গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে জুড়ে গেল চেন্নাই-পোর্ট ব্লেয়ার। প্রায় ২৩০০ কিলোমিটার ‘সাবমেরিন অপটিক্যাল ফাইবার কেবল’ বা ওএফসি লিঙ্কের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সমুদ্রের নীচ দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নিয়ে যাওয়ার এই ধরনের প্রকল্পে এটাই দেশের মধ্যে প্রথম। ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্প চালু করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আন্দামান-নিকোবরবাসীর জন্য প্রাক-স্বাধীনতা দিবসের উপহার। কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলের জন্য এটা বিরাট দিন বলেও মন্তব্য করেন মোদী। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এই প্রকল্প কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গোটা দেশ ইন্টারনেট বিপ্লবের সুফল ভোগ করলেও পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এই দ্বীপ রাজ্য এত দিন কার্যত সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিতই ছিল। সোমবার সকালে ভিডিয়ো কনফারেন্সে এই প্রকল্পের সূচনার পরেই কার্যত ইন্টারনেট ক্ষেত্রে গোটা দেশের সঙ্গে জুড়ে গেল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। প্রকল্পের সূচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের মতো অতিমারিও কাজের গতি কমাতে পারেনি এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই এই কাজ শেষ হয়েছে। আন্দামান-নিকোবরের বাসিন্দাদের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা দেশবাসীর দায়িত্ব। এটা স্বাধীনতার আগে আন্দামানবাসীর জন্য উপহার।’’
ছোট বড় মিলিয়ে ১২টির মতো দ্বীপ নিয়ে গঠিত আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। কিন্তু এই দ্বীপগুলিতে ইন্টারনেট পরিষেবা তেমন নেই বললেই চলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, টুজি পরিষেবা রয়েছে। কিন্তু সেটাও খুব কম সময়ের জন্য পাওয়া যায়। তবে বিএসএনএল-এর দ্রুতগতির ওয়াইফাই পরিষেবা রয়েছে। কিন্তু তার খরচ আকাশছোঁয়া।, কার্যত তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। দ্বীপ রাজ্যের বাসিন্দারা বলছেন, এই পরিষেবা চালু হলে এক দিকে খরচ যেমন কমবে, তেমনই হাই স্পিড ইন্টারনেট পরিষেবাও পাওয়া যাবে দেশের অন্য সব জায়গার মতো।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে বললে, বর্তমানে আন্দামানে ইন্টারনেটের গতি ছিল সেকেন্ডে ৩৫৪৮ জিবি। এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর এখন সেই গতিবেগ প্রায় ৬০ গুণ বেড়ে যাচ্ছে। যে অপটিক্যাল ফাইবার পাতা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ৪ জোড়া কেবল। এক একটি কেবল ৬.৪ টেরা বাইট ডেটা ট্রান্সফার করতে পারবে প্রতি সেকেন্ডে। প্রাথমিক ভাবে পোর্ট-ব্লেয়ারের বাসিন্দারা সেকেন্ডে ৪০০ গিগাবাইট স্পিডে ইন্টারনেট ডেটা পাবেন।
২০১৮ সালে এই প্রকল্পের সূচনাও নরেন্দ্র মোদীর হাতেই। দু’বছরের মধ্যে সেই প্রকল্প শেষ করল বিএসএনএল। প্রথম পর্যায়ে মূল প্রকল্পে চেন্নাই ও পোর্টব্লেয়ারের মধ্যে ১৪৬১ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা হল। এর পর ধাপে ধাপে রঙ্গত, লং আইল্যান্ড, স্বরাজ দ্বীপ, হাট বে, কার নিকোবর, কামোর্তা ও ক্যাম্পবেল বে-র মধ্যেও যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। তখন অন্যান্য দ্বীপগুলিতেও হাইস্পিড ইন্টারনেট পাওয়া যাবে।
শুধু ইন্টারনেটই নয়, প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই দ্বীপগুলির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা-সহ অন্যান্য পরিকাঠামোর উন্নয়নেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাতে নেওয়া হয়েছে একাধিক প্রকল্প। মোদী বলেন, ‘‘১২টি দ্বীপের মধ্যে বহুমুখী অনেক প্রকল্পের প্রসার হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল ও ইন্টারনেটের সমস্যার আজ সমাধান হল। এ ছাড়া সড়ক, আকাশ ও জলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে আমরা কাজ করছি। যে কোনও পর্যটনকেন্দ্রে দ্রুতগতির ইন্টারনেট অন্যতম চাহিদা। সেই সমস্যার আজ সমাধান হল।’’
প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও যে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বোঝাতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাজার হাজার বছর ধরে দেশের বাণিজ্য ও শক্তির ক্ষেত্রে ভারত মহাসাগর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়ে আসছে। এখন যেহেতু ভারত বৈদেশিক বাণিজ্য ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইন্দো্-প্যাসিফিক অঞ্চলকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তাই আন্দামান নিকোবরের গুরুত্বও অনেক বেড়ে গিয়েছে। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে ভারতের যে ক্রমবর্ধমান দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে, তাতে আন্দামান-নিকোবরের ভুমিকা অত্যন্ত শক্তিশালী।’’