প্রশান্ত কিশোর। —ফাইল চিত্র।
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে যদি গেরুয়া ঝড় ওঠে, তার পরেও আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারানো অসম্ভব, এমনটা নয়। কিন্তু বর্তমানে যে সব বিরোধী দল এবং রাজনৈতিক জোট রয়েছে, তাদের দ্বারা সেই কাজ সম্ভব না-ও হতে পারে বলে মন্তব্য করলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (পিকে)। তাঁর মতে, বিজেপিকে হারাতে বিরোধী দলগুলির সম্মিলিত সামাজিক ভিত আরও প্রসারিত করা প্রয়োজন।
মঙ্গলবার একটি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিকে-র এই মন্তব্যে রাজনীতির জগতে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, গত কয়েক মাসে পিকে-র ধারাবাহিক বিবৃতি এবং পদক্ষেপগুলি নিয়েও। কয়েক মাস আগেই পি কে বলেছিলেন, মোদী থাকুন বা না থাকুন, বিজেপি ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে যাবে। তখনও তাঁর মন্তব্যকে ঘিরে যথেষ্ট বিতর্ক এবং ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। মঙ্গলবার পিকে বলেন, “২০২৪-এ বিজেপিকে কি হারানো সম্ভব? আমি এর উত্তরে জোর দিয়ে বলতে চাই, অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু বর্তমানের নেতা, দল এবং তাদের যা জোট রয়েছে, তারা কি পারবে বিজেপি-কে হটাতে? সম্ভবত না।”
তত্ত্বগত ভাবে আসন্ন বিধানসভা ভোটগুলিতে বিজেপি জিতলেও, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব বলেই মনে করেন পিকে। উদাহরণ হিসাবে ২০১২ সালে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোটের কথা তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, “২০১২ সালে উত্তরপ্রদেশের ভোটে জেতে এসপি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ২০১৪-র লোকসভা জিতে নেয় বিজেপি।” পিকে-র মতে, বিজেপিকে হারানোর জন্য যিনি বা যাঁরাই চেষ্টা করুন না কেন, তাঁর বা তাঁদের পাঁচ থেকে দশ বছরের কাজ ও চিন্তাভাবনা থাকতে হবে। পিকে-র হিসাব, অ-বিজেপি দল শাসিত রাজ্যগুলির মোট লোকসভা আসন সংখ্যা বর্তমানে ২০০টি। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকাকালীনও বিজেপি এই ২০০টির মধ্যে ৫০টির বেশি আসন জেতেনি। তাঁর বক্তব্য, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস কিংবা অন্য কোনও দল বা অক্ষ যদি নিজেদের কৌশল, সম্পদ নতুন করে গুছিয়ে নিয়ে মাঠে নামে এবং ওই ২০০টি আসনের মধ্যে ১০০টির মতো বার করে আনতে পারে, তা হলে বিরোধী শক্তির পক্ষে আড়াইশোতে পৌঁছনো সম্ভব। তবে তাঁর মতে, সমস্ত বিরোধী শক্তির সম্মিলিত যে সামাজিক ভিত্তি এই মুহূর্তে রয়েছে, তা অনেকটাই বাড়াতে হবে। সে যাদব বা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির হোক কিংবা দলিত বা উচ্চ বর্ণের ভিত।
অনেকের মতে, পিকে-র এই হিসাব এবং ভোট ধারণা গত কয়েক মাসে কয়েক বার বদলাতে দেখা গিয়েছে। তাঁরই পরামর্শে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গোয়ায় গিয়ে বিজেপির সঙ্গে একই ভাবে সরাসরি কংগ্রসকে আক্রমণ করতে শুরু করেছিলেন। রাজনীতির বিশ্লেষকেরা মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে বিপুল ভাবে হারানোর পর বিভিন্ন রাজ্যে দলের সম্প্রসারণের তত্ত্বও পি কে-রই তৈরি করা। কবে কংগ্রেস কোনও রাজ্যে তাদের পুরনো শক্তি ফিরে পাবে, তার অপেক্ষায় না থেকে তৃণমূল তার সংগঠন বাড়ানোর কাজ শুরু করে দিক— পি কে এমন পরামর্শই দিয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর।
রাজনৈতিক সূত্র বলছে, পিকে নিজে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জন্য তাদের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। পিকে এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা সেই আলোচনার কথা স্বীকার করেছেন সম্প্রতি। সূত্রের মতে, নিজের ভোট-পেশাদারদের নিয়ে কংগ্রেসে ঢুকে নির্বাচনের দায়িত্ব সামলাতে চেয়েছিলেন পিকে। কংগ্রেস হাইকমান্ড যা মেনে নেয়নি। পরবর্তী কৌশল হিসেবে পিকে-র বর্তমান সূত্রটি হল: বিরোধীদের সম্মিলিত চওড়া সামাজিক ভিতই হতে পারে বিজেপিকে হারনোর অস্ত্র। সম্ভবত তাই, গোয়ায় আক্রমণের পরেও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব, কংগ্রেসকেই বার্তা দিচ্ছেন জোট গড়ে লড়ার জন্য।