সজ্জন জিন্দল। —ফাইল চিত্র।
জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা অসত্য। অন্তত তেমনটাই দাবি করা হয়েছে সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’র প্রতিবেদনে। তাতে দাবি করা হয়েছে, গত ১৬ মার্চ বান্দ্রা নগর দায়রা আদালতে পুলিশ যে ‘ক্লোজ়ার’ রিপোর্ট জমা দিয়েছে, সেই রিপোর্টটি ‘ইন্ডিয়া টুডে’-র হাতে এসেছে। রিপোর্টে মুম্বই পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, জিন্দলকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন অভিযোগকারিণী।
গত বছর ডিসেম্বরে মুম্বইয়ের বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্স (বিকেসি) থানায় জিন্দলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এক অভিনেত্রী। পুলিশ সূত্রে খবর মেলে, অভিনেত্রীর বয়ানের ভিত্তিতে শিল্পপতির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬, ৩৫৪ ও ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের হয়। অভিনেত্রীর দাবি, ঘটনাটি ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি ঘটেছে। বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্সে সংস্থার সদর দফতরের পেন্টহাউসে তাঁকে ধর্ষণ করেছেন সজ্জন! অভিনেত্রীর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে। বিবৃতি প্রকাশ করে জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, সমস্ত অভিযোগই অসত্য এবং ভিত্তিহীন। পুলিশি তদন্তে তিনি সব রকম ভাবে সহযোগিতা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন সজ্জন।
‘ইন্ডিয়া টুডে’র প্রতিবেদনে দাবি, তদন্ত-রিপোর্টে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগকারিণীর অভিযোগপত্রে উল্লিখিত হোটেলে ঘটনার দিন যাননি জিন্দল। সেই দিন হোটেলে থাকা বেশ কয়েক জনের বয়ান সংগ্রহ করেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে পুলিশ। তারা রিপোর্টে এ-ও জানিয়েছে যে, ওই দিন অভিযোগকারিণীর সঙ্গে কোনও খারাপ ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগ দায়ের করার সময় অভিযোগকারিণী জানিয়েছিলেন যে, তাঁর কাছে কিছু তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। যা তিনি তদন্তকারীদের হাতে তুলে দেবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তা করেননি। বয়ান নথিভুক্ত করার জন্যও তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি তাতে সাড়া দেননি। সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, রিপোর্টে পুলিশের বক্তব্য, আদালতের সময় নষ্ট করেছেন অভিযোগকারিণী। তাদের আর্জি, জিন্দলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলায় আদালত যেন ‘সংক্ষিপ্ত রায়ের’ পথেই হাঁটে। অর্থাৎ, বিচারপ্রক্রিয়া ছাড়াই যাতে কোনও একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, চিকিৎসক-অভিনেত্রী তাঁর অভিযোগপত্রে জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালে দুবাইয়ে একটি আইপিএল ম্যাচ দেখতে গিয়ে সজ্জনের সঙ্গে তাঁর আলাপ। ভিআইপি বক্সে বসে খেলা দেখার সময় তাঁদের পরিচয় হয়। পরে জয়পুরে সাংসদ প্রফুল্ল পটেলের ছেলের বিয়েতেও সাক্ষাৎ হয় তাঁদের। ফোন নম্বর দেওয়া-নেওয়াও হয়। অভিনেত্রীর দাবি, তাঁর ভাইয়ের একটি সম্পত্তি কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন সজ্জন। সেই বিষয়টি কথা বলতে মুম্বইয়েও তাঁরা দেখা করেছিলেন। অভিযোগপত্রে অভিযোগকারিণী লিখেছিলেন, ‘‘তখন থেকেই আমাকে ‘বেবি’ বলে ডাকতেন সজ্জন। একান্ত সাক্ষাতে প্রায়ই নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কথা বলতেন। মাঝেমাঝেই জড়িয়েও ধরতেন। এতে বেশ কয়েক বার আমাকে বিড়ম্বনায়ও পড়তে হয়েছে।’’
মুম্বইয়ের বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্সে সজ্জনের সংস্থার মূল অফিস। অভিযোগকারিণী দাবি করেছিলেন, গত ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে একটি বৈঠকে যোগ দিতে জিন্দল গোষ্ঠীর অফিসে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁকে অফিসের পেন্টহাউসে নিয়ে যান সজ্জন। সেখানেই তাঁকে ধর্ষণ করা হয় বলে দাবি করেছিলেন অভিনেত্রী। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম বার তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সেই সময় তাঁর অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি। তাঁর দাবি, পুলিশের কাছে যাওয়ার কথা জানতে পেরে তাঁর কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন সজ্জন। চেয়েছিলেন সব কিছু নিজেদের মধ্যে ‘মিটমাট’ করে নিতে। কিন্তু অভিনেত্রী তাতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে হুমকি দেওয়া শুরু করেন সজ্জন। নম্বরও ব্লক করে দেন। অভিযোগপত্রে অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘‘নম্বর ব্লক করার সময় আমাকে হুমকিও দিয়েছেন সজ্জন জিন্দল। ওই ঘটনার কথা পুলিশকে জানালে ফল ভুগতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে আমাকে।’’
পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরেও গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিলেন অভিনেত্রী। সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি-টিভি১৮ তাদের প্রতিবেদনে দাবি করেছে, অভিনেত্রী তাদের জানিয়েছেন যে, তিনি যখন প্রথম বার পুলিশের দ্বারস্থ হন, তাঁর কথায় বিশেষ গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। অভিযোগের কোনও প্রতিলিপিও দেওয়া হয়নি তাঁকে। যার অর্থ, তখন এফআইআর-ই দায়ের করেনি পুলিশ। এর পর গত ৫ ডিসেম্বর অভিনেত্রী বম্বে হাই কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। সেই মামলায় উচ্চ আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল মুম্বই পুলিশকে। তিন থানার পুলিশকর্তাকেও আদালতে তলব করা হয়েছিল। এর পর গত ১২ ডিসেম্বর পুলিশকে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেয় আদালত। তা মেনে ১৩ ডিসেম্বর অর্থাৎ বুধবার এফআইআর দায়ের করে পুলিশ।
মুম্বই পুলিশ অবশ্য এফআইআর দায়েরে গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। ডিসিপি দীক্ষিতকুমার গিদাম সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি-টিভি১৮-কে বলেছিলেন, ‘‘আইন মেনেই যা করার করছে মুম্বই পুলিশ। এফআইআর দায়েরে আমাদের দিক থেকে কোনও গাফিলতি ছিল না। মহিলাদের সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখে মুম্বই পুলিশ।’’