প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
জাতগণনা নিয়ে সরব কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া মঞ্চকে পাল্টা আক্রমণ করতে গিয়ে মহারাষ্ট্র নির্বাচনের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওবিসি এবং দলিত তাসই খেলে চলেছেন। আমদানি করেছেন, ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’, অথবা ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’-র মতো স্লোগান। আজ বিদর্ভ অঞ্চলে প্রচারেও সেই সুরই ধরে রাখলেন মোদী।
কংগ্রেসকে ‘দলিত এবং সংরক্ষণ-বিরোধী’ হিসাবে তুলে ধরে সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশকে কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া মঞ্চের থেকে দূরে রাখতে চাইছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এটি সেই কৌশলেরই অংশ। মোদীর সাবধানবাণী, কংগ্রেস দলিতকে বিভিন্ন জাতে ভাগ করে তাদের আত্মপরিচয় দুর্বল করতে চাইছে। কারণ তা হলে সংরক্ষণ ছিনিয়ে নিতে সুবিধা হবে। আসন্ন নির্বাচনে তাই ‘এক থাকলেই নিরাপদে থাকা যাবে’ বলে ভোটারদের আহ্বান জানাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
পূর্ব বিদর্ভের সোলাপুরের জনসভায় মোদী আজ রাহুল গান্ধীকে ‘শাহজ়াদা’ সম্বোধন করে বলেছেন, “শাহজ়াদা বিদেশে গিয়ে প্রকাশ্যেই সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার অভিলাষ কংগ্রেসের আজকের নয়। এমন একটা সময় ছিল যখন কংগ্রেস খবররের কাগজে সংরক্ষণ-বিরোধী বড় বড় বিজ্ঞাপন দিত। আজ ইন্টারনেটের যুগ। কংগ্রেসের সেই সংরক্ষণ-বিরোধী ভাষ্য সমাজমাধ্যম অথবা নেটে খুঁজলেই পাওয়া যাবে।”
প্রসঙ্গত রাজীব গান্ধীর জমানায় কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহৃত একটি বিজ্ঞাপন এর আগেও তুলে ধরেছিলেন মোদী, যেখানে জনজাতি, উপজাতি ও ওবিসিদের সংরক্ষণ তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আজ তাঁর কথায়, “শাসক জোট মহাযুতির ঐক্যবদ্ধ চেহারা দেখে সন্ত্রস্ত কংগ্রেস একটি জাতের সঙ্গে অন্য জাতের ঝগড়া বাধানোর চেষ্টা করছে। আপনারা কি কংগ্রেসের এই ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দেবেন? আপনাদের কাছে আমার তাই অনুরোধ, এক রহেঙ্গে তো সেফ রহেঙ্গে।” তাঁর কথায়, “দেশের জনজাতির পরিমাণ শতকরা ১০ শতাংশ। কংগ্রেস তার মধ্যে বিভাজন করতে চাইছে। এই শাহি পরিবারের এমনই মানসিকতা যে, তারা চায় নিজেরাই সর্বদা শাসন করবে। সে কারণেই স্বাধীনতার পর থেকে দলিত, পিছড়ে বর্গ এবং জনজাতিদের উন্নয়নের জন্য তারা কোনও চেষ্টাই করেনি। এখন দলিতদের বিভিন্ন জাতে ভেঙে দিতে চাইছে কংগ্রেস। কারণ তা হলে জাতিচিহ্ন সুপ্ত হয়ে তারা দুর্বল হয়ে পড়বে। এর ফলে সংরক্ষণ কেড়ে নেওয়া সহজ হবে।”
বিরোধী জোট মহাবিকাশ আঘাড়িকে দুর্নীতি নিয়েও বিঁধেছেন মোদী। আজ জনসভায় তাঁর অভিযোগ, মহারাষ্ট্রের বিকাশ বন্ধ করে দিয়েছিল এই জোটের সদস্যরা। শহরের উন্নয়ন প্রকল্পগুলিকে ঝুলিয়ে রাখার ব্যাপারে এই জোট ‘জোড়া পিএইচডি’ লাভ করেছে বলে ব্যঙ্গ করেন মোদী। দাবি করেন, মহাবিকাশ আঘাড়ি দুর্নীতির প্রশ্নে ‘সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়’।
জনজাতি-দলিতের পাশাপাশি কৃষক মন জয়ের জন্যও আজ কিছু বাক্যব্যয় করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। বিদর্ভ অঞ্চলে জলের সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই অঞ্চলে কংগ্রেস এবং তার শরিক দলগুলি জলসেচ প্রকল্প গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা এই সমস্যার সমাধান করেছি। আজ আমাদের প্রয়াসে সোলাপুর এলাকার অনেক গ্রামে জলের সমস্যা দূর হয়েছে।”