সীতারাম ইয়েচুরি।
উত্তর-পূর্ব দিল্লির সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের মামলায় দিল্লি পুলিশের চার্জশিটে এ বার সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, স্বরাজ অভিযানের নেতা যোগেন্দ্র যাদব এবং শিক্ষাবিদ জয়তী ঘোষ ও অপূর্বানন্দের নাম।
দিল্লির হিংসার পিছনে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল বলে আগেই দাবি করেছিল দিল্লি পুলিশ । সেই দাবি প্রমাণ করতে তিন ধৃত ছাত্রীর জবানবন্দির ভিত্তিতে এ দিন তারা অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করেছে। পুলিশের দাবি, ওই তিন ছাত্রী পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, নয়া নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-র বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ‘উসকানি’ দিয়েছিলেন জয়তীরা। জয়তী জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপিকা। অপূর্বানন্দ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
অমিত শাহর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশের এই নতুন পদক্ষেপে বিরোধী শিবিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ওই সংঘর্ষে সরকারি হিসেবেই ৫৩ জনের মৃত্যু হয়। কয়েকশো মানুষ আহত হন। বিরোধীদের অভিযোগ, সিএএ-র বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র উসকানিমূলক মন্তব্য করার পরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। সেই কপিলের বিরুদ্ধে পুলিশ এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এখন বিরোধী দলের নেতা থেকে সামাজিক আন্দোলনকারী, শিক্ষাবিদদের জড়াতে চাইছে তারা। রাতে দিল্লি পুলিশ বিবৃতি দিয়ে বলে, ‘‘নিয়ম মেনেই ছাত্রীদের বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে। নিয়ম মেনেই চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। চার্জশিটে নাম থাকা মানেই কাউকে ‘অভিযুক্ত’ বলা নয়। তবে পরে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পেলে এঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
দিল্লি পুলিশের এই চার্জশিটের পিছনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন ইয়েচুরি। সিপিএম নেতা বলেন, “দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে কাজ করে। পুলিশের এই অবৈধ কাজকর্ম থেকে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের চরিত্র স্পষ্ট। ওঁরা বিরোধীদের প্রশ্ন, বিক্ষোভকে ভয় পান। সিএএ-র মতো বিভাজনকারী আইনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার দেশের সংবিধান দিয়েছে। আমরা জরুরি অবস্থা হঠিয়েছিলাম। এই জরুরি অবস্থারও মোকাবিলা করব।” কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, “যাঁদের চার্জশিটে নাম রয়েছে, তাঁদের পাশে রয়েছি। এখন যে সব প্রতারকেরা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাঁদের থেকে এঁরা অনেক বেশি দেশভক্ত।”
আরও পড়ুন: আক্রান্ত লক্ষের দোরে, অনুমতি মিললে ভারতে পরীক্ষায় তৈরি সিরাম
দিল্লি পুলিশ যে চার্জশিট জমা করেছে, তাতে ‘পিঁজরা তোড়’ আন্দোলনে যুক্ত দেবাঙ্গনা কলিতা, জেএনইউ-এর ছাত্রী নাতাশা নারওয়াল ও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্রী গুলফিশা ফতিমার ভূমিকার কথা রয়েছে। তিন জনের বিরুদ্ধেই কঠোর ইউএপিএ আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে। চার্জশিটের সঙ্গে দু’টি প্রায় একই ভাষার জবানবন্দি জমা করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, দেবাঙ্গনা ও নাতাশা পুলিশের কাছে জানিয়েছে, জয়তী, অপূর্বানন্দ ও তথ্যচিত্র নির্মাতা রাহুল রায়ের কথাতেই তাঁরা দরিয়াগঞ্জ ও জাফরাবাদে প্রতিবাদ, রাস্তা অবরোধ করেন। সিএএ-কে মুসলিম বিরোধী হিসেবে তুলে ধরা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভিড় জড়ো করতে ইয়েচুরি, যোগেন্দ্র, চন্দ্রশেখর আজাদের মতো বড় মাপের নেতারা প্রতিবাদস্থলে আসতে শুরু করেন।
তবে এই জবানবন্দির কিছু পৃষ্ঠায় যে দুই ছাত্রী সই করতে রাজি হননি, তা-ও চার্জশিট থেকে স্পষ্ট। আইনজীবীদের বক্তব্য, আদালতে পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দির কোনও মূল্য নেই। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের যুক্তি, কপিল মিশ্র ও অন্যদের রেহাই দিয়ে ইয়েচুরি, যোগেন্দ্রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা থেকেই দিল্লি পুলিশের কারসাজি স্পষ্ট। যোগেন্দ্র বলেন, “দিল্লি পুলিশ সরকারি ভাবে আমাকে বা ইয়েচুরিকে ষড়যন্ত্রকারী বলে অভিযুক্ত করেনি। তবে যে কোনও সিএএ-বিরোধীকেই ষড়যন্ত্রকারীদের বৃত্তে এনে ফেলার সব রকম চেষ্টা দিল্লি পুলিশ করছে।”