গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ ইস্তফা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার আচমকা দেশত্যাগের পরে সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়েও উদ্বেগ বেড়েছে নয়াদিল্লির। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের জমানায় বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী ভারতীয় সংস্থাগুলির স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে শিল্প-বাণিজ্য জগতেও।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ প্রকল্পে ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত শিল্পপতি গৌতম আদানির গোষ্ঠীর বড় বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত অন্তত ১০টি ভারতীয় সংস্থার বাংলাদেশে বড় মাপের লগ্নি রয়েছে। জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেষ বার ভারত সফরে এসেছিলেন হাসিনা। সে সময় জল, সড়ক এবং রেলপথে দু’দেশের মধ্যে একগুচ্ছ সংযোগকারী পরিকাঠামো প্রকল্প নিয়ে সমঝোতা হয়েছিল। পাশাপাশি, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়ানোর জন্য ‘সামগ্রিক বাণিজ্য চুক্তি’ (কমপ্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট বা সেপা) নিয়েও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু ৫ অগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরে সবই অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
বন্দর, সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ এবং সস্তা শ্রমিকের কারণে চট্টগ্রামের উৎপাদন ক্ষেত্র কয়েকটি ভারতীয় শিল্পসংস্থার পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছিল। পাশাপাশি, নানা ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী (এফএমসিজি) ভারতীয় সংস্থার বিনিয়োগের গন্তব্য হয়ে উঠেছিল গাজিপুর। ব্যাগ থেকে আয়ুর্বেদিক পণ্য, প্যাকেটজাত খাদ্য থেকে কীটনাশক— নানা জিনিসই ছিল সেই তালিকায়। একটি ভারতীয় সংস্থার দাবি, তাদের মোট বিদেশি বিনিয়োগের ৪৪ শতাংশই ছিল বাংলাদেশের ওই দুই স্থানে। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলের পর উৎপাদনে প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ এখন ১২৯০ কোটি ডলার। ভারতের রফতানি-বাণিজ্যের আর্থিক অঙ্কে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে রয়েছে। গত অর্থবর্ষে (২০২৩-২৪) প্রায় ১১০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। ভারত বাংলাদেশ থেকে মূলত ইস্পাতজাত পণ্য, বস্ত্র ও চামড়ার পণ্য আমদানি করে। সে দেশের গয়না শিল্পেও বিনিয়োগ রয়েছে কয়েকটি ভারতীয় সংস্থার। সেই সঙ্গে বিনোদন, বিশেষত সিনেমা জগতেও দু’পক্ষের যোগাযোগ নিবিড়। কিন্তু আচমকা হাসিনা সরকারের বিদায়ের ফলে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘পদাতিক’ নিয়ে। আগামী ১৫ অগস্ট ছবিটি দুই বাংলায় মুক্তি পাওয়ার কথা। বাংলাদেশের অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত ছবির প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান চলতি রাজনৈতিক টানাপড়েনের জন্য তা পিছিয়ে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। হাসিনা জমানার শেষ এক দশকে বাংলাদেশকে রেল, সড়ক, বন্দর পরিকাঠামো তৈরির জন্য ৮০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে ভারত। গত বছরের শেষেই আখাউড়া-আগরতলা রেল যোগাযোগ, খুলনা-মঙ্গলা বন্দর রেলপথ চালু হয়েছে। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বে রেল যোগাযোগ নিয়ে এর আগে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েও ইউনূস সরকার তাতে সায় দেবে কি না, তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে নয়াদিল্লির।