অযোধ্যার নির্মিয়মান রাম মন্দির। ছবি: পিটিআই।
গত চার দশক ধরে অযোধ্যায় রামলালাকে দেখতে যাওয়ার রাস্তায় পুজোর নানা সামগ্রী বিক্রি করছেন বিজয় সোনকর। অপেক্ষা করেছেন, কবে রামমন্দির তৈরি হবে! তাঁর ব্যবসাও ফুলে ফেঁপে উঠবে। ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন হতে চলেছে। হনুমানগঢ়ী মন্দির থেকে রামমন্দিরের রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে ভাঙা পড়েছে সোনকরের দোকান। ক্ষতিপূরণ মিলেছে ঠিকই। কিন্তু নতুন দোকান মেলেনি।
কেন? সোনকরের উত্তর, ‘‘ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক লক্ষ টাকা মিলেছিল। এখন উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের তৈরি নতুন দোকান লিজ নিতে পঁচিশ লক্ষ টাকা দিতে হচ্ছে। এত টাকা কোথা থেকে পাব?” সোনকর আপাতত রাস্তার ধারে টেবিলে রংবেরঙের চুড়ির দোকান সাজিয়ে বসেছেন। প্রশাসন বললে যে কোনও দিন উঠে যেতে হবে।
বারাণসীতে গঙ্গা থেকে বিশ্বনাথের মন্দির পর্যন্ত দু’দিকের পুরনো বাড়ি, প্রাচীন মন্দির ভেঙে কাশী বিশ্বনাথ করিডর তৈরি হয়েছিল। অযোধ্যায় সেই একই ধাঁচে রামমন্দির করিডর তৈরি হচ্ছে। হনুমানগঢ়ী মন্দির থেকে রামমন্দিরের দিকে যাওয়ার সরু রাস্তা আচমকাই যেন জাদু বলে হাইওয়ের মতো চওড়া হয়ে গিয়েছে। বিড়লা মন্দিরের উল্টো দিকে যে এত চওড়া রাস্তা ছিল, কে জানত! কোনও রাস্তার নাম রামপথ। কোনও রাস্তার নাম ভক্তিপথ। দুই রাস্তাতেই দু’দিকের ছোটখাটো দোকান, পুরনো বাড়ি ভেঙে সাফ। তার বদলে দু’দিকে সারি সারি দোকান। সব একই ধাঁচের। একই কমলা রঙের। একই ধাঁচে দোকানের নাম লেখা। তৈরি হচ্ছে সব রকম নাগরিক পরিষেবা। বিলাসবহুল হোটেল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থাও। এই উন্নয়নের যজ্ঞে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন সোনকররা।
২২ জানুয়ারি রামমন্দিরের উদ্বোধন ও প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগে কাল, শনিবার প্রধানমন্ত্রী অযোধ্যায় যাচ্ছেন অযোধ্যা রেল স্টেশনের নতুন ভবন ও অযোধ্যায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উদ্বোধনে। এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস শনিবার থেকে দিল্লি-অযোধ্যা বিমান পরিষেবা চালু করছে। আগামী মাসে কলকাতা-অযোধ্যার মধ্যেও বিমান পরিষেবা চালু হবে। দিল্লি-অযোধ্যার মধ্যে যাতায়াতের জন্য বন্দে ভারত ও অমৃত ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনও চালু করবেন মোদী। তার সঙ্গে অযোধ্যার একগুচ্ছ পরিকাঠামো প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসও করবেন প্রধানমন্ত্রী।
রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট ও অযোধ্যা উন্নয়ন সংস্থার কর্তারা বলছেন, অযোধ্যার উন্নয়নের সমস্ত কাজে প্রধানমন্ত্রীর দফতর নজর রাখছে। অযোধ্যা উন্নয়ন সংস্থা বা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির এক কর্তা বলেন, ‘‘এমন নয় শুধু ধার্মিক, সাধুসন্ত বা বয়স্ক মানুষরাই রামমন্দিরে আসবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, দু’জনেই চান, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে অভ্যস্ত নতুন প্রজন্মের তরুণরা, ইউটিউবার, ভ্লগাররাও রামমন্দিরে আসুন। তাঁদের ছবিতে, লেখায় রামমন্দিরের আরও প্রচার হোক। তাঁদের কথা ভেবেও অযোধ্যাকে সাজানো হচ্ছে।’’
বিজয় সোনকরের ক্ষোভ, ‘‘আমরা এই প্রতিযোগিতায় কী ভাবে লড়াই করব? সবাই গরিবি হটাওয়ের কথা বলে। অযোধ্যায় এখন ভিপিআইপি-রা রামমন্দির দর্শন করতে আসবেন। তাই গরিবদের হটে যেতে হচ্ছে।’’
মানছেন না রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, নীতিগত ভাবে রামমন্দিরে কোনও ভিআইপি দর্শন, ভিআইপি পুজোর বন্দোবস্ত থাকবে না। মন্দির দর্শনের চারটি লাইন থাকবে। দু’টি সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য। একটি দিব্যাঙ্গ ও বয়স্কদের জন্য। চতুর্থটি সরকারি খাতায়-কলমে ভিআইপি-দের জন্য। কেউ বেশি টাকা চাঁদা দিয়ে তাড়াতাড়ি দর্শন করতে পারবেন না। মন্দিরের ভোগও মিলবে বিনা মূল্যে। মন্দির পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পুজোসামগ্রী ও ফুল-মালা নিয়ে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্টের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা কোনও কর্পোরেট সংস্থার থেকেও অনুদান নিচ্ছি না। কোনও শিল্পপতি ব্যক্তিগত ভাবে দান করতে পারেন। সেখানে কোনও বাধা নেই।’’