জানুয়ারি থেকে মার্চে বৃদ্ধির হার নেমে এসেছে ৫.৮ শতাংশে। যা পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন। দ্রুততম অর্থনৈতিক বৃদ্ধির যে ঢাক পেটাচ্ছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার, হাতছাড়া হয়েছে সেই তকমাও। বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাঁচ বছর আগে ক্ষমতায় এসেছিল মোদী সরকার। কিন্তু সরকারই মেনে নিয়েছে নোট বাতিলের পরে বেকারির হার গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে। দু’কোটি চাকরি হয়নি, এমন অভিযোগ মোদী কোনও দিনই মানতে চাননি। বারংবার বলে এসেছেন চাকরি ঠিকই হয়েছে, কিন্তু হিসেব নেই। আর্থিক বৃদ্ধির হার যখন এত চড়া, তখন চাকরিও নিশ্চয় হচ্ছে। এ বার বৃদ্ধির হার নামতে শুরু করায় সেই যুক্তি নিয়েও প্রশ্ন চিহ্ন উঠেছে।
বিপদ বুঝে এ বার নিজেই মাঠে নামলেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত চাকরি ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করতে মন্ত্রিসভার দু’টি কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মোদী। যার মধ্যে একটি বিনিয়োগ ও বৃদ্ধি সংক্রান্ত। দ্বিতীয়টি হল কর্মসংস্থান ও দক্ষতাবৃদ্ধির প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত। প্রথম কমিটিতে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ী ও রেল ও বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। দ্বিতীয় কমিটিতে অমিত শাহ, নির্মলা ও পীযূষ ছাড়াও রয়েছেন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, দক্ষতাবৃদ্ধি প্রশিক্ষণ মন্ত্রী এম এন পাণ্ডে, শ্রমমন্ত্রী সন্তোষকুমার গাঙ্গওয়ার ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী হরদীপ পুরী। দু’টি কমিটিরই শীর্ষে রয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।
লোকসভার প্রচারে বিরোধীরা চাকরি প্রশ্নে তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ শানালেও তা মানতে চায়নি মোদী সরকার। তবে মুখে অস্বীকার করলেও সরকার ভালই বুঝতে পারছে, চাকরির প্রশ্নে সমস্যা রয়েছে। বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৬.১ শতাংশ। দ্রুততম বৃদ্ধির দাবি করা মোদী সরকারের আমলে গত অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে বৃদ্ধির হারের সূচক নিম্নমুখী। দ্রুত তা উঠবে সেই ভরসাও দিতে পারছেন না অর্থনীতিবিদরা। উল্টে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে আরও শ্লথ হতে পারে বৃদ্ধির গতি। আর্থিক সংস্থাগুলিতে সমস্যার জেরে নগদের জোগান কমেছে। কমেছে বাজারে কেনাকাটাও।
তাই দ্বিতীয়বার দায়িত্ব নিয়ে বৃদ্ধিতে ধস রোখা ও বিপুল সংখ্যক বেকারদের চাকরির সুযোগ করে দেওয়াই যে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ তা বুঝতে পারছেন নরেন্দ্র মোদী। সরকারের অধিকাংশ কাজের দায়িত্ব অমিত শাহকে ছাড়লেও চাকরি, অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর মতো মূল বিষয়গুলি নিজের হাতে রাখাই শ্রেয় বলে মনে করছেন মোদী। ওই দু’টি কমিটি ছাড়াও আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সুরক্ষা বিষয়ক কমিটির গঠন করেছে সরকার। যাতে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।