President Election 2022

Draupadi Murmu: রাজস্থানে দ্রৌপদী মুর্মুর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঠাঁই হল না বিজেপির জনজাতি সমর্থকদেরই

রাজ্যওয়াড়ি সফরে আজ রাজস্থানের জয়পুর গিয়েছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু।  স্থানীয় একটি হোটেলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছিল তাঁর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২২ ০৬:১১
Share:

রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। ছবি পিটিআই।

জনজাতি রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি পেলেন না বিজেপির জনজাতি সমাজের সমর্থকেরাই। ঘটনাস্থল রাজস্থানের জয়পুর।

Advertisement

অভিযোগ, জনজাতি সমাজের বিজেপি সমর্থকেরা মুর্মুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাঁদের আটকে দেন দলেরই উচ্চবর্ণের সমর্থকেরা। ঘটনাচক্রে ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস নেতা অজয় কুমার আজ সকালেই বলেছিলেন, ‘‘জনজাতি সমাজের কোনও মানুষকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরে শাসক শিবির জনজাতি সমাজের উত্থানের যে বার্তা দিতে চাইছে তা একটি অসৎ ভাবনা ছাড়া কিছু নয়।’’ জয়পুরের ঘটনার পরে ওই মন্তব্য যে কতটা সত্য তা বিজেপির তথাকথিত দলীয় কর্মীরাই স্পষ্ট করে দিলেন বলে দাবিকরছে কংগ্রেস।

রাজ্যওয়াড়ি সফরে আজ রাজস্থানের জয়পুর গিয়েছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। স্থানীয় একটি হোটেলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছিল তাঁর। সেখানে বিজেপির অন্য নেতাদের সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্যসভা সাংসদ কিরোড়ি লাল মীনা। মীনার সঙ্গে ডুঙ্গরপুর ও বাঁসওয়াড়া থেকে আসা জনজাতি সমাজের একাধিক ব্যক্তি সেখানে দ্রৌপদীকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু মীনার অভিযোগ, তিনিপ্রবেশ করতে পারলেও তাঁরসঙ্গে আসা জনজাতি সমর্থকদের অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এর জন্য মীনা আঙুল তোলেন রাজস্থান বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক রাজেন্দ্র রাঠৌর ও তাঁর অনুগামীদের দিকেই। তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন মীনা ও রাঠৌর। দু’জনকে রীতিমতো উঁচু গলায় ঝগড়া করতে দেখা যায়।

Advertisement

মীনার অভিযোগ, রাঠৌরের অনুগামীদের কারণে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা জনজাতি সমাজের মানুষেরা দ্রৌপদী মুর্মুকে অভ্যর্থনা জানাতে পারেননি। সূত্রের মতে, রাঠৌর দাবি করেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। দুই নেতার ঝামেলার ওই ভিডিয়ো নিমেষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বিজেপির পক্ষ থেকে এ বারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যোধপুরের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতকে। তাঁর নিজের রাজ্যেই দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে প্রকাশ্যে ঝামেলা হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়ে যান শেখাওয়াত। পরে মীনাকে জড়িয়ে ধরে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

বিজেপি নেতাদের ঝগড়ার ভিডিয়ো সামনে আসতেই সরব হয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের বক্তব্য, ঠিক এই বার্তাটিই আজ সকালে দিতে চেয়েছিলেন অজয় কুমার। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে অজয় বলেছিলেন, ‘‘প্রার্থী হিসাবে যশবন্ত সিন্‌হা যোগ্য ব্যক্তি। দ্রৌপদী মুর্মুও ভাল মানুষ। কিন্তু অসৎ ভাবনার প্রতিফলন হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে দ্রৌপদীকে। তাঁকে কখনওই জনজাতি সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে তুলে ধরা ঠিক নয়।’’

দ্রৌপদী মুর্মুকে ‘অসৎ ভাবনার প্রতীক’ বলায় দ্রুত পাল্টা আক্রমণে নামে বিজেপি নেতৃত্ব। দলের আইটি শাখার প্রধান অমিত মালবীয় টুইট করে বলেন, ‘‘দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে জনজাতি সমাজের ক্ষমতায়নে সাহায্য করবে। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁকে অশুভ শক্তির মুখ হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে, কারণ তিনি জনজাতি সমাজের মহিলা।’’

অজয় কুমারের তরফে ব্যাখ্যা, এক জন জনজাতি সমাজের মহিলা রাষ্ট্রপতি হওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তার মানে ওই সমাজের ক্ষমতায়ন নয়। তাঁর কথায়, ‘‘গত কয়েক বছরে দেশে তফসিলি জাতি ও জনজাতি সমাজের অবস্থা উন্নতির চেয়ে অবনতিইহয়েছে। রামনাথ কোবিন্দ রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন হাথরসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। উনি কোনও মন্তব্য করেছিলেন কি? তফসিলি মানুষজন চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।’’

কংগ্রেসের আর এক নেতারমতে, যদি ক্ষমতায়ন সত্যিই হত, তা হলে বিকেলে জয়পুরে ওই ঘটনা ঘটত না। দ্রৌপদীকে অভ্যর্থনার প্রশ্নে জনজাতি সমর্থকেরাও সমমর্যাদা পেতেন।

জনজাতি সমাজের একজন মহিলাকে রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থী করা মানেই জনজাতি সমাজের উন্নয়ন, এমন একটি বার্তা ইতিমধ্যেই প্রচার করছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আগামী দিনে জনজাতি ভোট ঝুলিতে টানার লক্ষ্যে ওই প্রচারের পালে হাওয়া আরও তীব্র করবে বিজেপি। কংগ্রেসে নেতৃত্বের মতে, সেই উদ্যোগে দ্রৌপদী মুর্মুকে ব্যবহার করাটাই ‘অসৎ ভাবনার প্রতীক’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন দলীয় নেতা। প্রবীণ কংগ্রেসনেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘সরকার যদি জনজাতিদের উন্নয়নে চিন্তিত হত, তা হলে বেসরকারি শিল্পপতিদেরস্বার্থে জনজাতিদের অধিকার কেড়ে নিত না।’’

গত সপ্তাহে শিল্প ও বাণিজ্য গোষ্ঠীর স্বার্থে বন কেটে ফেলার নতুন আইন এনেছে সরকার। এত দিনজঙ্গল কেটে ফেলার আগে সেইজঙ্গলে থাকা জনজাতি গোষ্ঠীরঅনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু নতুন আইনে জনজাতিদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার কোনও প্রয়োজন পড়বে না। একতরফা জঙ্গল সাফ করা যাবে ব্যবসায়িক স্বার্থে। ওই আইনবাতিলের দাবিতে জাতীয় জনজাতি কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে কংগ্রেস। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রার্থী করে যদি জনজাতি সমাজের সত্যিকারের উন্নয়নের কথা ভেবে থাকে বিজেপি সরকার, তা হলে সবার আগে ওই আইন বাতিল হোক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement