প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই
পাখির চোখ আদিবাসী ভোট। তাই গুজরাতের বিধানসভা ভোট ঘোষণার ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে রাজস্থানের বাঁসওয়াড়াতেও আদিবাসী ভোট কুড়োতে যাচ্ছেন।
বাঁসওয়াড়ায় মানগঢ় ধাম রাজস্থানে অবস্থিত হলেও গুজরাত, মধ্যপ্রদেশের আদিবাসীদের কাছেও মানগঢ় ধাম পরম শ্রদ্ধার স্থল। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে ভিল আদিবাসী নেতা গোবিন্দ গুরুর নেতৃত্বে প্রায় দেড় লক্ষ ভিল মানগড় পাহাড়ে জড়ো হয়েছিলেন। ব্রিটিশ পুলিশ সেই জমায়েতের উপরে গুলি চালানোয় প্রায় দেড় হাজার আদিবাসী প্রাণ হারান। মানগঢ় ধাম তাই রাজস্থানের জালিয়ানওয়ালাবাগ বলেও পরিচিত। রাজস্থান লাগোয়া গুজরাতের আদিবাসীরাও সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে যান।
গুজরাতে ভোট ঘোষণার ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার মানগঢ় ধামে আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন। অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেস নেতা অশোক গহলৌতও। গহলৌতকে কংগ্রেসের তরফে আগেই গুজরাতের ভোট দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী আদিবাসী ভোট কুড়োতে মানগঢ় যেতে পারেন আঁচ করে গহলৌত আগেভাগেই প্রধানমন্ত্রীকে দু’দফায় চিঠি লিখে দাবি করেছেন, মানগঢ় ধামকে ‘জাতীয় স্মারক’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী যদি মানগঢ়ে গিয়ে তা জাতীয় স্মারক হিসেবে ঘোষণা করেন, গহলৌত সেই কৃতিত্বে ভাগ বসানোর ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছেন। পাশাপাশি আগামী বছর রাজস্থান নির্বাচনেও আদিবাসী ভোটে মোদী ও গহলৌত, দু’জনেই নিজেদের রাশ আলগা করতে চাইছেন না।
কেন আদিবাসী ভোটের জন্য নরেন্দ্র মোদীকে গুজরাত থেকে রাজস্থান যেতে হচ্ছে?
রাজনীতিকরা বলছেন, পাঁচ বছর আগে গুজরাতের বিধানসভা ভোটই বিজেপিকে বিপাকে ফেলেছিল। গুজরাতের উত্তরের সবরকান্থা থেকে দক্ষিণের ডাং জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ২৭টি জনজাতি সংরক্ষিত বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মাত্র ৯টি আসন জিতেছিল। কংগ্রেস ও ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টি ১৭টি আসন জিতেছিল। এর ফলে বিজেপি ভোটে জিতলেও ১৮২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৯৯টির বেশি আসন জিততে পারেনি। এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আদিবাসী এলাকায় বিক্ষোভ চলছে। গুজরাত ছাড়াও আশেপাশের রাজ্যে আদিবাসী এলাকায় বিজেপি গত লোকসভা ভোটে খারাপ ফল করেছে। কংগ্রেসের দাবি, সেই কারণেই বিজেপি দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতির আসনে বসিয়েছে। এ বার প্রধানমন্ত্রী মানগঢ় ধামে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বক্তব্য, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সরকার আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণ করার পদক্ষেপ করেছে। বীরসা মুণ্ডার জন্মদিবস ১৫ নভেম্বরকে জনজাতি গৌরব দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশ জুড়ে আদিবাসী সংগ্রহশালা তৈরি হচ্ছে। তিনি মানগঢ়ে গিয়ে ‘মানগঢ় ধামের গৌরব গাথা’ জনসভায় অংশ নেবেন। ভিল নেতা গোবিন্দ গুরুকে শ্রদ্ধা জানাবেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ নিজের ‘মন কি বাত’-এও বীরসা মুণ্ডার জন্মদিবস পালনের কথা বলেছেন। রেডিয়ো বার্তায় তিনি গুজরাতের মোধেরার দুই বাসিন্দার সঙ্গেও কথা বলেন। মোধেরায় সম্প্রতি দেশের প্রথম সৌর গ্রাম উদ্বোধন হয়েছে। সৌর বিদ্যুৎ থেকে গ্রামে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। গ্রামের মানুষ ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে সৌর বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় করছেন। মোদী আজ গুজরাতে একই সঙ্গে ন্যাশনাল গেমস ও নবরাত্রির আয়োজনের জন্য গুজরাতিদের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন।