ধোঁয়াশায় ঢাকল ভোরের রাজধানী। —ফাইল চিত্র।
গত কয়েক দিনে দিল্লির তাপমাত্রার পারদ নিম্নগামী। শৈত্যপ্রবাহে কাবু রাজধানী এবং তার সংলগ্ন এলাকা। এই পরিস্থিতিতে আবার উদ্বেগ বৃদ্ধি করল দিল্লির দূষণ। রাজধানীর বাতাসের গুণগত মানের অত্যন্ত অবনতি হওয়ায় আবার কড়াকড়ি জারি হচ্ছে। দূষণ মোকাবিলায় মঙ্গলবার থেকেই দিল্লিতে কার্যকর হতে চলেছে তৃতীয় স্তরের সতর্কতা (গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান ৩ বা জিআরএপি ৩)। নিয়ন্ত্রক পর্ষদ (কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট) কয়েক দফা নির্দেশিকা জারি করেছে। সেই সঙ্গে দিল্লি এবং এনসিআরের স্কুলগুলিতে অন্তত পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ‘হাইব্রি়ড মডেলে’ পঠনপাঠন করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার ভোরে ৫ ডিগ্রির নীচে নেমে গিয়েছিল দিল্লির তাপমাত্রা। রবিবার ভোরে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ছিল ২৪৬। সোমবার একই সময়ে বাতাসের গুণমান ৩৩৪-এ এসে ঠেকেছে, যা ‘খুব খারাপ’ পর্যায়ে পড়ে! দুপুরের দিকে গুণমান আরও খারাপ হয়েছে। দুপুর ২টোয় বাতাসের গুণমান ৩৬৭-তে পৌঁছেছে। এ হেন পরিস্থিতিতে ফের দিল্লিতে কড়াকড়ি চালু করার কথা বলল নিয়ন্ত্রক পর্ষদ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দিল্লি, গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ, গাজ়িয়াবাদ এবং গৌতম বুদ্ধ নগরের স্কুল এবং কলেজগুলির উচিত অবিলম্বে জিআরএপি ৩ সতর্কতা মেনে চলা। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ‘হাইব্রিড মডেলে’ ক্লাস করানোর নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ স্কুলগুলিতে অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অভিভাবকেরা স্থির করবেন, তাঁরা তাঁদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবেন, না কি অনলাইনে ক্লাস করাবেন।
এ ছাড়াও, দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে যান চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বিএস ৩-এর নীচে থাকা পেট্রল গাড়ি এবং বিএস ৪-এর নীচে থাকা ডিজ়েল গাড়ি চলাচল করতে পারবে না দিল্লির রাস্তায়। একই নিয়ম কার্যকর থাকবে দিল্লি সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশের গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ, গাজ়িয়াবাদ এবং নয়ডায়। পাশাপাশি এ-ও বলা হয়েছে, এখনই প্রয়োজনীয় নয়, এমন সব নির্মাণকাজ কিংবা কোনও ভাঙার কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে। জাতীয় নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং কিছু সরকারি পরিকাঠামো সংক্রান্ত নির্মাণকাজকে এই কড়াকড়ির আওতার বাইরে রাখা হচ্ছে।
দূষণ নিয়ে সোমবার সুপ্রিম কোর্টও কড়া মন্তব্য করে। শুধু দিল্লি নয়, গোটা দেশের দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। শুনানিতে আদালতের কমিশনার জানান, দূষণ মোকাবিলায় দিল্লিতে জারি করা তৃতীয় স্তরের সতর্কতা (গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান ৩ বা জিআরএপি ৩) ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ, দিল্লি-এনসিআরের বাইরের রাজ্যগুলি দূষণবিরোধী পদক্ষেপ অনুসরণ করে না। তার পরই বিচারপতি অভয় এস ওকা ও বিচারপতি মনমোহনের বেঞ্চ কেন্দ্রকে বলে, ‘‘বায়ুদূষণের সমস্যায় জর্জরিত এমন প্রধান শহরগুলির তালিকা দিন। দূষণ নিয়ন্ত্রণে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার প্রয়োজন। আমরা সুপ্রিম কোর্টে বসে শুধুমাত্র দিল্লির সমস্যা নিয়ে ভাবছি, এমন ভুল বার্তা অন্যান্য রাজ্যের কাছে যাওয়া ঠিক নয়।’’