Inflation

খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ‘স্বাভাবিক’, দাবি করল কেন্দ্র

সেপ্টেম্বর মাসে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৪ শতাংশ ছুঁয়েছে। এপ্রিল মাসের পরে এই মূল্যবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি গরিব-মধ্যবিত্তের কাছে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৪৯
Share:

গণবণ্টন মন্ত্রকের সচিব সুধাংশু পাণ্ডে। ছবি সংগৃহীত।

খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি একের পর এক রেকর্ড ভেঙে দিলেও মোদী সরকার আজ দাবি করল, খাদ্যপণ্যের দাম মোটেই ‘অস্বাভাবিক’ হারে বাড়েনি। যেটুকু দাম বেড়েছে, তা প্রত্যাশিত। চাল-গমের দাম আরও বাড়লে তা সামাল দিতে বাজারে সস্তায় চাল-গম ছাড়ার মতো খাদ্যশস্য সরকারের ঘরে রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেন্দ্রীয় খাদ্য, ক্রেতা সুরক্ষা ও গণবণ্টন মন্ত্রক অবশ্য আজ দাবি করেছে, সরকারের ঘরে যথেষ্ট খাদ্যশস্য রয়েছে। প্রয়োজন পড়লেই সরকার হস্তক্ষেপ করবে।

Advertisement

কিন্তু সরকার কবে হস্তক্ষেপ করবে, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি খাদ্য, ক্রেতা সুরক্ষা, গণবণ্টন মন্ত্রকের সচিব সুধাংশু পাণ্ডে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘খাদ্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়নি। যখন সরকার দেখবে মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে, তখন হস্তক্ষেপ করা হবে।’’ কিন্তু সরকার কখন মূল্যবৃদ্ধি ‘অস্বাভাবিক’ বলে মনে করবে, তা নিয়ে তিনি নির্দিষ্ট জবাব দিতে চাননি। তাঁর যুক্তি, এ বিষয়ে সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।

সেপ্টেম্বর মাসে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৪ শতাংশ ছুঁয়েছে। এপ্রিল মাসের পরে এই মূল্যবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি গরিব-মধ্যবিত্তের কাছে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। উৎসবের মরসুমের আগে সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার বেড়ে ৮.৬ শতাংশ ছুঁয়েছে। গত ২২ মাসে খাদ্যপণ্যের এতটা মূল্যবৃদ্ধি হয়নি। এর মধ্যে চাল, গমের মতো খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে ১১.৫ শতাংশ। ২০১৩ সালের পরে খাদ্যশস্যের দাম এত বাড়েনি।

Advertisement

কেন্দ্রীয় সরকারেরই এই তথ্য সামনে থাকা সত্ত্বেও পাণ্ডের দাবি, ‘‘ফসলের এমএসপি বাড়ানো হয়েছিল। চাষিরা উপকৃত হয়েছেন। বিশ্ব বাজারে তেলের দামের ফলে এ দেশে তেলের দাম বাড়ায় পরিবহণের খরচ বেড়েছে। সব দিক দেখে বলা যায়, দাম বৃদ্ধি মোটেই অস্বাভাবিক নয়।’’ তাঁর যুক্তি, গমের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে কেন্দ্রীয় সরকার রফতানিতে রাশ টেনেছিল। না হলে গমের দাম দেশের বাজারে আরও বাড়ত। কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, ‘‘যে সরকারের অর্থমন্ত্রী টাকার দরের পতনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, টাকার দর পড়ছে না, ডলারের দর বাড়ছে, সেই সরকারের থেকে এর বেশি কী আশা করা যায়? বিজেপি রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে কার্টুন তৈরি করতে ব্যস্ত। বাস্তবে মোদী সরকার গত আট বছর ধরে দেশের মানুষকে কার্টুন বানিয়ে রেখেছে।’’

রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে গোটা বিশ্বেই গমের জোগানে টান পড়েছে। গমের রফতানিতে রাশ টানলেও শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, আফ্রিকার দেশগুলিকে গম দিয়ে সাহায্য করতে হয়েছে ভারতকে। এ দিকে ফসল নষ্ট হওয়ায় গমের উৎপাদন মার খেয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের গুদামে যথেষ্ট খাদ্যশস্য রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, সরকারি তথ্যই বলছে, এফসিআইয়ের গুদামে গমের পরিমাণ ছয় বছরে সর্বনিম্ন। গত বছর অক্টোবরে যত গম মজুত ছিল, এখন রয়েছে তার অর্ধেক। চালের মজুত যথেষ্ট রয়েছে। কিন্তু গমের পরিমাণ কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারকে রেশনে বা প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় গমের বদলে চাল বিলি করতে হচ্ছে। জোয়ার-বাজরা-রাগি-ভুট্টাও বিলি করার চেষ্টা হচ্ছে। খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ কমে যাওয়াতেই কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক নিখরচায় বাড়তি রেশনের প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার মেয়াদ বাড়াতে আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু গুজরাত-হিমাচলের ভোটের কথা মাথায় রেখে তার মেয়াদ বাড়াতে হয়েছে।

এফসিআইয়ের চেয়ারম্যান অশোক কে কে মিনা অবশ্য বলেন, ‘‘১ অক্টোবরের হিসেবে সরকারের কাছে বাফার স্টক হিসেবে ন্যূনতম ২০৫ লক্ষ টন গম থাকার কথা ছিল। আমাদের গুদামে ছিল ২২৭ লক্ষ টন। চাল থাকার কথা ছিল ১০৩ লক্ষ টন। ছিল ২০৫ লক্ষ টন।’’ তাঁর দাবি, সরকার যে পরিমাণে চাল-গম কিনতে চলেছে, তাতে আগামী বছরের ১ এপ্রিলে খাদ্য সুরক্ষা যোজনা ও অন্যান্য প্রকল্পে বিলি করেও সরকারি গুদামে যথেষ্ট খাদ্যশস্য থাকবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement