প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই
সংবিধান দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, দেশের অগ্রগতির পিছনে মূল শক্তি দেশের সংবিধান। বিরোধীরা প্রশ্ন তুললেন, মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুক্রবার যে ২০০২-এ ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার কথা বলেছেন, তা কি সংবিধান সম্মত?
অমিত শাহ শুক্রবার গুজরাতের খেড়ায় প্রচারে গিয়ে ২০০২-এর গুজরাত দাঙ্গাকে হাতিয়ার করে বলেছিলেন, সে সময় ‘ওদের’ এমন শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল যে ‘ওরা’ হিংসার পথ থেকে সরে এসেছে। ফলে গুজরাতে ‘চিরস্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অমিত শাহ ‘ওরা’ বলতে ‘কংগ্রেসের মদতেপুষ্ট সমাজবিরোধীদের’ উল্লেখ করলেও রাজনৈতিক শিবির একমত যে শাহ আসলে সংখ্যালঘু মুসলিমদেরই নিশানা করেছেন।
বিজেপি যে গুজরাতের ভোটের আগে পুরোপুরি মেরুকরণের রাস্তা হাঁটতে চাইছে, তার প্রমাণ দিয়ে শাহ শনিবার ভাবনগরে প্রচারে বলেছেন, কংগ্রেসের জমানায় পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদীরা ভারতীয় সেনা জওয়ানদের হত্যা করলেও, কংগ্রেস ‘ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি’-র স্বার্থে তার নিন্দা করত না।
শাহ কংগ্রেস ও মুসলিমদের একই বন্ধনীতে নিয়ে এসে মেরুকরণের রাজনীতি করতে চাইছে বুঝে কংগ্রেসের নেতারা আজ সরাসরি শাহর মন্তব্যের জবাব দেননি। এমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, ‘‘ক্ষমতার নেশায় মত্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উচিত শিক্ষা দেওয়ার কথা বলেছেন। অমিত শাহ দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসায় কী শিক্ষা দিয়েছিলেন?’’ কংগ্রেস মনে করছে, বিজেপি ও ওয়াইসি মিলে মেরুকরণের রাজনীতিই করবে। তাতে বিজেপিরই সুবিধা হবে। তাই সে পথে না হেঁটে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেছেন, ‘‘বাস্তবের জমিতে বিজেপি-আরএসএসের একমাত্র নীতি হিংসা। তাদের একমাত্র লক্ষ্য দেশকে ধর্ম, জাতি, সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভাগ করা।’’
প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে সংবিধান দিবসে সুপ্রিম কোর্টের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। খড়্গে ও রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে মধ্যপ্রদেশের মহু-তে ভীমরাও অম্বেডকরের জন্মস্থানে পৌঁছেছেন। খড়্গে বলেন, ‘‘দেশের সংবিধানই এখন সঙ্কটে। কারণ আরএসএস রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানে শিকড় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। বিজেপির নির্বাচনে জয়কে তার মতাদর্শের স্বীকৃতি বলে দাবি করছে।’’
অমিত শাহর ‘উচিত শিক্ষা’-র মন্তব্য নিয়ে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য অনৈতিক।’’ ২০০২-এ গুজরাতের দাঙ্গায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল মনে করিয়ে দিয়ে ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিরীহ মানুষকে খুনের পক্ষে নির্লজ্জ যুক্তি দিচ্ছেন। নির্বাচনে মেরুকরণই এর লক্ষ্য। ২০০২-এ গুজরাতে যা হয়েছিল, তাকে মডেল হিসেবে তুলে ধরাটা এই সরকারের চরিত্র বলে দেয়।’’ শিবসেনার সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর প্রশ্ন, ‘‘২০০২-এর হিংসার সময় বিলকিস বানোকে ধর্ষণের অপরাধীদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়াটাও কি শিক্ষা দেওয়ার অংশ ছিল?”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যখন দেশের সংখ্যালঘুদের ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার বড়াই করার অভিযোগ উঠেছে, তখন প্রধানমন্ত্রী আজ সংবিধান দিবসের অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে উই দ্য পিপল লেখা হয়েছে, তা শুধু তিনটি শব্দ নয়। এটি প্রতিজ্ঞা, বিশ্বাস।’’ ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘সরকারের কাজ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ও আইনের শাসনকে রক্ষা করা। গণহত্যার হিংসার মাধ্যমে উচিত শিক্ষা দেওয়া নয়।’’ তাঁর মন্তব্য, নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানও এখনকার নিয়ম মাফিক নীরব দর্শক হয়ে থাকবে। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশের অভিযোগ, মোদী যতই ঘটা করে সংবিধান দিবস পালন করুন,আসলে আরএসএসের সংবিধান তৈরিতে কোনও ভূমিকা নেই। বরং আরএসএস সংবিধানের বিরোধিতা করেছিল। যে সংবিধান তিনি লঙ্ঘন করছেন, সেই সংবিধানকে সম্মান করেন বলে প্রমাণ করতেই মোদী ২৬ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হওয়ার দিনকে সংবিধান দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা দ্বিচারিতা ছাড়া কিছু নয়।