ভোট ঘিরে উদ্বেগে শাসক বড়ো নেতারা

বড়ো চুক্তি রূপায়ণের পর থেকে এমন কঠিন সময়ের মুখোমুখি সম্ভবত কখনও পড়েননি বড়ো পিপল্‌স ফ্রন্টের নেতারা। জঙ্গি নেতা থেকে রাতারাতি রাজনৈতিক নেতা হওয়ার পর বড়োভূমিতে বরাবর এই বিপিএফেরই মৌরসিপাট্টা চলেছে। কিন্তু এ বার, এক দিকে কংগ্রেসের সঙ্গে বিপিএফের জোট ভেঙেছে, অন্য দিকে বড়োভূমিতে বিজেপির উত্থানে বিপিএফ প্রধান হাগ্রামা মহিলারির সিংহাসন টলমল।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৫
Share:

বড়ো চুক্তি রূপায়ণের পর থেকে এমন কঠিন সময়ের মুখোমুখি সম্ভবত কখনও পড়েননি বড়ো পিপল্‌স ফ্রন্টের নেতারা। জঙ্গি নেতা থেকে রাতারাতি রাজনৈতিক নেতা হওয়ার পর বড়োভূমিতে বরাবর এই বিপিএফেরই মৌরসিপাট্টা চলেছে। কিন্তু এ বার, এক দিকে কংগ্রেসের সঙ্গে বিপিএফের জোট ভেঙেছে, অন্য দিকে বড়োভূমিতে বিজেপির উত্থানে বিপিএফ প্রধান হাগ্রামা মহিলারির সিংহাসন টলমল। পাশাপাশি, তাঁদের মাথাব্যাথার আরও বড় কারণ অন্য বড়ো ও অ-বড়ো সংগঠনগুলির দু’টি যৌথ মঞ্চ।

Advertisement

২০০৩ সালে তৈরি হওয়া স্বশাসিত পরিষদের ৪০টি আসনের নির্বাচনে এই প্রথম লড়তে নামছেন তিন শতাধিক প্রার্থী। আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড়ো টেরিটোরিয়াল ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের এই নির্বাচন সব দলের কাছেই চূড়ান্ত মহড়া। পরিষদে মোট সদস্য সংখ্যা ৪৬ হলেও, ৬ জন সদস্য রাজ্যপাল মনোনীত। তাই ব্যালটের লড়াই হয় ৪০টি আসনে। এর মধ্যে ৩৫টি আসন উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত।

২০০৩ সালে বড়ো চুক্তির মাধ্যমে বড়োল্যান্ড টাইগার্স বা বিএলটির রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষ হয়। ডিসেম্বরে তৈরি হয় স্বশাসিত পরিষদ। ২০০৫ ও ২০১০ সালে, যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতে আসে বিপিএফ। গত বারের নির্বাচনে যেখানে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১৯২ জন, সেখানে এ বার সংখ্যাটি ৩১৫। এই প্রথমবার বিজেপি, এআইইউডিএফ, সিপিএম ও সিপিআই স্বশাসিত পরিষদের নির্বাচনে লড়তে নেমেছে। বিপিএফ, বিজেপি ও কংগ্রেস ৪০টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। অগপ ৬টি, এআইইউডিএফ ৮টি, সিপিএম ৭টি ও সিপিআই ১টি আসনে লড়ছে। অন্যান্য বড়ো সংগঠনগুলির মিলিত মঞ্চ ‘পিপল্‌স কোঅর্ডিনেশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রাইট্স’ (পিসিডিআর) ৩৮টি এবং অবড়োদের মঞ্চ ‘সম্মিলীত জনগোষ্ঠী ঐক্যমঞ্চ’ ৩৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

