কৃষক আন্দোলন চলছে টানা ১৩৩ দিন। তার মধ্যে জিরিয়ে নেওয়ার সামান্য বন্দোবস্ত। বৃহস্পতিবার দিল্লি-গাজিপুর সীমানায়। ছবি: প্রেম সিংহ
দিল্লির সীমানায় পঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকরা আন্দোলন শুরু করার পরে ডিসেম্বরে আচমকাই এক রবিবারের সকালে রাকাবগঞ্জ গুরুদ্বারে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যে গুরুদ্বারের জমিতে শিখ গুরু তেগ বাহাদুরের মৃতদেহ দাহ করা হয়েছিল। তার পরে ফের আজ, বৃহস্পতিবার গুরু তেগ বাহাদুরের ৪০০তম জন্মবার্ষিকী পালন নিয়ে শীর্ষ স্তরের বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন, তাঁর আদর্শ জীবনে পালনের প্রয়োজনীয়তার কথা।
যদিও রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘দিল্লির উপকণ্ঠে প্রতিবাদী কৃষকরা আজ ১৩৩ দিন ধরে বসে রয়েছেন। তাঁদের অনেকে গুরু তেগবাহাদুরের অনুগামী। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, তিনি আলোচনার জন্য একটি মাত্র ফোন-কল দূরে। কিন্তু সেই দূরত্ব আজও মেটেনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, তিনি চাষিদের সঙ্গে খোলা মনে আলোচনায় বসুন। তাঁদের দাবিদাওয়া শুনুন। ওই সমস্যা মিটলে, তবেই গুরু তেগবাহাদুরের ৪০০তম জন্মজয়ন্তী অনেক বেশি উচ্ছ্বাসের সঙ্গে পালিত হতে পারবে।’’
নবম শিখ গুরু তেগ বাহাদুরের ৪০০তম জন্মবার্ষিকী পালনের রূপরেখা তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরি হয়েছে। এ দিন সেই কমিটির বৈঠকে মোদী বলেন, গুরু তেগ বাহাদুরের জীবন দর্শন জানা তরুণ প্রজন্মের জন্য জরুরি। তাঁর প্রভাব ছাড়া গত চার শতাব্দী কল্পনা করা যায় না। পঞ্জাবে যখন প্রায় রোজ বিজেপির নেতা-মন্ত্রী-সাংসদরা কৃষকদের বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
কৃষি আইন নিয়ে যে শুধু কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে মোদী সরকারের সংঘাত বেঁধেছে, তা নয়। পঞ্জাবে দীর্ঘ দিনের জোটসঙ্গী শিরোমণি অকালি দলের সঙ্গে বিজেপির বিচ্ছেদ ঘটেছে। শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটির সঙ্গেও বিবাদ বেঁধেছে। দিল্লির চাঁদনি চকে শিসগঞ্জ গুরুদ্বারের সামনে গুরু তেগ বাহাদুরের স্মরণে স্মারক বা তাঁর মূর্তি নির্মাণেরও পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। এই শিসগঞ্জ গুরুদ্বারের সামনেই মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজ়েবের নির্দেশে গুরু তেগ বাহাদুরের শিরচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু মূর্তি তৈরির পরিকল্পনার ঘোর বিরোধিতা করেছে শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি ও তার দিল্লির কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি লিখে প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। যুক্তি, গুরুর মূর্তি তৈরি শিখ সংস্কৃতির বিরোধী।
আজ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, পঞ্জাব-রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীরাও উপস্থিত ছিলেন। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ দাবি তোলেন, পঞ্জাব সরকার গুরু তেগ বাহাদুরের ৪০০তম জন্মবার্ষিকী পালনে যে ৯৩৭ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে, কেন্দ্র তা মঞ্জুর করুক। ওই কমিটির সদস্য হিসেবেই চাষিদের কথা তুলেছেন খড়্গে।