ফাইল চিত্র।
রাত পোহালেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল। এনডিএ-র দ্রৌপদী মুর্মু ও বিরোধী শিবিরের যশবন্ত সিন্হার মধ্যে লড়াইয়ের ফল কী হতে চলেছে, তা অনেকাংশেই স্পষ্ট। খুব বড় কোনও অঘটন না ঘটলে আগামিকাল অনায়াসে জিততে চলেছেন দ্রৌপদী। আর তা হলে, তিনি হবেন স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি জনজাতি সমাজের প্রতিনিধি। সম্ভবত ফল প্রত্যাশিত জেনেই আজ থেকেই দ্রৌপদীর দিল্লির অস্থায়ী বাসভবন ৪, উমাশঙ্কর দীক্ষিত মার্গের বাংলোয় সাজ-সাজ রব।
দিল্লির নতুন বঙ্গ ভবনের ঠিক পাশে ওই বাংলোই হয়ে উঠেছিল রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থী হওয়ার পর থেকে দ্রৌপদীর ঠিকানা। ফলাফলের আগের দিনই বাড়ির দরজায় দিল্লি পুলিশের কড়া পাহারা। বর্তমানে জ়েড ক্যাটেগরির সুরক্ষা পাওয়া দ্রৌপদীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে জ্যামার লাগানো গাড়ি। বসেছে মেটাল ডিটেক্টর, মালপত্র স্ক্যান করার মেশিনযুক্ত গাড়ি। অপরিচিত কারও প্রবেশাধিকারের প্রশ্ন নেই। ভিতরে খোলা লনের একপাশ জুড়ে টাঙানো হয়েছে শামিয়ানা। পাতা হচ্ছে চেয়ার। টিভি স্ক্রিন, সাউন্ড সিস্টেম। সূত্রের মতে, আগামিকাল বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বিশেষ করে জনজাতি সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ওখানেই দেখা করবেন দ্রৌপদী। তার পর ওই বাড়ি থেকেই রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।
জনজাতি সমাজের প্রথম রাষ্ট্রপতিকে উদ্বোধন জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্বও। সূত্রের মতে, দলে যে সব আদিবাসী সাংসদ রয়েছেন, তাঁদের পক্ষ থেকে বিশেষ ভাবে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। দ্রৌপদীকে সামনে রেখে আসন্ন ভোটে প্রায় দশ কোটি জনজাতি মানুষের সমর্থন জেতার কোনও সুযোগ ছাড়তে রাজি নয় দল। সূত্রের মতে, নতুন রাষ্ট্রপতির শপথের দিনে বিশিষ্টদের আমন্ত্রণ জানানোর যে রীতি রয়েছে, তাতে এ বার জনজাতি সমাজের প্রতিনিধিদের ঢালাও আমন্ত্রণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বিভিন্ন রাজ্য থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যালট বাক্সগুলি গত কালই পৌঁছে গিয়েছিল সংসদ ভবনে। সূত্রের মতে, সংসদের যে ৬৩ নম্বর ঘরে ভোটগ্রহণ হয়েছিল, সেখানেই সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে যাবে ভোটগণনা। বিরোধী শিবিরের প্রার্থী যশবন্তের তিন জন কাউন্টিং এজেন্টের মধ্যে এক জন হলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের মতোই আরও অন্য দলের অনেক সাংসদ নিজেদের রাজ্যে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। তাই সবার আগে দেশের সব সাংসদ ও বিধায়কদের ভোট আলাদা করা হবে। তার পর ২৫টি করে বান্ডিল করে ভোট গণনা করা হবে। চূড়ান্ত ফল আসতে বিকেল হয়ে যাবে।’’
শুরু হয়ে গিয়েছে বিদায়ের প্রস্তুতিও। রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসরের পরে দিল্লিতেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রামনাথ কোবিন্দ। লুটিয়েন দিল্লিতে ১০, জনপথের বাসিন্দা সনিয়া গান্ধীর প্রতিবেশী হতে চলেছেন কোবিন্দ। তিনি ১২ নম্বর জনপথের যে বাংলোয় যাচ্ছেন, তা ছিল এক সময়ে বিহারের দলিত নেতা রামবিলাস পাসোয়ানের। প্রায় তিন দশকের কাছাকাছি, সাংসদ জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ওই বাংলোয় ছিলেন রামবিলাস। বাংলো সাজিয়েছিলেন মনের মতো করে। এখন ওই বাংলো কোবিন্দের নামে বরাদ্দ হওয়ায় ফের পাল্টাচ্ছে ভিতরের নকশা। আজ দিনভর হাট করে খোলা ছিল বাংলোর দরজা। মাঝেমধ্যেই ঢুকতে দেখা গিয়েছে মালপত্র বোঝাই ট্রাক। রক্ষীরা জানালেন, জিনিসপত্র আসতে শুরু করেছে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে। আজ এসেছে বই।