খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
এক দিকে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ ফাইনাল, অন্য দিকে রাজস্থান ও তেলঙ্গানার ভোট। হাতে রয়েছে সামান্য ক’টা দিনই। কিন্তু আজ ক্রিকেটের কাছে গো-হারা হারল রাজনীতি। রোহিত শর্মা টস করতে নামতেই প্রচার শেষ করে সটান টিভির সামনে রাজনীতিকরা। তা-ও রবিবারে। যে রবিবারকে প্রচারের জন্য আদর্শ দিন বলে মনে করেন দল নির্বিশেষে সকলেই।
ফাইনালের সময়সূচি মাথায় রেখে আজ দুপুরের মধ্যে দুই ভোটমুখী রাজ্যে যাবতীয় প্রচার সেরে ফেলার পরিকল্পনা নেন নরেন্দ্র মোদী-রাহুল গান্ধী, অমিত শাহ থেকে মল্লিকার্জুন খড়্গেরা। নিজেরা টিভির সামনে বসে খেলা দেখবেন বলে যুক্তি দিলেও নেতারাও বুঝতে পারছিলেন, প্রচারের ভিড় জোগাতে যে কর্মী-সমর্থকদের প্রয়োজন হয়, আজ তাঁদের বাড়ি থেকে টেনে বার করা মুশকিল। আর যাঁদের লক্ষ্য করে প্রচার, সেই আমজনতা তো দুপুর গড়াতেই বাড়িমুখো। বিরাট কোহলির কভার ড্রাইভ ছেড়ে কে আর ভরদুপুরে নেতাদের ভাষণ শুনতে জড়ো হবে!
অন্য দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠাসা কর্মসূচি থাকে বিজেপি নেতাদের। আজ ছবিটি ছিল অন্য রকম।পরিস্থিতি আঁচ করে বেলা দু’টোর মধ্যে অধিকাংশ প্রচার কর্মসূচি সেরে ফেলে বিজেপি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বরাবরের ক্রিকেটপ্রেমী। আজ রাজস্থানে প্রচারের দায়িত্ব ছিল রাজনাথের। কোটপুতুলি ও শাহপুর এলাকায়। প্রথমটিতে জনসভার সময় ছিল সকাল ১১.৪০মিনিটে। দ্বিতীয়টি এক ঘণ্টা পরে। দুপুর ১২.৪০। ঘরোয়া ভাবে বিজেপি নেতারা বলছেন, দ্বিতীয় সভা করে যাতে দেড়টার মধ্যে টিভি চালাতে পারেন সে জন্যই সকাল সকাল প্রচারের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন রাজনাথ।
রাজনাথের মতোই আদ্যন্ত ক্রিকেটপ্রেমী বিজেপি দলের কার্যত সহঅধিনায়ক অমিত শাহও। ছেলে জয় শাহ আবার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-এর সচিব। তাই খেলা শুরু হওয়ার আগেই স্টেডিয়ামে পৌঁছে যান অমিত। পাশে ছিলেন আশা ভোঁসলে। বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা আজ প্রচারে তেলঙ্গানায়। নারায়ণপেটের কলেজ গ্রাউন্ডে আজ বেলা বারোটায় একটি সভা রাখলেও, কেভিআর গ্রাউন্ডে রঙ্গা রেড্ডি (চেভেলা)-তে দ্বিতীয় সভাটি শুরু হওয়ার কথা ছিল পৌনে দু’টোয়। সেখানে যে কত জন থাকবেন, যাঁরা থাকবেন তাঁরাও ভারতের ব্যাটিং ছেড়ে নড্ডার ভাষণে কতটা মনোযোগ দেবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবে তেলঙ্গানায় ভাল ফল করার বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে নড্ডার। এ দিকে প্রচারের দিন কমে আসছে। তাই বিকালে সাড়ে পাঁচটা থেকে মলকাজগিরিতে একটি পদযাত্রা করেন নড্ডা। বিজেপি সূত্রের মতে, এক ঘণ্টার মধ্যে সেরে ফেলা হয় ওই পদযাত্রা। দু’দলের ব্যাটিং-বিরতির মাঝেই দলীয় কর্মসূচি শেষ করে ঘরে ঢুকে যান কর্মী-সমর্থকেরা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাহুল গান্ধী, প্রধান দু’দলের অধিনায়কই আজ সকালে প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন রাজস্থানে। প্রধানমন্ত্রী যখন চুরু জেলার তারানগরে প্রচারে ব্যস্ত, তখন বুন্দিতে রাহুল। দু’জনেই বেলা একটার মধ্যে যাবতীয় প্রচার সেরে ফেলেন। বিকেলে রাহুল গান্ধীর কোনও রাজনৈতিক সভার কথা জানায়নি কংগ্রেস নেতৃত্ব। আর মল্লিকার্জুন খড়্গে এক্স হ্যান্ডলে সকালেই ক্রিকেট দলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেন। আর প্রধানমন্ত্রী তো রাজনৈতিক ভাষণেও ক্রিকেটকে টেনে আনতে দেরি করেননি। রাজস্থানে কংগ্রেসের অশোক গহলৌত ও সচিন পাইলটের অন্তর্দ্বন্দ্বকে উস্কে দিতে মোদী বলেন, ‘‘ক্রিকেটে একজন ব্যাটার মাঠে নেমে দলের জন্য রান করেন। সেখানে কংগ্রেসের মধ্যে এমন গণ্ডগোল যে মাঠে নেমে একজন আর একজন-কে রান আউট করতে বেশি ব্যস্ত।’’
রাজস্থানে প্রচার শেষ করেই নিজের রাজ্য গুজরাতে উড়ে গিয়েছেন মোদী। তাঁরই নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে ফাইনাল খেলা। নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে ভারত জিতবে বলে ধরেই নিয়েছিল গেরুয়া শিবির। প্রস্তুত ছিল স্লোগানও, ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়।’ শেষরক্ষা অবশ্য হল না তাতে। প্রধানমন্ত্রী ম্যাচের পরে ফেসবুকে লেখেন, ‘প্রিয় টিম ইন্ডিয়া, তোমাদের প্রতিভা আর সঙ্কল্প সারা টুর্নামেন্ট জুড়েই নজর কেড়েছে। তোমরা জাতিকে গর্বিত করেছ। আজ এবং সব সময়েই তোমাদের পাশে আছি’। ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দিয়েছেন মোদী।