প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
ভোট হবে শুধু তাঁর নামে। কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্যকে দেখানো হবে ‘মোদী সরকার’-এর সাফল্য হিসেবে। প্রতিটি প্রকল্পের সঙ্গে মোদী বা নমো নাম জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা হবে। গরিব, মহিলা, তরুণ সম্প্রদায় ও চাষি— এই চারটি ভোটব্যাঙ্কই হবে প্রধান লক্ষ্য।
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন শেষ হতেই লোকসভা নির্বাচনে তাঁর রণকৌশল বুঝিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী।
রাহুল গান্ধী, নীতীশ কুমার, অখিলেশ যাদবরা যখন মোদীকে বিপাকে ফেলতে জাতগণনার দাবি তুলছেন, তখন আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যুক্তি দিলেন, তাঁর কাছে সবথেকে বড় জাতি হল, গরিব, মহিলা, তরুণ সম্প্রদায় ও চাষি। তাঁদের উত্থান হলেই ভারত উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। বিজেপি নেতাদের ব্যাখ্যা, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এই চারটি ভোট ব্যাঙ্কের বড় অংশই মোদীর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের থেকেও বেশি হারে।
বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলির বিভিন্ন গ্যারান্টি বা সাধারণ মানুষের সুরাহায় নানা প্রকল্প বিজেপিকে বেগ দিয়েছে। সম্প্রতি কর্নাটকে কংগ্রেসের বিভিন্ন গ্যারান্টির কাছে বিজেপিকে হার মানতে হয়েছে। আজ তারই জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাকিদের থেকে যেখানে আশা শেষ হয়ে যায়, সেখান থেকেই ‘মোদীর গ্যারান্টি’ শুরু হয়। রাহুল, নীতীশ, অখিলেশরা জাতগণনার পক্ষে ‘সামাজিক ন্যায়’-এর দাবি তুলছেন। তাঁদের যুক্তি, ওবিসি-দের জনসংখ্যায় ভাগ অনুযায়ী সংরক্ষণ দিতে হবে। আজ প্রধানমন্ত্রী সওয়াল করেছেন,
মানুষের প্রয়োজন চিহ্নিত করে তাঁদের অধিকার পাইয়ে দেওয়াটাই আসল সামাজিক ন্যায়। তাঁর সরকারের সেটাই লক্ষ্য।
বৃহস্পতিবার তেলঙ্গানায় ভোটগ্রহণের মাধ্যমে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে ইতি পড়েছে। এ বার
রবিবার ফলের অপেক্ষা। তেলঙ্গানায় যখন ভোটগ্রহণ চলেছে, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একের পর এক সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেছেন। প্রথমে ‘বিকশিত ভারত সঙ্কল্প যাত্রা’ অভিযান, তার পর জন ঔষধি কেন্দ্র, মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ড্রোন দেওয়া, শেষে রোজগার মেলায় ৫১ হাজার সরকারি নিয়োগপত্র বিলি।
মোদী সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচার গ্রামে নিয়ে ‘বিকশিত ভারত সঙ্কল্প যাত্রা’ অভিযান শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে এখনও যাঁরা বাদ পড়ে গিয়েছেন, তাঁদের যোগ করাই হল এর লক্ষ্য। তার জন্য প্রচারের রথ গ্রামে গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে। সরকারি কর্মসূচি হলেও রথের গায়ে লেখা থাকছে ‘মোদী সরকার’। বিরোধীদের প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় সরকারের নাম কি খাতায়-কলমে মোদী সরকার হয়ে গিয়েছে?
নরেন্দ্র মোদী এ সবের তোয়াক্কা না করে আজ বলেছেন, এই রথকে মানুষই মোদীর রথ বলছে। যাঁরা সরকারি প্রকল্প থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁদের খুঁজতে মোদী বেরিয়েছে। যাতে আগামী পাঁচ বছরে তাঁদের জন্যও কাজ করা যায়। ‘মোদীর গ্যারান্টি’-র গাড়ি ৩০ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। জন ঔষধি কেন্দ্রকে লোকে ‘মোদীর ওষুধের দোকান’ বলেও ডাকছেন বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের হাতে চাষের জমিতে ফসল ছড়ানোর জন্য ড্রোন তুলে দিয়ে মোদী বলেছেন, যাঁরা ড্রোন চালাবেন, তাঁদের ‘নমো ড্রোন দিদি’ নাম দেওয়ার পরামর্শ এসেছে।
বেকারত্ব নিয়ে তিরের মুখে মোদী ভোটের আগে ১০ লক্ষ সরকারি পদে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। রুটিন সরকারি নিয়োগকেই ‘রোজগার মেলা’ হিসেবে আয়োজন করে নিয়োগপত্র বিলি হয়েছে। আজ ৫১ হাজার নিয়োগপত্র বিলির পরে মোট ৭ লক্ষ নিয়োগপত্র বিলি হল। যার অর্থ, লোকসভা ভোটের আগে আগামী তিন মাসে মোদী সরকারকে তিন লক্ষ নিয়োগপত্র বিলি করতে হবে।