প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
কথা ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাজেটের পরে বণিকসভা সিআইআই-এর অনুষ্ঠানে গিয়ে বাজেটে উন্নত ভারতের লক্ষ্য পূরণে কী কী পদক্ষেপ হয়েছে, তা বোঝাবেন। কর্মসংস্থান তৈরিতে শিল্পমহল কী ভূমিকা নেবে, তার ব্যাখ্যা করবেন।
তার বদলে মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শিল্পমহলের সামনে ইউপিএ সরকারের জমানার সঙ্গে তাঁর গত দশ বছরের কাজের তুলনা তুলে ধরলেন। একই সুর শোনা গেল লোকসভায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট-বিতর্কের জবাবি বক্তৃতাতেও। বাজেটের ব্যাখ্যার বদলে অর্থমন্ত্রী আজ বেশির ভাগ সময় ব্যয় করলেন ইউপিএ সরকারের অর্থনীতির সঙ্গে মোদী সরকারের অর্থনীতির অবস্থা তুলনা করায়।
প্রধানমন্ত্রী শুধু ইউপিএ সরকারের দশ বছরের সময়কালের সঙ্গে তাঁর সরকারের গত দশ বছরের সময়কালের তুলনা করেই থামেননি। লোকসভা ভোটের আগে ইউপিএ আমলের অর্থনীতির হাল ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মোদী সরকার যে ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করেছিল, তা নিয়ে শিল্পমহলকে চর্চা করার অনুরোধ করেছেন। যা শুনে শিল্পমহলের অনেকেই বলেছেন, এখনও প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীরা লোকসভা ভোটের প্রচারের মেজাজেই রয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।
মোদী দাবি করেছেন, তাঁর সরকারের আমলে আর্থিক শৃঙ্খলা বিশ্বের কাছে ‘রোল মডেল’। কোভিডের গ্রাস থেকে উদ্ধার করে তিনি দেশের অর্থনীতিকে সবথেকে বেশি আর্থিক বৃদ্ধির অর্থনীতিতে পরিণত করেছেন। অর্থনীতি এখন ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। নিজেই দাবি করেছেন, এ বারের বাজেটে কর্মসংস্থানের জন্য যে প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজের ঘোষণা হয়েছে, সবাই তার প্রশংসা করছে। তা ছাড়া, বাজেটে এমন অনেক ঘোষণা হয়েছে, যা নিয়ে প্রচার হচ্ছে না।
কিন্তু এরপরেই প্রধানমন্ত্রী ইউপিএ আমলের পরিকাঠামো খরচ, রেলের বাজেটে বরাদ্দ, ছোট-মাঝারি শিল্পের হাল, কর্পোরেট করের হারের তুলনা করেছেন। একই ভাবে অর্থমন্ত্রী কর্মসংস্থান, কৃষকদের জন্য বরাদ্দ নিয়ে ইউপিএ সরকারের সঙ্গে মোদী সরকারের কাজের তুলনা করেছেন।
বাজেটের পরে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিলেন, বাজেটে শুধু বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কারণ, এনডিএ সরকার শরিক নির্ভর হয়ে পড়েছে। সীতারামন জবাবে বলেছেন, বাজেটে কারও নাম করা হয়নি বলেই যে সেই রাজ্যে টাকা যায়নি এমন নয়। ইউপিএ সরকারের দশ বছরের কোন বাজেটে কত রাজ্যের নাম করা হয়নি, তার তালিকা তুলে ধরেছেন তিনি। বিরোধীরা মুচকি হেসে বলেছেন, বাজেট নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ প্রচারের আলোয় বেশি আসায় প্রধানমন্ত্রী মোদী ও অর্থমন্ত্রী চাপে পড়ে গিয়েছেন। তৃতীয় দফার সরকারেও ইউপিএ সরকারের কাহিনি শোনাতে হচ্ছে।