এই জুতোই দেওয়া হয়েছে বলে ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়
কৃষি আন্দোলনের জেরে দেশের খেতজমিতে প্রবল কেন্দ্র-বিরোধী অসন্তোষ। কোভিড সংক্রমণের পরই ফেরার সময় না দিয়ে লকডাউন ঘোষণায় যোজন পথ হেঁটে নিজ রাজ্যে ফেরার চেষ্টা করেছেন ত্রস্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা। ঘটেছে জামলো মাকদমের মতো শিশু শ্রমিকের ট্র্যাজেডি।
অথচ, ‘ওরা মাঠে মাঠে বীজ বোনে, পাকা ধান কাটে ওরা কাজ করে নগরে প্রান্তরে..।’ তা হলে উপায়? পাঁচ রাজ্যের ভোটধ্বনি তো শোনা যাচ্ছে। রাজ্যের ‘সেমিফাইনাল’ শেষ হলেই চব্বিশের মহারণ, লোকসভা ভোট। যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের তো বার্তা দিতেই হবে। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, গত এক মাসে নির্মাণ শ্রমিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ‘সহৃদয়তার’ ছবি তুলে ধরাই এখন নির্বাচনের আগে অগ্রাধিকার বিজেপি-র।
গত ১৩ ডিসেম্বর নির্মাণ কর্মীদের পাশেই সিঁড়িতে বসে পড়ে মোদী বার্তা দিয়েছিলেন ‘আমি তোমাদেরই লোক’। এ বার ১০০ জোড়া পাটের পাদুকা তিনি উপহার দিলেন কাশী বিশ্বনাথ করিডরের নগ্নপদে কাজ করা কর্মীদের। মন্দিরে চামড়া বা রবারের জুতো পরে ঢোকা বারণ। প্রবল ঠান্ডায় তাঁরা খালি পায়ে কাজ করেছেন ৩৩৯ কোটি টাকার কাশী বিশ্বনাথ করিডর প্রকল্পে। প্রথম দফায় উদ্বোধনে আসার পর এই খবর পান প্রধানমন্ত্রী। শুধু নির্মাণ কর্মীরাই নন। যাঁরা পুজারি, নিত্যসেবা করেন, নিরাপত্তা কর্মী, সাফাই কর্মী — ঠান্ডা চাতালে পড়েছে সবারই আবরণহীন পা। আর তাই দিল্লি ফিরে গিয়েই একশো জোড়া পাটের জুতো পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। চাতালের উপর একশো জোড়া সুন্দর নকশার সেই চটিগুলির ছবিও প্রকাশ হয়েছে।
গত মাসে কাশী বিশ্বনাথ করিডোরের প্রথম ধাপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানেও দেখা গিয়েছে করতালির মধ্যে হলে প্রবেশ করছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাঁর সঙ্গে নির্মাণকর্মীদের গ্রুপ ফটো তোলার কথা। নির্মাণকর্মীরা সকলে লাল গালিচায় মোড়া সিঁড়িতে ধাপে ধাপে বসে আছেন। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রীর বসার জন্য রয়েছে একটি প্লাস্টিকের উপর গদি আঁটা চেয়ার। নিজেই চেয়ার সরিয়ে সিঁড়িতেই বসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইশারায় তাঁর পাশে বসতে বলেছেন নির্মাণকর্মীদের। তাঁদের ফুল দিয়েছেন। এর পর করিডর উদ্বোধনের পর নির্মাণ কর্মীদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজন করেন প্রধানমন্ত্রী। মুহূর্তে এ সব ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
রাজনৈতিক শিবির বলছে, এ তো নতুন নয়। উনিশের লোকসভা ভোটের ঠিক আগে ইলাহাবাদের মহাকুম্ভে এ ভাবেই মানবসেবায় নিয়োজিত নরেন্দ্র মোদীকে দেখেছে ভারত। সে বার কুম্ভে ঝাড়ু আবর্জনা সাফাইয়ের কাজে নিযুক্ত পাঁচ সাফাই কর্মীর পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন মোদী। ছিল নতুন পাত্রে রাখা জল, নতুন তোয়ালে। পুরোটাই সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল দূরদর্শনে।
‘শত শত সাম্রাজ্যের ভগ্নশেষ-’পরে’ যাঁরা কাজ করে যান, ভোট এলে তাঁরা এ ভাবে দামি হয়ে ওঠেন বলেই মত সংশ্লিষ্ট শিবিরের।