(বাঁ দিকে) রবিবার অনশনরত সোনমের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ (ছবি: পিটিআই) এবং (ডান দিকে) আন্দোলনকারীদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ (ছবি: এক্স)।
কলকাতায় যেমন নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে অনশন চলছে, তেমনই দিল্লিতেও পৃথক দাবিদাওয়া নিয়ে অনশন বসেছিলেন জলবায়ু আন্দোলনকর্মী সোনম ওয়াংচুক। লাদাখ সংক্রান্ত দাবিদাওয়া নিয়ে অষ্টম দিনে পড়ল তাঁর অনশন। রবিবার দুপুরে অনশনস্থল থেকেই দিল্লি পুলিশের একটি দল বাস্তবের ‘র্যাঞ্চো’ সোনমকে তুলে নিয়ে যায় থানায়। তাঁর সঙ্গে আরও ২০-২৫ জন আন্দোলনকারীকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে দিল্লির মন্দির মার্গ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁদের।
লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া-সহ একাধিক দাবিতে গত রবিবার (৬ অক্টোবর) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছিলেন ওয়াংচুক। কলকাতায় জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরুর ঠিক এক দিন পরেই। প্রথমে দিল্লির যন্তর মন্তরের সামনে প্রতিবাদে বসতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাতে অনুমতি না পাওয়ায় বিকল্প হিসেবে লাদাখ ভবনের সামনেই অনশনে বসে পড়েছিলেন ওয়াংচুকেরা। দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, লাদাখ ভবনের সামনে প্রতিবাদে বসার জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। সেই কারণেই এই পদক্ষেপ।
ওই পুলিশ আধিকারিক বলেন, “তাঁরা যন্তর মন্তরের সামনে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বসতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। সেটি এখনও বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। অন্য কোথাও প্রতিবাদে বসার জন্য তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের শীঘ্রই ছেড়ে দেওয়া হবে।”
রবিবার দুপুরে সোনমের সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে দিল্লি পুলিশ একাধিক পুরুষ ও মহিলাকে এক প্রকার জোর করেই একটি বাসে তুলেছে। পুলিশের সঙ্গে কিছুটা তর্কাতর্কিও হয় কয়েক জনের। যদিও ওই ভিডিয়োয় সোনমকে দেখা যায়নি। ভিডিয়োটি শেয়ার করে সোনম লিখেছেন, “শান্তিপূর্ণ ভাবে অনশনকারীদের জোর করে তুলে দিচ্ছে পুলিশ এবং আটক করছে।”
উল্লেখ্য, কলকাতায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনের ক্ষেত্রেও কিছুটা একই ধরনের অভিযোগ উঠে এসেছে। অনুমতি ছাড়াই ধর্মতলায় অনশনমঞ্চে বসার অভিযোগ উঠেছে। তবে কলকাতার পরিস্থিতির সঙ্গে দিল্লির পরিস্থিতির ফারাক বিস্তর। দাবিদাওয়া ভিন্ন। প্রেক্ষিত ভিন্ন। কলকাতায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের প্রতি নাগরিক সমাজের একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে। নাগরিক সমাজ সংহতির বার্তা নিয়ে অনশনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু দিল্লিতে লাদাখ ভবনের সামনে হাতে গোনা কিছু সমর্থককে নিয়েই অনশনে বসেছিলেন সোনম।
লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরেই লড়ছেন সোনম। তাঁর দাবি, লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র আলোচনা করুক। লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতাভুক্ত করে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হোক। লাদাখের জন্য একটি পৃথক পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন করা হোক। সেই সঙ্গে লেহ এবং কার্গিল জেলার জন্য পৃথক পৃথক লোকসভা আসনের বন্দোবস্ত করা হোক। এমনই নানা দাবি নিয়ে বার বার সরব হয়েছেন তিনি।
সেই দাবিগুলিকেই আবার দিল্লির দরবারে পৌঁছে দিতে অনুগামীদের নিয়ে লেহ থেকে দিল্লি পর্যন্ত পদযাত্রা করেছেন তিনি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দিল্লির সিঙ্ঘু সীমানার কাছে দিল্লি পুলিশ তাঁকে আটক করে। পরে অবশ্য ২ অক্টোবর রাতে ছেড়ে দেওয়া হয় সোনমকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ অন্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।