বিদায়। দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা শেষে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেষ বার সংসদে ভাষণের আগে। ছবি: পিটিআই।
সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ইতি। সংসদ বিদায় জানাল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। আর সেন্ট্রাল হলে দাঁড়িয়ে মিনিট কুড়ির বিদায়ী ভাষণে প্রণব বাবু বললেন, ‘‘আমি এই সংসদেরই সৃষ্টি।’’ ৮১ বছরের প্রবীণ রাজনীতিক রবিবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে শেষ বারের মতো সংসদে পা রাখলেন। উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার এ দিন তাঁকে স্বাগত জানান। লম্বা রাজনৈতিক যাত্রার শেষ প্রান্তে পৌঁছে স্বাভাবিক ভাবেই এ দিন স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েছিলেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। কিন্তু তার মাঝেও সাংসদদের মনে করিয়ে দিলেন, সংবিধান ও দেশের মানুষের প্রতি তাঁদের কর্তব্যটা ঠিক কী।
সরকার এবং বিরোধী, দু’পক্ষের জন্যই এ দিন উপদেশ ছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভাষণে। দু’পক্ষের চাপান-উতোরের জেরে সংসদে গঠনমূলক আলোচনার সময় যে ক্রমশ কমে আসছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে এ দিন উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘‘সংসদ হল বিতর্ক এবং আলোচনার জায়গা। ... সংসদে অচলাবস্থায় বিরোধীদেরই বেশি ক্ষতি হয়।’’
‘‘আমার জীবনের ৩৭টা বছর আমি কাটিয়ে দিয়েছি এক জন সাংসদ হিসেবে। যখন আমার বয়স মাত্র ৩৪ বছর, তখন আমি সুযোগ পেয়েছিলাম পোড় খাওয়া রাজনীতিকদের সঙ্গে এই দেশের সেবা করার।’’ বলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর ভূয়সী প্রশংসা শোনা গিয়েছে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির মুখে। তাঁর ব্যক্তিত্বকে ‘সুউচ্চ ব্যক্তিত্ব’ বলে প্রণব বাবু উল্লেখ করেছেন এ দিন। ইন্দিরা অভিভাবকত্ব ছিল বলেই তিনি এত দূর এগোতে পেরেছেন বলে প্রণব মুখোপাধ্যায় এ দিন জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:আজ রাষ্ট্রপতি প্রণবকে বিদায় সংবর্ধনা সাংসদদের
তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ইন্দিরা থেকে বাজপেয়ী, রাও থেকে সনিয়া, এমনকী আডবাণীর অবদানও এ দিন স্বীকার করলেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। ছবি: পিটিআই।
ইন্দিরা গাঁধী ছাড়া আর যাঁদের দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছেন, তাঁরা হলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং পি ভি নরসিমহা রাও। প্রণব বাবু এ দিন নিজেই জানিয়েছেন সে কথা। তিনি আরও বলেন, ‘‘কখনও কখনও আমি আডবাণীজির পরামর্শও মেনে চলেছি এবং সনিয়াজির কাছ থেকে নিঃশর্ত সমর্থন পেয়েছি।’’
মোদী জমানায় যে ভাবে জিএসটি বিল পাশ হয়েছে, এ দিন তারও প্রশংসা শোনা গিয়েছে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মুখে। তবে মোদীর সরকার মাঝেমধ্যেই যে ভাবে অর্ডিন্যান্স জারি করতে অভ্যস্ত, তা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন হামিদ আনসারি এবং লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন এ দিন নিজেদের ভাষণে বিদায়ী রাষ্ট্রপতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। রাজনীতিক এবং সাংসদ হিসেবে প্রণব বাবুর অবদানের কথা তাঁরা সাংসদদের মনে করিয়ে দিয়েছেন।