ফেরার ট্রেন ধরতেন।’’
গুজরাতের দাঙ্গায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকা নিয়ে এখনও বিরোধীদের মনে প্রশ্ন রয়েছে। গত বছর দিল্লি সংঘর্ষের সময়ে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। সে সময়ে শাহিন বাগে, জামিয়া মিলিয়ায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)-এর বিরোধিতায় যাঁরা অবস্থানে বসেছিলেন, তাঁদের পোশাক নিয়ে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, কারা সিএএ বিরোধিতায় আন্দোলন করছে, তা তাদের পোশাক দেখলেই বলে দেওয়া যায়। তাই কংগ্রেসের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী সৌভ্রাত্রের কাহিনি শুনিয়েছেন আজ। কিন্তু পিতার কাছ থেকে সৌভ্রাত্রের শিক্ষা কি প্রধানমন্ত্রী আদৌ গ্রহণ করেছেন ? দলের যুব কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি শ্রীনিবাস বিভি বলেন, “গোটাটাই যে ভোটের কথা ভেবে, তা বুঝতে কারও বাকি নেই। আগামী দিনে এ রকম আরও নিত্যনতুন কাহিনি শোনা যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।’’