ফাইল চিত্র।
রাজ্যের জনজাতি ভোটের কথা মাথায় রেখে এবং এখনও-অনুগতদের সঙ্গে রাখতে বিরোধী এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিলেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। যার ফলে লড়াইয়ে আরও এক প্রস্ত পিছিয়ে পড়লেন বিরোধী শিবিরের প্রার্থী যশবন্ত সিন্হা।
আগামী ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। দল কার পক্ষে ভোট দেবে, তা ঠিক করতে আজ সকাল থেকে দফায় দফায় বৈঠকে বসেন শিবসেনার সাংসদেরা। সূত্রের মতে, অধিকাংশ শিবসেনা সাংসদের বক্তব্য, জনজাতি সমাজের তরফে এই প্রথম কোনও ব্যক্তি, তায় মহিলা নির্বাচনে লড়ছেন। দ্রৌপদীর বিরোধিতা করা হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে আগামী লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে। তাই দ্রৌপদীকে সমর্থনের প্রশ্নে সরব হন শিবসেনা সাংসদেরা। দ্রৌপদীকে যে সমর্থন করা হতে পারে, সেই ইঙ্গিত সকালেই দিয়ে রেখেছিলেন শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত। সাংসদ বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রশ্নে শিবসেনা বরাবরই যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে এসেছে। ২০০৭ সালে প্রতিভা পাটিল, ২০১২ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায় বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হলেও, জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে যোগ্য ব্যক্তিকেই দল বরাবর সমর্থন করে এসেছে। এ বারও যোগ্য ব্যক্তিকেই দল সমর্থন করবে।’’ পরে আজ সন্ধ্যায় শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে জানিয়ে দেন, দ্রৌপদী মুর্মুকেই সমর্থনের সিদ্ধান্ত শিবসেনার। কংগ্রেস নেতা বালাসাহেব থোরাট বলেন, জোটের শরিক হলেও শিবসেনা তাদের এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।
জনজাতি সমাজের কোনও মহিলাকে এই প্রথম রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করার সিদ্ধান্তকে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন রাজনীতির অনেকেই। কারণ, তাঁর নাম ঘোষণা হতেই ভূমিকন্যাকে সমর্থনে এগিয়ে আসে ওড়িশার শাসক দল বিজেডি। পরবর্তী সময়ে সমর্থনের আশ্বাস দেয় অন্ধ্রপ্রদেশের শাসক দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস। তথাকথিত নিরপেক্ষ ওই দল সমর্থনের ঘোষণা করতেই কার্যত জয় নিশ্চিত হয়ে যায় দ্রৌপদীর। দ্রৌপদী মুর্মু সাঁওতাল সমাজের প্রতিনিধি হওয়ায় তাঁকে সমর্থনে এগিয়ে আসতে বাধ্য হয় ঝাড়খণ্ডের শাসক দল জেএমএম। জেএমম প্রধান শিবু সোরেন নিজেও সাঁওতাল সমাজের। তা ছাড়া, দ্রৌপদী ওড়িশার যে ময়ূরভঞ্জ এলাকার, সেই এলাকার মেয়েকেই ঘরণী করেছেন ঝাড়খণ্ডের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। ফলে জনজাতি প্রধান ঝাড়খণ্ডের শাসক দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে সরকার গড়লেও, এ যাত্রায় বিজেপি প্রার্থী দ্রৌপদীকে সমর্থন করা ছাড়া উপায় ছিল না হেমন্তদের।
পরিস্থিতি যা তাতে দ্রৌপদীর জয় নিশ্চিত। প্রশ্ন হল, তিনি কত ভোটে জিততে চলেছেন। দক্ষিণের টিএসআর ছাড়া এই মুহূর্তে যশবন্তের সমর্থনে সেই অর্থে কোনও দলই সে ভাবে সরব নয়। এমনকি, যে তৃণমূল কংগ্রেস প্রথমে যশবন্তের নাম সমর্থন করেছিল, তাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, এনডিএ যদি দ্রৌপদীর নাম আলোচনা করে ঘোষণা করত, সে ক্ষেত্রে বিরোধীরা প্রার্থী দেওয়ার আগে ভাবনাচিন্তার সুযোগ পেতেন। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ দলই রাষ্ট্রপতি ভোটে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেও, ব্যতিক্রম আম আদমি পার্টি। সূত্রের মতে, আগামী এক-দু’দিনের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল।