প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
স্যর, ৩-৪ মিনিট একটু অপেক্ষা করতে হবে।
ঘড়ির কাঁটায় দশটা বাজার আগেই অফিসাররা দেখেন, সামনে নরেন্দ্র মোদী। হতভম্ব হয়ে বললেন, রাষ্ট্রপতির ভোট শুরু হতে এখনও মিনিট চারেক বাকি। মোদীর জবাব, ‘‘অসুবিধা নেই। ছোটবেলায় স্কুলেও পৌঁছে যেতাম আগে।’’
এখানেই থামলেন না। সংসদ শুরুর পাঁচ মিনিট আগেই ঢুকলেন লোকসভায়। হাতজোড় করে সোজা বিরোধী বেঞ্চে। সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী থেকে মুলায়ম সিংহ যাদব, দেবগৌড়াকে শুভেচ্ছা। কিছু ক্ষণের আড্ডা। উঠে দাঁড়িয়ে নতুন সাংসদ ফারুক আবদুল্লা, মুসলিম লিগের কুনহালি কুট্টির সঙ্গেও কুশল বিনিময় করলেন। সকাল থেকে আত্মবিশ্বাসে দাপালেন গোটা সংসদ চত্বর। কিন্তু মুখে বিনয়। নবরূপে নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি ভোটে মোদীর প্রার্থীই যে জিততে চলেছেন— তা নিয়ে বিরোধীদেরও সন্দেহ নেই। আর যে ভাবে আজ গুজরাতের বিধায়ক অমিত শাহকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিলেন— শরীরী ভাষা বলছে টগবগ করে ফুটছেন প্রধানমন্ত্রী। সামনে কয়েকটি রাজ্যের ভোট। দু’বছরের মাথায় লোকসভা। রাষ্ট্রপতি-উপরাষ্ট্রপতি ভোটে নিশ্চিত জয়কে পুঁজি করে তার ভিত গড়তে চাইছেন মোদী।
আরও পড়ুন:ক্রস ভোটে পাল্লা ভারী কোবিন্দের
কিন্তু মুখে বলছেন সহমতের কথা। বিরোধীদের থেকে আক্রমণ ধেয়ে আসবে বলে গত কালই সর্বদল বৈঠকে গণপিটুনি থেকে দুর্নীতি— সব বিষয়ই ছুঁয়ে গিয়েছেন আগেভাগে। আজ বাদল অধিবেশনের শুরুতে কৃষকদের ‘প্রণাম’ করে সংসদে পা দিলেন মোদী। আর বারবার স্মরণ করালেন জিএসটির কথা। বললেন, ‘‘রাষ্ট্রহিতে সব দল হাত ধরলে দেশের কতই না উন্নয়ন সম্ভব।’’ জিএসটি নিয়ে তাঁর নতুন পরিভাষা, ‘গ্রোয়িং স্ট্রংগার টুগেদার’।
আর বিরোধীরা বলছেন, এ সবই তো মোদীর কৌশল। সিবিআই, ইডিকে দিয়ে বিরোধীদের ছত্রভঙ্গ করতে চাইছেন। তাই এখন সময় আরও একজোট হওয়ার। রাষ্ট্রপতি ভোটকে ঘিরে একমঞ্চে আসা বিরোধীদের আরও সংগঠিত করা জরুরি। কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি-উপরাষ্ট্রপতি ভোটে সংখ্যা যে পক্ষে নেই, সে তো সনিয়া গাঁধী নিজেই বলেছেন। কিন্তু এটা বিচারধারার লড়াই। ৩ বছর আগে ২৮২ সাংসদের দম আর নেই মোদীর। গণপিটুনি, কৃষক আত্মহত্যা, সীমান্ত-উত্তাপে এখন তা ফিকে। তাই তিনি নমনীয়।’’
বিরোধীরা জানাচ্ছে, কালই মন্দসৌর থেকে কৃষকরা আসছেন যন্তর-মন্তরে। সে জন্যই মোদীর মুখে কৃষক-প্রণাম। বিরোধীরা কালই কৃষকদের দুরাবস্থা নিয়ে হল্লা করবে সংসদে। তৃণমূল চায় সব কাজ বন্ধ করে চিন নিয়ে আলোচনা। কংগ্রেস সরব হবে সংখ্যালঘু-দলিত নিগ্রহ, গোরক্ষকদের তাণ্ডব নিয়ে।