বিহারে ৯টি হাইওয়ে প্রকল্পের সূচনা অনুষ্ঠানে ভিডিয়ো কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই
ভোটাভুটির দাবি অগ্রাহ্য করে ধ্বনিভোটে কৃষি বিল পাশ করানো হয়েছে। এমন অভিযোগে বিদ্ধ কেন্দ্রের শাসক দলের হয়ে ব্যাট ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। কৃষি বিলকে ‘ঐতিহাসিক ও প্রয়োজনীয়’ আখ্যা দিয়ে বিরোধীদের উদ্দেশে নরেন্দ্র মোদীর খোঁচা, কেউ কেউ নিজেরা নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন বলে কৃষকদের উস্কানি দিচ্ছেন। কৃষকরা বিলের সুবিধা পেলেও ইচ্ছে করে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছেন বিরোধীরা, আক্রমণ মোদীর।
উপলক্ষ ছিল ভোটমুখী বিহারে একসঙ্গে ন’টি হাইওয়ে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। ভিডিয়ো কনফারেন্সে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কৃষি বিলের পক্ষে সওয়াল করার মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘জুন মাসে অধ্যাদেশ জারি হওয়ার সময় থেকেই এই বিলের সুবিধে পাচ্ছেন কৃষকরা। নিজের পছন্দমতো ক্রেতার কাছে নিজেদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারছেন। অথচ বিরোধীরা বলছেন, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-এ সরকার আর কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনবে না।’’ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, এই বিলের সঙ্গে এমএসপি-র কোনও সম্পর্ক নেই।
রবিবার রাজ্যসভায় পাশ হয়েছে কৃষি সংক্রান্ত দু’টি বিল। এই নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে সংসদের উচ্চকক্ষে। বিরোধীদের নজিরবিহীন হইহট্টগোল চলতে থাকে, বিক্ষোভের জেরে সাময়িক ভাবে রাজ্যসভা টিভির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় চেয়ারে ছিলেন ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহ। ভেঙে দেওয়া হয় তাঁর সামনের তিনটি মাইক। রুল বুক ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে। তার জেরে আট সাংসদকে সাসপেন্ড করেছেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যা নেই। সেই কারণেই নিয়ম ভেঙে ভোটাভুটি না করে ধ্বনিভোটে পাশ করানো হয়েছে কৃষি বিল। সোমবারও দিনভর সংসদে তার রেশ ছিল। সংসদ ভবনের বাইরে ধর্নায় বসেছেন সাসপেন্ড আট সাংসদ-সহ বিরোধীরা। পাশাপাশি ডেপুটি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন বিরোধী দলের সাংসদরা। কিন্তু এ দিন সেই প্রস্তাব খারিজ হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘কালো রবিবার’, কৃষি বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়ে বললেন মমতা
সংসদে যখন এই পরিস্থিতি, প্রধানমন্ত্রী তখনও কৃষি বিলের পক্ষে খেলছেন। তিনি বলেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে প্রচুর ডাল উৎপাদন হয়। এই সব রাজ্যের কৃষকরা এই অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর ফসল বিক্রি করে গত বছরের তুলনায় ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি দাম পেয়েছেন ফসলের।’’ তাঁর আরও দাবি, এ বার থেকে কৃষকরা সরাসরি কৃষিভিত্তিক কারখানার মালিকপক্ষের কাছে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারবেন। যাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি দাম পাবেন, তাঁকেই বিক্রির স্বাধীনতা থাকবে তাঁদের কাছে।
আরও পড়ুন: রাজ্যসভায় সাসপেন্ড ডেরেক, দোলা-সহ ৮, বাইরে ধর্নায় বিরোধীরা
বিরোধীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর খোঁচা, ‘‘ঐতিহাসিক এই বিল পাশের জেরে কিছু ব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন হয়েছে যে কারও কারও হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ ফস্কে যাচ্ছে। এই শ্রেণির লোকজনই এমএসপি নিয়ে কৃষকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।’’ ২০০৪ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট সরকার গঠন করার পরেই কৃষকদের স্বার্থরক্ষা ও ফসলের দাম নিশ্চিত করতে সবুজ বিপ্লবের জনক এম এস স্বামীনাথনের নেতৃ্ত্বে একটি কমিশন গঠন করেছিল। সেই প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি মোদী। বলেন, কিছু মানুষ আছেন, বছরের পর বছর ধরে এখনও স্বামীনাথন কমিটির এমএসপি-র ধারণা নিয়েই বসে আছেন।’’