Advertisement

বড়ো চুক্তির পরে ১২ বছর কেটে গেলেও বড়োভূমির উন্নয়ন না হওয়া, টাকা নয়ছয়, নাশকতা বন্ধ না হওয়া, একের পর এক গোষ্ঠী সংঘর্ষ, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, দিল্লির সঙ্গে শান্তি আলোচনা বাস্তবায়িত না হওয়া, পৃথক বড়োল্যান্ড গড়তে না পারা-সহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে বিপিএফের বিরুদ্ধে। ২০০৫ সালে ৩৭টি ও গত নির্বাচনে ৩২টি আসন পাওয়া দল বিপিএফ লোকসভা নির্বাচনে কোনও আসনই পায়নি। বরং অ-বড়োদের প্রতিনিধি হয়ে বড়োভূমি থেকে জিতে সাংসদ হন প্রাক্তন আলফা কম্যান্ডার হীরা শরণিয়া। বিপিএফ উপ-প্রধান খাম্পার মতে, “টানা ক্ষমতায় থাকার কুফল তো থাকেই। তার প্রভাব পড়তে পারে। তবে গত দু’দফার শাসনে বিপিএফ বড়োভূমিতে সড়ক ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করেছে। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ গড়ার চেষ্টাও চলছে।’’ খাম্পা মুখে আশা প্রকাশ করেছেন, ‘‘এ বারও আমরা ক্ষমতা ধরে রাখব।” আর হাগ্রামা মহিলারির মতে, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে পরিষদ নির্বাচনের তুলনা চলে না। নানা কারণ থাকা সত্ত্বেও এ বারেও আমরা অন্তত ৩০টি আসন পাব।’’

তবে নির্বাচনের ঠিক আগে পরিষদের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের কার্যনির্বাহী সদস্য তথা যুব বিপিএফের সভাপতি মনোকুমার ব্রহ্ম, মালতীরানি নার্জারি, রঞ্জিত্‌ খেরকাটারির মতো বিপিএফ নেতা-নেত্রী দল ছেড়েছেন। দলের অন্যতম সম্পাদক নীরেনচন্দ্র রায় ও যুবনেতা রাজকুমার ব্রহ্মও দল ছেড়ে দিয়েছেন। কয়েকজন যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। কয়েকজন বড়ো যৌথ মঞ্চে। এই যৌথ মঞ্চের হয়ে প্রচারে নেমেছে খোদ বড়ো ছাত্র সংগঠন আবসু।

বড়োভূমির রাজনীতি সম্পর্কে অবহিত মহলের মতে, এ বারের পরিষদ নির্বাচনে বড় ভূমিকা নিতে চলেছে অ-বড়ো ভোট। উল্লেখ্য, বিধানসভায় দেওয়া রাজ॥ সরকারের হিসেব অনুযায়ী, স্বশাসিত পরিষদের অন্তর্ভুক্ত চারটি জেলায় বড়ো জনসংখ্যা গড়ে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ। এই হিসেব অনুযায়ী কোকরাঝাড়ে বড়োরা মোট জনসংখ্যার ২৫.৩ শতাংশ। চিরাং জেলায় ৩৪.৮৪ শতাংশ, বাক্সায় ৩০.২ শতাংশ এবং উদালগুড়িতে ২৬.২ শতাংশ।

কংগ্রেস তাদের ইস্তাহারে ভরসা দিয়েছে, ভোটে জিতলে পরিষদে সব গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বে ভারসাম্য রাখা হবে, বড়ো চুক্তির পর্যালোচনা করে পরিষদে আসন বাড়ানো হবে, বড়োভূমির সীমা নতুন করে নির্ধারণ করা হবে। তরুণ গগৈ বাক্সা ও চিরাং-এর নির্বাচনী জনসভায় বড়োভূমির জন্য পাঁচশো কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর দাবি, নির্বাচনে তাঁরা কমপক্ষে ২০টি আসন পেতে চলেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্তর কথায়, “কংগ্রেস এতদিন ভেবেছিল বড়ো নেতৃত্বের হাতেই বড়োভূমির উন্নয়ন হবে। কিন্তু বিপিএফ কার্যত সকলের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।” একই ভাবে অ-বড়োদের মন পেতে আসরে নেমেছে বিজেপি ও সম্মিলীত জনগোষ্ঠীর ঐক্যমঞ্চ। বিজেপির হয়ে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু ও সর্বানন্দ সোনোয়াল বড়োভূমিতে লাগাতার প্রচার চালিয়েছেন।

নির্বাচন ৮ এপ্রিল। নির্বাচন কেন্দ্রীক হিংসায় বড়োভূমিতে প্রতিবারই বহু মানুষের মৃত্যু হয়। এ বারও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। বড়োভূমিতে এক দিকে সশস্ত্র সংবিজিত্‌ বাহিনী, সংঘর্ষবিরতিতে থাকা সশস্ত্র এনডিএফবি রয়েছে। অন্য দিকে জেহাদি কার্যকলাপেরও প্রভূত প্রমাণ মিলেছে এখানে। তাই বড় সংঘর্ষ এড়াতে বৈঠকে বসেছিল মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন ইউনিফায়েড কম্যান্ড। সন্ধ্যা সাতটার পরে নির্বাচনী প্রচার বন্ধ রাখা, মদ জমানো বা বাইকের পিছনে যাত্রা করায় নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement