দেশের বাণিজ্যনগরী জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে একাধিক মহার্ঘ বাসভবন। যেগুলি কার্যত প্রাসাদেরই নামান্তর। বিভিন্ন সময়ে মালিকানা বদলও হয়েছে বাড়িগুলির। নিলামে এই সম্পত্তিগুলির যা দাম উঠেছিল, জানলে চোখ কপালে উঠবে। এখানে থাকল সেরকমই কিছু মহার্ঘ বাসভবনের কথা।
দক্ষিণ মুম্বইয়ের অভিজাত এলাকা মালাবার হিলসে বাংলো ছিল পরমাণুবিজ্ঞানী হোমি জাহাঙ্গির ভাবা-র। তাঁর মা মেহরবাঈ এবং বাবা জাহাঙ্গীরের নামে বাসভবনের নামকরণ হয়েছিল ‘মেহরঙ্গীর’।
২০১৪ সালে ঐতিহ্যবাহী এই ভবন নিলামে ওঠে। ৩৭২ কোটি টাকা মূল্যে বাংলো কিনে নেন বিখ্যাত শিল্পপতি পরিবারের স্মিতা কৃষ্ণা গোদরেজ। দু’ বছর পরে বাংলোটি ভেঙে ফেলে সেখানে বহুতল ওঠে।
বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই বাংলোর হাতবদল হয়ে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। বিজ্ঞানীমহলের যথেষ্ট ক্ষোভের মধ্যেই ভারতীয় পরমাণুবিজ্ঞানের জনকের বাড়ি সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
মুম্বইয়ের নাপিয়ান সি রোডের আর এক প্রাসাদ ‘মহেশ্বরী হাউস’ হাতবদল হয়ে যায় ২০১২ সালে। ৪০০ কোটি টাকায় ৯২ হাজার বর্গফুটের সেই বাংলো কিনে নেন শিল্পপতি সজ্জন জিন্দল।
মালাবার হিলসেই আর এক বিলাসবহুল প্রাসাদের মতো বাসভবন অতীতে ছিল শিল্পপতি অরুণ ও শ্যাম জাতিয়া-র। সমুদ্রমুখী এই অট্টালিকা ‘জাতিয়া হাউস’-এর জন্য নিলাম হয় ২০১৫ সালে। ৪২৫ কোটি টাকায় হাতবদল হয়ে যায় ৩০ হাজার বর্গফুটের এই প্রাসাদ।
বিড়লার সঙ্গে আরও অনেক শিল্পপতি এই প্রাসাদ কেনার জন্য নিলামে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অজয় পিরামলও। কিন্তু সকলকে হারিয়ে সর্বোচ্চ দর হাঁকেন কুমারমঙ্গলম বিড়লা।
এই প্রাসাদ নিজেদের বসবাসের জন্যই কিনেছিলেন বিড়লারা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাসাদকে আরও সাজিয়ে তোলে এই ধনকুবের পরিবার।
ওরলিতে সমুদ্রমুখী আর এক প্রাসাদের নাম ‘গুলিটা’। ২০১২ সালে এই ভবন কিনে নেন শিল্পপতি অজয় পিরামল। প্রথমে শোনা গিয়েছিল ৪৫২ কোটি টাকায় ৫০ হাজার বর্গফুটের এই প্রাসাদে পিরামল গ্রুপের অফিস হবে।
পরবর্তীতে এই প্রাসাদে নতুন সংসার শুরু হয় পিরামল পরিবারের বধূ, মুকেশ অম্বানীর মেয়ে ঈশা-র। বাকিংহাম প্যালেসের পরে অম্বানী পরিবারের বাসভবন ‘অ্যান্টিলিয়া’ এই মুহূর্তে বিশ্বের দ্বিতীয় মহার্ঘ্যতম ব্যক্তিগত বাসভবন। তবে বিয়ের পরে তাঁর নতুন ঠিকানা ‘গুলিটা’-ও কম রাজকীয় নয়।
মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডিতে ভুলাভাই দেশাই রোডে লিঙ্কন হাউসের আগের নাম ছিল ‘ওয়াঙ্কানের হাউস’। ৫০ হাজার বর্গফুটের এই প্রাসাদ ১৯৩৩ সালে তৈরি করেছিলেন ব্রিটিশ স্থপতি ক্লড বেটলি।
ওয়াঙ্কানেরের মহারাজা অমরসিংহ বানেসিংহ এবং তাঁর ছেলে প্রতাপসিংহ ঝালা-র জন্য তৈরি করা হয়েছিল বলে এই প্রাসাদের নাম ‘ওয়াঙ্কানের হাউস’।
১৯৫৭ সাল থেকে দীর্ঘ দিন এই ভবন লিজ দেওয়া ছিল মার্কিন সরকারকে। এটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। সে সময় নামবদলের পরে এর নতুন পরিচয় হয় ‘লিঙ্কন হাউস’।
২০১৫ সালে এই ভবনের মালিকানার হাতবদল হয়ে যায়। ৭৫০ কোটি টাকায় বাড়িটি কিনে নেন শিল্পপতি সাইরাস পুনাওয়ালা।
পুনাওয়ালাকে বলা হয় ভারতের ‘প্রতিষেধক–সম্রাট’। বাচ্চাদের প্রতিষেধক বাজারে আনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এসেছে পুনাওয়ালার বায়োটেক সংস্থা ‘সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া’।
মুম্বইয়ের রিয়েল এস্টেটে মালিকানা হাতবদলের ক্ষেত্রে এই ‘ওয়াঙ্কানের হাউস’ বা ‘লিঙ্কন হাউস’ এখনও অবধি সর্বোচ্চ।