দিল্লির বাতাসে ধোঁয়াশার প্রাদুর্ভাব, যমুনা নদীতে ভাসছে বিষাক্ত ফেনা। —ফাইল চিত্র।
বায়ুদূষণ রুখতে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো হবে দেশের রাজধানী শহর নয়াদিল্লিতে। এমনটাই জানালেন দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী মনজিনদর সিংহ সিরসা। তিনি জানিয়েছেন, দূষণের মোকাবিলা করার একাধিক পন্থা ভেবেছে সরকার। কৃত্রিম বৃষ্টি তার মধ্যে অন্যতম। আপাতত আগামী মে মাসে পরীক্ষামূলক ভাবে এই কাজ করা হবে। পরিবেশবিদদের পরামর্শ মেনেই এগোবে সরকার।
পরীক্ষামূলক ভাবে কোথায় কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো হবে? মন্ত্রী জানিয়েছেন, আপাতত দিল্লির উপকণ্ঠে কোথাও এই পরীক্ষা করা হবে। আইআইটি কানপুর এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ামক সংস্থা ডিজিসিএ পরীক্ষার জায়গা চূড়ান্ত করবে। তাঁর কথায়, ‘‘এটা দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই। আমরা অনেক ধরনের পন্থা অবলম্বনের কথা ভেবেছি। সে সব নিয়ে কাজ চলছে। কৃত্রিম বৃষ্টি তার মধ্যে অন্যতম। সমগ্র দিল্লিতে এই পন্থা প্রয়োগের আগে আমরা ছোটখাটো জায়গায় আগে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখে নেব। মে মাসে যখন গরম সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকবে, তখন এই পরীক্ষামূলক কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো হবে।’’
কী ভাবে কৃত্রিম বৃষ্টি আনা হবে? বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রাসায়নিক প্রয়োগ করে কৃত্রিম মেঘ তৈরি করবেন বিশেষজ্ঞেরা। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় তার কোনও ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে কি না, সে বিষয়েও আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘কৃত্রিম উপায়ে মেঘ তৈরির জন্য যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হবে, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর অথবা সামগ্রিক পরিবেশের উপর তার কোনও ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে কি না, তার বিস্তারিত রিপোর্ট আমরা চেয়েছি। সেই রিপোর্টের তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমরা পরীক্ষানিরীক্ষা চালাব, জলের নমুনা সংগ্রহ করব। পরীক্ষামূলক কৃত্রিম বৃষ্টি যদি সফল হয়, অতিরিক্ত দূষণের সময় সমগ্র দিল্লিতে এই প্রক্রিয়া চালু করা হবে।’’
দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে বছরের একটা বড় সময় ধরে বায়ুদূষণের দাপট দেখা যায়। উৎসবের মরসুমের পর দূষণ মাত্রা ছাড়ায় প্রতি বছর। দিল্লির সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের রিপোর্টে দাবি, ২০২৪ সালে মাত্র ১২১ দিন রাজধানী পরিষ্কার বাতাস ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মাপকাঠি অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর সহনীয় মাত্রা ৫ মাইক্রোগ্রাম। সেখানে নয়াদিল্লির দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দিল্লিতে বার্ষিক পিএম ২.৫ এর মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১০৪.৭ মাইক্রোগ্রাম। এই মান বাতাসের জাতীয় গুণমানের সর্বোচ্চ মাত্রার (প্রতি ঘনমিটারে ৪০ মাইক্রোগ্রাম) আড়াই গুণেরও বেশি। এ বছর দূষণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মরিয়া দিল্লি সরকার।