ফলের ভিতর বাজি পুড়ে খাইয়ে দেওয়া হয়েছিল গর্ভবতী হাতিটিকে। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।
মজার আড়ালে চরম নিষ্ঠুরতার ছবি দেখল কেরল। এক দল অবিবেচক মানুষের খামখেয়ালের মাসুল দিতে হল নিরীহ গর্ভবতী একটি হাতিকে। কিছু দিন আগে, সেখানে ফলের ভিতর বাজি পুড়ে খাইয়ে দেওয়া হয়েছিল হাতিটিকে। মুখের ভিতর সেই বাজি ফাটার পর কষ্ট পেতে পেতে অবশেষে মৃত্যু হয়েছে ওই হাতিটির। বনবিভাগের এক অফিসার হাতিটির ছবি সহ গোটা ঘটনার কথা শেয়ার করেছেন ফেসবুকে। তার পরই এই নৃশংস ঘটনা সামনে এসেছে।
গত সপ্তাহে ঘটনাটি ঘটেছে কেরলের মল্লপ্পুরমে। জানা গিয়েছে, খাবারের খোঁজে হাতিটি জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে চলে এসেছিল। সেখানে রাস্তায় ঘুরে খাবারের খোঁজ করছিল সে। কিন্তু সে সময় স্থানীয় বাসিন্দারা আনারস খেতে দেয় তাকে। সেই আনারসের মধ্যে ভর্তি ছিল পটকা-বাজি। বাজি ভর্তি আনারস খেতেই মুখের ভিতর ফেটে যায় বাজি। যার জেরে হাতিটির মুখ, পেট ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই যন্ত্রণা নিয়েই ভেলিয়ার নদীর ধারে পৌঁছয় সে। যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে নদীর জলেই শুঁড় ডুবিয়ে দাঁড়িয়েছিল। ক্ষতের জেরে সে খেতেও পারছিল না।
সম্প্রতি করা ফেসবুক পোস্টে বনবিভাগের অফিসার মোহন কৃষ্ণণ মালয়লাম ভাষায় লিখেছেন, ‘‘সে মানুষকে বিশ্বাস করেছিল। আনারস খেতেই যখন বিস্ফোরণ হয়, তখনও নিজের কথা ভাবেনি সে। জন্ম দিতে চলা সন্তানের কথা ভেবেছিল। যন্ত্রণায় ছটফট করলেও এক জন মানুষেরও ক্ষতি করেনি হাতিটি। এটা বাড়ি ঘরও ভাঙেনি।’’
ওই অফিসাররা জানিয়েছেন, বনবিভাগের কর্মীদের নিয়ে তিনি যখন ভেলিয়ার নদীর ধারে পৌঁছন তখন দেখেন, শুঁড় ডুবিয়ে দলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে সে। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘‘অন্য হাতিদের নিয়ে এসে আমরা তাকে জল থেকে তুলে আনারও চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুতেই জল থেকে তুলে আনা যায়নি তাকে। সে যে আর বাঁচবে না, এ কথা বোধহয় বুঝে গিয়েছিল। ২৭ মে বিকাল চারটে নাগাদ জলেই মৃত্যু হয় তার।’’
এর পর লরিতে করে তার দেহ জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে ময়নাতদন্ত করা হয় হাতিটির। তখনই জানা যায় সে গর্ভবতী ছিল। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেহ সৎকারও করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই অফিসার।
আরও পড়ুন: মাত্র ১৫ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ থেকে লাফিয়ে ২ লাখ ছাড়াল
আরও পড়ুন: দু’ঘণ্টার মধ্যে ১২০ কিমি বেগে মুম্বইয়ে আছড়ে পড়বে ‘নিসর্গ’
এই ঘটনার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। এই নিষ্ঠুর কাজে সমালোচনা করে নেটাগরিকরদের একাংশ ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। কেউ বলেছেন, ‘‘মানুষকে বিশ্বাস করেছিল হাতিটি। এটাই ছিল তাঁর ভুল।’’ অপর এক জন বলেছেন, ‘‘এর ফল মানুষকে ভুগতে হবে। প্রকৃতি ঠিক এই পাপের প্রতিশোধ নেবে।’’