লোকসভায় অনাস্থা আলোচনা শেষ। বৃহস্পতিবার সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ ভোটাভুটি শেষ করলেন স্পিকার ওম বিড়লা। ছবি: সংগৃহীত।
কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাসপেনশনের প্রস্তাব পাশ হল লোকসভায়। কংগ্রেস অনাস্থা আলোচনা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল আগেই। সংসদে উপস্থিত বিরোধীদের সংখ্যা ছিল নামমাত্র। কংগ্রেস-শূন্য লোকসভায় সহজেই পাশ হয়ে যায় অধীরের বিরুদ্ধে সাসপেনশনের প্রস্তাব। অসংসদীয় আচরণের অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীরকে। এ ব্যাপারে প্রিভিলেজ কমিটির সিদ্ধান্ত না হওয়া অবধি সাসপেন্ডই থাকবেন অধীর।
লোকসভায় শেষ হল মোদীর জবাবি বক্তৃতা। বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেল ভোটাভুটিতে। স্পিকার ওম বিড়লা জানিয়ে দিলেন, সংখ্যা গরিষ্ঠতায় অনাস্থার বিপক্ষেই ভোট গিয়েছে বেশি।
বিরোধীরা কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই তাঁর সরকারকে আক্রমণ করতে চলে এসেছেন বলে মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, ওঁদের পাঁচ বছর আগে বলেছিলাম, ২০২৩ সালে আরও ভাল ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন। ওঁরা সে কথা মেনেছেন। কিন্তু এ বারও প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পারলেন না। কোনও সৃষ্টিশীলতাই দেখাতে পারলেন না।
মোদী বললেন, ‘‘উত্তর-পূর্ব ভারত আমার কাছে হৃদয়ের টুকরোর মতো দামি। তবে আজ উত্তর-পূর্ব ভারতে যে সমস্যা চলছে, তার জন্ম দিয়েছিল কংগ্রেস। ভুললে চলবে না। যখন মণিপুরে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের মূর্তিতে বোমা ফেলা হয়েছিল, তখন কংগ্রেস ছিল মণিপুরের সরকার চালানোর দায়িত্বে। মণিপুরে বহুদিন কংগ্রেসের সরকার ছিল। কিন্তু সেই সময়ও বার বার মণিপুরে বোমাবাজি হয়েছে। কিন্তু আমরা গত ছ’বছরে মণিপুরে যে সরকার চালাচ্ছি, সেই সরকার এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমার সরকার মণিপুরে উন্নতির চেষ্টা করে চলেছে। তবে আমরা এটা ভোটের জন্য করছি না। আমাদের সময়েই প্রথম মণিপুরে বন্দে ভারতের মতো ট্রেন চলেছে। এমস খুলেছে, পণ্যবাহী ট্রেন পৌঁছেছে। প্রথম মণিপুর থেকে সাংসদ এসেছে। প্রথম বার মণিপুর থেকে বিশিষ্টকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। আমরা যে সবকা সাথ সব কা বিকাশ বলে যে স্লোগান দিয়েছি, তা শুধুমাত্র স্লোগান নয়। আমরা দেশের কাজ করতে বেরিয়েছি।’’
মোদী বললেন, ‘‘রাম মনোহর লোহিয়া নিজে জওহরলাল নেহরুকে উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে দোষারোপ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতকে কোল্ড স্টোরেজের মধ্যে পাঠিয়ে তাদের উন্নতির সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছেন নেহরু।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, মণিপুরে নিশ্চয়ই শান্তির সূর্য উঠবে। মণিপুর আবার নতুন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাবে। মণিপুরের মানুষকে আমার আবেদন, দেশ আপনাদের সঙ্গে আছে। সংসদ সঙ্গে আছে। ওখানে সমস্যার সমাধান হবে। আমি মণিপুরের মা-বোনেদের বলছি। কিন্তু শুনে খারাপ লাগছে, এই সংসদ থেকেই কেউ কেউ ভারতমাতার মৃত্যু কামনা করছেন। নাম না করেই রাহুলের মন্তব্য টেনে আক্রমণ মোদীর। বললেন, ওই মন্তব্যে ভারতবাসী দুঃখ পেয়েছে।
মণিপুর নিয়ে দেড় ঘণ্টার বক্তৃতাতে জবাব দেননি মোদী। বিরোধীরা অনাস্থা আলোচনা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন অধিবেশন ছেড়ে। মোদী দেখে বললেন, ‘‘এঁরা অভিযোগ করতে পারেন অথচ এঁদের জবাব শোনার ধৈর্য নেই। এঁরা এখন পালিয়ে যাচ্ছেন!’’
