গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
চরবৃত্তির অভিযোগে ভারতীয় নৌবাহিনীর সাত জনকে গ্রেফতার করল অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ। বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত বিশাখাপত্তনম, মুম্বই এবং কর্নাটকের কারওয়ার-এ অভিযান চালিয়ে ওই সাত জনকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের ডিজি গৌতম সোয়াগ।
তাঁর ইঙ্গিত একাধিক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, অন্ধ্র পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (এপিএসআইবি), নৌবাহিনীর গোয়েন্দা শাখা-র যৌথ অভিযানে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে যার থেকে স্পষ্ট এই চক্রের শিকড় রয়েছে ভারতীয় নৌবহরের গভীর পর্যন্ত।
নৌ-বাহিনীর সাতজন ছাড়াও গ্রেফতার করা হয়েছে ভাইজাগের এক ব্যবসায়ীকে যে হাওয়ালা কারবারের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশের দাবি, ওই চর চক্রের সঙ্গে পাক গোয়েন্দা সংস্থার যোগ পাওয়া গিয়েছে।
এই ‘ডলফিন নোজ’ অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘বেশ কয়েক মাস ধরেই আমরা খবর পাচ্ছিলাম পাক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স (আইএসআই)-এর দুবাই মডিউল ভারতীয় নৌবাহিনী সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করছে। কিন্তু কোথা থেকে সেই তথ্য পাচ্ছে তা পাওয়া যাচ্ছিল না।”
সূত্রের খবর, এর পরই গোয়েন্দারা একটি হাওয়ালা চক্রের সন্ধান পান যারা ওই দুবাই মডিউলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। সেই সূত্র ধরে অন্ধ্রপ্রদেশের এক ব্যাবসায়ীর হদিশ পান গোয়েন্দারা। এর পরই সাহায্য নেওয়া হয় এপিএসআইবি (অন্ধ্রপ্রদেশ স্পেশাল ইনটেলিজেন্স ব্র্যাঞ্চ) এবং নৌবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের। তদন্তে উঠে আসে সাত জনের সন্দেহজনক আচরণ।
এক গোয়েন্দা কর্তা জানিয়েছেন, এই সাত জনই ২০১৭ সালে নাবিক হিসাবে বাহিনীতে যোগ দেন। এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, এরা বাহিনীর নিয়ম ভেঙে ফেসবুকে অন্য নামে অ্যাকাউন্ট খোলেন। ২০১৮ সালে ফেস বুকের সূত্রেই ওই সাত জনের সঙ্গেই আলাপ হয় এক মহিলার। ফেসবুকের মাধ্যমে বাড়তে থাকে ঘনিষ্ঠতা। এর পরেই উল্টো দিকের মহিলা ভিডিয়ো, অডিও এবং মেসেঞ্জারের সমস্ত চ্যাট প্রকাশ্যে আনার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেল করা শুরু করে সাত জনকে। সাত জনের তিন জন ভাইজাগে কর্মরত, দু’জন মুম্বই এবং বাকি দু’জন কারওয়ারে। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, মহিলা এক জন নন। তিনজন।
সূত্রের খবর, ওই সাত জনকেই ব্ল্যাকমেল করে ওই তিন মহিলা মূলত নৌবাহিনীর বিভিন্ন জাহাজের অবস্থান, সাবমেরিনের অবস্থান সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য জেনে নিত। এর পর ওই মহিলাদের নির্দেশেই ওই সাতজন যোগাযোগ করে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তদন্তকারীদের ধারণা ব্যবসায়ী পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি আসলে আইএসআই-এর কোনও এজেন্ট। পরবর্তী সময়ে ওই এজেন্টকে যুদ্ধজাহাজের অবস্থান, গতিবিধি এবং সাবমেরিন সংক্রান্ত তথ্য দিত ওই সাত জন।
ধৃতেরা জেরায় দাবি করেছে যে— ওই তিন মহিলা তাঁদের ব্ল্যাকমেল করে টাকাও নিয়েছে। তবে তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতেরা যে ওই তথ্যের বিনিময়ে ধৃত হাওয়ালা অপারেটরের কাছ থেকে টাকা পেয়েছে তা গোপন করতেই পাল্টা টাকা দেওয়ার কথা বলছে। এক তদন্তকারী বলেন, বিশাখাপত্তনমের বিচ রোডে যে ব্যারাকে ওই চার অভিযুক্ত নাবিক থাকতেন, সেই বাড়ির নাম ডলফিন নোজ। সেই কারণেই গোটা অপারেশনের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ডলফিন নোজ’।
তবে তদন্তকারীদের দাবি, ওই সাতজন নয়, একই ভাবে ওই মহিলাদের ‘হানি ট্র্যাপে’-র শিকার হয়েছেন নৌবাহিনীর আরও অনেক সদস্য। তাঁদের মধ্যে পদস্থ আধিকারিকরাও রয়েছেন। তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গোটা ঘটনায় সাতটি এফআইআর দায়ের করেছে অন্ধ্র পুলিশ। সূত্রের খবর, চর চক্রের পরবর্তী ধাপের তদন্তের দায়িত্ব নিতে পারে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ।