প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
গত বছর লোকসভা ভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ঢের আগেই বিজেপি থমকে যাওয়ায় কংগ্রেসের তরফে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিরোধিতা কিছুটা কমে আসে। কিন্তু তার পরে হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে বিরোধীদের ফল খারাপ হওয়ার পরে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছিল কংগ্রেস। গোটা প্রক্রিয়াটাই গলদে ভরা বলে দাবি করে তারা। বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন ইভিএমের ভূমিকা নিয়েও। দিল্লি নির্বাচনের মুখে দাঁড়িয়ে আজ নতুন বছরের প্রথম ‘মন কি বাত’-এর মঞ্চে তার বিরুদ্ধেই কার্যত জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কমিশনের ভূয়সী প্রশংসা করলেন তিনি। জানালেন, “নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক করতে দীর্ঘ সময় ধরেই একের পর এক প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে কমিশন। যা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। এতে আমাদের ভোট প্রক্রিয়া আরও উন্নত হয়েছে।”
আগামী ২৫ জানুয়ারি জাতীয় ভোটার দিবস। এই দিনেই গঠিত হয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সে কারণেই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও মজবুত এবং আধুনিক করার জন্য কমিশনকে ধন্যবাদ জানান মোদী। পাশাপাশি চলতি বছর দেশের সংবিধান কার্যকর হওয়ার ৭৫ বছর বছর পূর্ণ হচ্ছে। তাই এ বারের প্রজাতন্ত্র দিবস বিশেষ ভাবে স্মরণীয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ দিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় এক দিকে যেমন নির্বাচন কমিশনের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে, তেমনই কুম্ভমেলাকেও তুলে ধরে হিন্দুত্বের বার্তা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর বক্তৃতার একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রসঙ্গ। আগামী ২৩ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন। এ দিন সুভাষচন্দ্রের গোমো যাত্রার কথা মনে করিয়ে মোদী বলেন, “এক মুহূর্তের জন্য সেই দৃশ্যটি মনে করুন। জানুয়ারি মাসের কলকাতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন চরম পর্যায়ে। রাতের অন্ধকারে একটি লম্বা ঝুলের খয়েরি রঙা কোট, প্যান্ট এবং মাথায় কালো টুপি পরে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন এক জন। উঠে বসলেন গাড়িতে। কড়া পুলিশি নজরদারির বেশ কয়েকটি চেক পয়েন্ট পার করে গাড়িটি গিয়ে পৌঁছল গোমো রেল স্টেশনে।”
এখানেই না থেমে মোদী সুভাষচন্দ্রের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “নেতাজি আফগানিস্তান হয়ে ইউরোপে পৌঁছে যান। সেখান থেকেই ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই কাহিনি আপনাদের কাছে কোনও সিনেমার মতো মনে হতে পারে। তাঁর এই অসীম সাহসিকতার কথায় আপনারা হয়তো অবাক হচ্ছেন। এই ব্যক্তি আর কেউ নন, তিনি আমাদের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।” ২০২১ সাল থেকে সুভাষচন্দ্রকে শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছরই তাঁর জন্মদিনটিকে পরাক্রম দিবস হিসেবে পালন করে মোদী সরকার।
কুম্ভমেলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রয়াগরাজে ভক্তদের ভিড় দেখে আমি আপ্লুত। ভারতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী কোটি কোটি মানুষের কাছে এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। অসংখ্য মানুষের বিশ্বাস, ভক্তি ও সংস্কৃতির পবিত্র মেলবন্ধন হল মহাকুম্ভ। সবাইকে ধন্যবাদ জানাই এত বড় কর্মযজ্ঞে নিজেদের শামিল করার জন্য।”