ডি কে শিবকুমার। ছবি: পিটিআই।
কর্নাটক সরকার রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের ছাড়পত্র প্রত্যাহার করার পরেই কংগ্রেস ও বিরোধী নেতাদের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় শিবকুমারকে সিবিআই তদন্তের জালে জড়িয়েছিল রাজ্যের পূর্বতন বিজেপি সরকার। সেই সিদ্ধান্তকে বেআইনি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিচ্ছে কংগ্রেস। আর মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বিজেপির দাবি, সিবিআই তদন্ত আটকানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
রাজ্য মন্ত্রিসভার গতকালের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হওয়ার সময়ে উপমুখ্যমন্ত্রী শিবকুমার উপস্থিত ছিলেন না। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে খবর পেলাম মন্ত্রিসভা বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তকে আইনবিরুদ্ধ বলেছে।’’ এর বেশি কোনও কথা বলতে রাজি হননি উপমুখ্যমন্ত্রী।
তবে কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরের মন্তব্য, ‘‘আইন মেনেই মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কথা আমরা আদালতে জানাব। তার পর আদালত কী করবে কিংবা সিবিআই কী অবস্থান নেবে, সেটা তাদের ব্যাপার। আর বিজেপি-জেডিএসের নেতারা কী ভাবে দেখবেন, সেটাও তাঁরা ঠিক করবেন। তবে আইনের পরিধির মধ্যেই রাজ্য সরকার যা করার করেছে।’’
উপমুখ্যমন্ত্রীর উপর থেকে সিবিআই তদন্তের চাপ সরিয়ে দিতে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে বিজেপি। কর্নাটক বিজেপির সভাপতি বি ওয়াই বিজয়েন্দ্র বলেছেন, ‘‘সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বেআইনি। শিবকুমারের কাছে অনুরোধ, আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি তাঁর যদি আস্থা থেকে থাকে, তা হলে এই সিদ্ধান্তের শরিক হবেন না। আর মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, এমন সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।’’ বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘কর্নাটক ও অন্য রাজ্য থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। গোটা বিষয়টি যখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আওতায়, তখন রাজ্য মন্ত্রিসভার এমন সিদ্ধান্ত অবৈধ।’’ রাজ্যের মন্ত্রী প্রিয়ঙ্ক খড়্গে এ ব্যাপারে পাল্টা দাবি করেছেন, বিজেপি গোটা বিষয়টি নিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে চলেছে। ভোটে হার হবে ধরে নিয়েই শিবকুমার তথা কংগ্রেসকে আটকাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দেওয়া হয়েছিল।
শিবকুমার বিতর্কে বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছে জেডিএস। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী বলেছেন, ‘‘সরকার আসলে ডাকাতদের রক্ষা করতে নেমেছে। মামলা আদালতে, তাই বেশি কিছু বলছি না। তবে যাদের কিছুটা লজ্জা রয়েছে, তারা আদালতকে সম্মান করে। যাদের সেটা নেই, তারা কোনও দিকেই নজর দেয় না।’’
চাপানউতোরের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘তদন্ত শুরু হওয়ার সময়ে ডি কে শিবকুমার কর্নাটক বিধানসভার সদস্য ছিলেন। তিনি যদি বিধায়ক হন, তবে (সিবিআই তদন্তের সবুজসঙ্কেত দিতে) স্পিকারের ছাড়পত্র নিতে হবে। আর মন্ত্রী হিসেবে থাকলে রাজ্যপালের অনুমতি প্রয়োজন।’’
বিতর্কে ঝাঁপিয়েছেন বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পাও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘অ্যাডভোকেট জেনারেলের থেকে আইনি পরামর্শ নিয়েই আমরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। হাই কোর্টও এতে সায় দিয়ে অভিযুক্তকে রেহাই দেয়নি।’’