প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর।—ছবি পিটিআই।
লোকসভা ভোটের আগে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে বিজেপি নেত্রী প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর বলেছিলেন ‘দেশপ্রেমিক’। বিতর্কের মধ্যে অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, দশ দিনে শাস্তি হবে। আর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘মন থেকে কোনও দিন ক্ষমা করতে পারব না।’’ চাপের মুখে ক্ষমাও চেয়েছিলেন বিজেপি নেত্রী।
সেই প্রজ্ঞাই ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছেন। গাঁধীর চোখ বন্ধ করা বিশাল মূর্তির সামনে দিয়েই রোজ সংসদে আসেন। এখনও তাঁর শাস্তি হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর মন বদল হয়েছে কি না, জানা যায়নি। এরই মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পরামর্শদাতা কমিটির সদস্যও হয়েছেন ভোপালের সাংসদ। আর আজ লোকসভার ভিতরে দাঁড়িয়েই গডসেকে আরও একবার ‘দেশপ্রেমিক’ বললেন প্রজ্ঞা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পেশ করা এসপিজি সংশোধনী বিল নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল লোকসভায়। ডিএমকে সাংসদ এ রাজা নেতিবাচক মানসিকতার নজির দিতে গিয়ে গডসের নাম নেন। শাসক শিবিরের একেবারে পিছন থেকে ফোঁস করে ওঠেন প্রজ্ঞা। বলেন, ‘‘দেশভক্তদের উদাহরণ দেবেন না।’’ সেই সময়ে প্রজ্ঞার সামনে রাখা মাইকটি অবশ্য চালু ছিল না। ফলে তাঁর বক্তব্য লোকসভায় রেকর্ড হয়নি। কিন্তু হইচই শুরু করে দেন কংগ্রেসের সাংসদরা। বিতর্কের মোড় ঘুরতে দেখে সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী প্রজ্ঞাকে থামান। স্পিকার ওম বিড়লাও বলেন, এ রাজা ছাড়া অন্য কারও কথা রেকর্ড হবে না।
কিন্তু নাছোড় প্রজ্ঞা। সংসদ ভবন থেকে বেরোতেই ছেঁকে ধরেন সাংবাদিকেরা। গাড়ির কাচ না নামিয়েই অনড় প্রজ্ঞা বলেন, ‘‘আপনারা ভাল করে শুনুন কী বলেছি। কাল জবাব দেব।’’ বলেই হুশ করে বেরিয়ে যান। কিন্তু বিরোধীরা ছাড়বে কেন? প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা টুইট করেন, ‘‘আজ সংসদে দাঁড়িয়ে বিজেপির এক সাংসদ গডসেকে দেশভক্ত বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী গাঁধীর দেড়শো-তম জন্মবার্ষিকী ধুমধাম করে পালন করেছেন। তাঁকে অনুরোধ করব, মন থেকে বলুন, গডসে সম্পর্কে আপনার ভাবনা কী? গাঁধীজি অমর রহে।’’ কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও মোদীর বক্তব্যের সুর টেনে বলেন, ‘‘দেশ এ বার বিজেপি ও আপনাকে মন থেকে ক্ষমা করতে পারবে না।’’ সংসদের রেকর্ডে না থাকলেও বিতর্ক যে দানা বেধেছে, বুঝছে সরকার। সংসদীয় মন্ত্রী জোশী সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘‘সেই সময় প্রজ্ঞা ঠাকুরের মাইক খোলা ছিল না। উধম সিংহের নাম নেওয়ার সময় উনি আপত্তি তুলেছিলেন। আমার কাছে এসে উনি ব্যক্তিগত ভাবে জানিয়েছেন যে, গডসেকে নিয়ে কিছু বলেননি।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, মালেগাঁও বিস্ফোরণে অভিযুক্তকে বিজেপি সাংসদ করে আনলে তিনি তো সন্ত্রাসের কথাই বলবেন।