মোদী বললেন, ‘‘ওঁরা বলেছেন, ওঁরা প্রেমের দোকান আর আমরা ‘ঘৃণার দোকান’। কিন্তু ভারতের মানুষ বলছে ওরা লুটের দোকান। ওরা ভারতের দেউলিয়া হওয়ার গ্যারান্টি। জেনে রাখুন ওদের দোকানে খুব শীঘ্রই তালা পড়বে। কিন্তু আমার গ্যারান্টি হল, আমি আমার শাসনকালে দেশকে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে নিয়ে আসব।’’
রাবণের মতো অহঙ্কার মোদীর। ওই অহঙ্কারই ওঁকে নিয়ে ডুববে বলেছিলেন রাহুল গান্ধী। ওই মন্তব্যের জের টেনেই কংগ্রেসকে তোপ দাগলেন মোদী। বললেন, ঠিকই বলা হয়েছে, লঙ্কাকে রাবণের অহঙ্কারই ডুবিয়েছিল। যেমন কংগ্রেসকে ওঁদের অহঙ্কার ডুবিয়েছে। রামরূপী জনতা ওঁদের ৪০০ থেকে ৪০-এ নামিয়ে এনেছে। বললেন, এই জোটের নাম ইন্ডিয়া নয় ঘমন্ডিয়া (অহঙ্কারী) হওয়া উচিত ছিল।
বিরোধী জোট নিয়ে আবার কটাক্ষ মোদীর। বললেন, এক এক রাজ্যে এরা নিজেরাই একে অপরের বিরোধী। অথচ কেন্দ্রে এরাই একে অপরের হাত ধরে কেন্দ্রের বিরোধিতা করছে। বিরোধী ঐক্যকে কটাক্ষ করে মোদী বললেন, এই জোটের সবাই প্রধানমন্ত্রী হতে চান।
বিরোধী জোটের নতুন নামকরণ নিয়ে কটাক্ষ মোদীর। বললেন, নতুন নাম রাখতে গিয়ে ভারতের টুকরো টুকরো করে দিয়েছেন বিরোধীরা। মোদীর ব্যাখ্যা, বিরোধীদের নতুন নামের প্রতিটি অক্ষরের পরে একটি করে ডট বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আই ডট এন ডট ডি ডট আই ডট এ (I.N.D.I.A)। এমনকি, এর মধ্যে এনডিএ-র এন, ডি আর এ অক্ষরটিও চুরি করেছে বিরোধীরা।
মোদীর বক্তৃতা চলাকালীন লোকসভায় মণিপুর স্লোগান বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র। মোদী বললেন, আপনারা স্লোগান দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন।
বিরোধীদের আরও এক ক্ষমতার কথা বললেন মোদী। সংসদে বললেন, ওঁদের এক অদ্ভুত চৌম্বকশক্তি আছে। ভারতের নামে দুনিয়ায় যে যেখানে যা-ই নেতিবাচক বলুন, তা ওঁরা সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বাস করে নেন। শুধু তা-ই নয়, সেই অভিযোগ যত ছোটই হোক না কেন, তার হয়ে প্রচারও চালান।
কংগ্রেসের সময় ভারতীয় অর্থনীতি বিশ্বে ১১ কিংবা ১২ নম্বরে ছিল। আমাদের সরকার দেশকে বিশ্বে শীর্ষ পাঁচের তালিকায় টেনে তুলেছে, বললেন মোদী। ওঁরা হয়তো ভাবেন, এ সব এমনি এমনি হচ্ছে। যেমন ওঁরা নিজেদের শাসনকালে বসে থাকতেন, আর ভাবতেন সব নিজে থেকে হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা যা করেছি, তা সম্ভব হয়েছে কঠোর শৃঙ্খলা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে।
প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য হেলিকপ্টার বানাত এইচএএল, সেই সংস্থা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করেছিল এই বিরোধীরা। সেই এইচএএল এখন আরও উন্নতি করে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। এরা এলআইসির নামে খারাপ কথা বলেছিল। সেই এলআইসিও সঙ্কট কাটিয়ে উঠেছে। ২০১৮ সালে এঁরা আমাদের সরকার পড়ে যাবে বলেছিল। তার পর আরও বেশি ভোট পেয়ে আমাদের সরকার আবার ক্ষমতায় এসেছে।
সংসদে মোদী বললেন, ‘‘আপনাদের একটা গোপন কথা বলি, ঈশ্বরের কাছে এক অদ্ভুত বর পেয়েছেন বিরোধীরা। ওঁরা যাঁদেরই খারাপ চেয়েছেন, তাদেরই ভাল হয়েছে।’’ তিনটি উদাহরণ দিয়ে বললেন মোদী।
দুনিয়া জুড়ে ভারতের ধন্য ধন্য হচ্ছে তাতে নজর না লেগে যায় তার ব্যবস্থা করেছেন বিরোধীরাই। মোদী বললেন, বিরোধীরা কালো কাপড় পরে এসে ভারতের গায়ে কালো টিকা লাগিয়ে দিয়েছেন।
মোদী বললেন, ‘‘ভগবান চান এনডিএ ২০২৪ সালেও সরকার গঠন করুক ভারতে। তার জন্যই তিনি বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের মধ্যে দিয়ে এই সুযোগ করে দিয়েছেন আমাদের।’’
অধীর চৌধুরীকে অনাস্থা-বিতর্কে বলতে দেওয়া হয়নি কেন? প্রশ্ন তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানতে চাইলেন, ‘‘কলকাতা থেকে কি কোনও বিশেষ ফোন এসেছিল? তার জন্যই কি তাঁকে এই বিতর্কে সরিয়ে রাখা হল?’’ বিরোধী জোটের ঐক্যকে পরোক্ষে কটাক্ষ করে মোদী বললেন, ‘‘আমি অধীরবাবুর প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’’