প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
আতঙ্কের আবহে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ উপদ্রুত ডোডায় দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদীর বার্তা, সন্ত্রাসবাদ এখন জম্মু-কাশ্মীরে শেষ নিঃশ্বাস নিচ্ছে। পাশাপাশি আজ নাম না করে রাহুল গান্ধীর তীব্র সমালোচনা করেন মোদী। রাহুল প্রায়ই দাবি করেন, তিনি ‘মহব্বত কি দুকান’ (ভালবাসার দোকান) খুলছেন। আজ মোদী বলেন, এরা আসলে নফরতের (ঘৃণার) দোকানে মহব্বতের বোর্ড লাগিয়ে ঘুরছেন।
আজ নির্বাচনী প্রচারে এসে এমন সময়ে মোদী সন্ত্রাস-বিরোধী বার্তা দিলেন, যখন ডোডা সংলগ্ন কিস্তওয়ারে জঙ্গি হামলায় মারা গিয়েছেন দুই সেনা। জম্মুর কাঠুয়া ও উত্তর কাশ্মীরের বারামুলায় নিহত হয়েছে পাঁচ জঙ্গি। জঙ্গিদের খোঁজে আজও অভিযান জারি রয়েছে ডোডা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পরপরই জঙ্গি উপদ্রব কমে এলেও, গত ছ’-আট মাসে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উপত্যকার বিস্তীর্ণ অংশ। সরকারের চিন্তা বাড়িয়ে জঙ্গি আক্রমণের পরিধি উপত্যকার গন্ডি ছাড়িয়ে নেমে আসছে জম্মুর দিকে। যার মোকাবিলা করা সরকারের কাছে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ।
যদিও মোদীর দাবি, সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পরে জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি আমূল পাল্টে গিয়েছে। উপত্যকা আগের থেকে অনেক শান্ত। সেই বার্তা দিতে কিস্তওয়ার কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছে বিজেপি নেত্রী শগুন পরিহারকে। ২০১৮ সালে শগুনের বাবা-কাকাকে বেছে বেছে গুলি করে মেরেছিল জঙ্গিরা। স্থানীয় বিজেপি নেতা আরিয়ানের কথায়, ‘‘পরিস্থিতি যে এখন স্বাভাবিক সেই বার্তা দিতেই শগুনকে প্রার্থী করা হয়েছে। শগুন একে মহিলা তায় জঙ্গিদের হাতে নিহত পরিবারের মেয়ে।’’ আজ চন্দ্রভাগা (চেনাব) উপত্যকার ডোডার তিন, কিস্তওয়ারের তিন ও বানিহালের দুই, মোট আট প্রার্থীর সমর্থনে সভা করেন মোদী। তিনি বলেন, শগুন তাঁর মেয়ের মতো। রাজনীতিকদের মতে, কৌশলে জাতীয়তাবাদকেও উস্কে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ একাধিক বার রাহুল গান্ধীর নাম না করে সমালোচনা করেন মোদী। কাশ্মীরের বর্তমান সমস্যার জন্য মূলত জাতীয় দল কংগ্রেস এবং উপত্যকার দুই আঞ্চলিক দল এনসি ও পিডিপি-র পরিবারতান্ত্রিক নীতিকেই দায়ী করেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাধীনতার পরেই বিদেশি শক্তির হামলার শিকার হয়েছে কাশ্মীর। তার পরে পরিবারতন্ত্রের শিকার। তিনটি পরিবার অবিরত কাশ্মীরকে শোষণ করেছে। তিন পরিবারের বাইরে কোনও নেতাকে উঠে আসতে দেওয়া হয়নি। তাই এ বারের লড়াই তিনটি পরিবার বনাম উপত্যকার তরুণদের।’’
আজ তুলমামূলক ভাবে এনসি ও কংগ্রেস জোটকে লক্ষ্য করে বেশি আক্রমণ শানাতে দেখা গিয়েছে মোদীকে। উপত্যকায় নানা সূত্রে পাওয়া খবর থেকে রাজনীতিকদের ধারণা, কংগ্রেস ও এনসি জোট উপত্যকায় সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। সম্ভবত সেই কারণেই আজ ওই জোটকে আক্রমণের নিশানা করেছিলেন মোদী। তাঁর কথায়, এনসি-র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলে কাশ্মীর অতীতে ফিরে যাবে। যখন স্কুলে আগুন দেওয়া ও পাথর নিক্ষেপ করা ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। কংগ্রেস–এনসির লক্ষ্য হল ৩৭০ অনুচ্ছেদ ফের কার্যকর করা। তাঁর কথায়, ‘‘এর আসল লক্ষ্য হল পাহাড়িদের সংরক্ষণ ছিনিয়ে নেওয়া। এদের ঘোষণাপত্র বাস্তবায়িত হলে ফের কাশ্মীরে আগুন জ্বলবে। কার্ফু থাকবে বছর ভর। এরা আসলে নফরতের দোকানে মহব্বতের বোর্ড লাগিয়ে ঘোরে।’’
লোকসভা ভোটের পরে সংসদে শপথ গ্রহণের সময়ে রাহুল গান্ধী-সহ একাধিক বিরোধী সাংসদকে হাতে সংবিধান নিয়ে শপথ নিতে দেখা যায়। বিজেপি সংবিধানকে ধ্বংস করছে এই বার্তা দিতেই ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বিরোধীরা। আজ সেই বিষয়টি নিয়ে রাহুলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মোদী। তিনি বলেন,‘‘আজকাল বিরোধীরা তাঁদের পকেটে সংবিধান রাখেন। তাঁরা আসলে তাঁদের অপকর্ম লুকনোর জন্য এমন করে থাকেন। আসলে এঁরাই সংবিধানের আত্মাকে অপমান করে থাকেন।’’ মোদীর প্রশ্ন, কেন জম্মু-কাশ্মীরে দীর্ঘ দিন দু’টি সংবিধান চালু ছিল? কেন জম্মু-কাশ্মীরে পাহাড়ি, তফসিলি জাতি,জনজাতি, পাহাড়িরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম সংরক্ষণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন? তাঁর দাবি, ‘‘সংরক্ষণ পকেটে নিয়ে যারা ঘোরে সেই দল ক্ষমতায় এলে সবার আগে পণ্ডিতদের সংরক্ষণ কেড়ে নেওয়া হবে। পাহাড়ি ও গুর্জ্জর সমাজকে যে সংরক্ষণের সুবিধে দেওয়া হয়েছে তা বাতিল করা হবে। যারা সংরক্ষণ নিয়ে দেশ জুড়ে সরব তারা এনসি-র এই সংরক্ষণ কেড়ে নেওয়ার প্রশ্নে নীরব কেন!’’