বিবাদ দলের রণকৌশল নিয়ে। কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার পথে আদৌ এগোনো যাবে কি না, এই প্রশ্নেই সরগরম হওয়ার কথা পার্টি কংগ্রেসের। কিন্তু সিপিএমে এই চর্চার আড়ালেই নিঃশব্দে তৈরি হচ্ছে হায়দরাবাদের জন্য নাটকীয় নীল নকশা!
সিপিএমে পার্টি কংগ্রেসের মহলা শুরু হয়ে যায় আগে থেকেই। সেই রেওয়াজ মেনে সীতারাম ইয়েচুরিকে পদ থেকে সরাতে আস্তিন থেকে নতুন তাস বার করছেন প্রকাশ কারাট! দলের অন্দরে সলতে পাকানো হচ্ছে, ইয়েচুরির জায়গায় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক পদে মানিক সরকারকে নিয়ে আসার! তাতে সাপ মারবে, লাঠিও অটুট থাকবে!
কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার তত্ত্বে এগোতে গিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সমর্থন পাননি ইয়েচুরি। তাঁর মত দলে বারবার খারিজ হলে সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে আর লাভ কী, এই প্রশ্ন তুলে সরে দাঁড়াতেও চেয়েছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁকে নিরস্ত করা হয়েছিল পার্টি কংগ্রেস আসন্ন বলে। কিন্তু ইয়েচুরির ওই যুক্তিকে হাতিয়ার করেই তাঁকে সরাতে সক্রিয় কারাট শিবির। এত দিন নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দৌ়ড়ে ছিল বৃন্দা কারাট এবং বি ভি রাঘবুলুর নাম। শেষ মুহূর্তে কৌশল বদলে মানিকবাবুকে ত্রিপুরা থেকে দিল্লি এনে বাজিমাত করতে চাইছে কারাট শিবির।
ইয়েচুরি যখন নানা রাজ্যের সম্মেলনে সমর্থন জোগাড়ে সচেষ্ট, বাংলার নেতারা ব্যস্ত পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে, সেই সময়েই কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যকে নিয়ে কারাট চলে গিয়েছিলেন আগরতলায় ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির বৈঠকে পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধি বাছাই দেখভাল করতে। সিপিএম সূত্রের খবর, তাঁদের রাজ্য থেকে কেউ দলের শীর্ষ পদে বসবেন, এই আশ্বাসের বিনিময়ে পার্টি কংগ্রসে ত্রিপুরার ৪৫ জন প্রতিনিধিরই সমর্থন আদায় করার চেষ্টা চালাচ্ছে কারাট শিবির। তাদের যুক্তি, বৃন্দা বা রাঘবুলুকে সম্পাদক করতে চাইলে বাংলা-সহ নানা জায়গা থেকে বিরোধিতার মাত্রা প্রবল হবে। সেখানে মানিকবাবুর ভাবমূর্তি এমনই যে, তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার লোক গোটা সিপিএমেই নেই!
এবং এখানেই বিপাকে পড়েছেন ইয়েচুরি! তাঁর পক্ষে মানিকবাবুর সরাসরি বিরোধিতা করা বিড়ম্বনার, কারণ তাতে মনে হবে তিনি নিজের পদ বাঁচাতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে নিবৃত্ত করতে চাইছেন! ইয়েচুরিপন্থী এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘‘ক্ষমতা হারানোর পরে ত্রিপুরায় দলের কর্মীরা মানিকবাবুকে সামনে রেখেই লড়াই করছেন। তিনিই বিরোধী দলনেতা। এই সময়ে তাঁকে দিল্লিতে সরিয়ে আনলে ত্রিপুরায় কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে।’’ পক্ষান্তরে কারাট শিবিরের অঙ্ক, মানিকবাবুর পক্ষে যে হেতু ত্রিপুরা এবং বিধানসভার সঙ্গে সম্পর্ক একেবারে চুকিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে না, তাই দিল্লিতে বসে দলের রাশ তাদের হাতেই থাকবে!
এখন মস্ত প্রশ্ন, মানিকবাবু কি দিল্লিবাসী হবেন? বাইরে যথারীতি মুখ খুলছেন না তিনি। আর কারাটপন্থী এক পলিটব্যুরো সদস্যের হেঁয়ালিপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘সাধারণ সম্পাদকের মেয়াদ থাকে পার্টি কংগ্রেস পর্যন্ত। হায়দরাবাদে নতুন করে সম্পাদক নির্বাচন তো হবেই!’’