প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
খাদিকে কেন্দ্র করে সুনিপুণ ভাবে বোনা হল হল গুজরাতের আসন্ন ভোটের প্রচার। প্রধানমন্ত্রীর দু’দিনব্যাপী গুজরাত সফরের প্রথম দিনে নির্ধারিত অনুষ্ঠান ‘খাদি উৎসব’-এর পর এমনই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। সাবরমতী নদীর ধারে আজ নরেন্দ্র মোদী চরকা কাটলেন। তাঁর সামনে বসে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সাড়ে সাত হাজার মহিলা খাদি শিল্পীও চরকা কাটলেন।
১৯২০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত খাদির বিবর্তনের সাক্ষ্য হিসাবে বিভিন্ন প্রজন্মের ২২টি চরকার প্রদর্শনী হল এ দিনের অনুষ্ঠানে। এর পর তাঁর বক্তৃতায় মোদী বিস্তারিত ভাবে দাবি করলেন, দেশপ্রেম, স্বরাজ এবং দেশগৌরবের সঙ্গে খাদিকে কী ভাবে তাঁর জমানায় সংযুক্ত করা হয়েছে। মোদীর কথায়, খাদি উৎসব আসলে ইতিহাসকে পুর্নজীবিত করার উৎসব। ২০১৪ সালে তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই শিল্পের শুধু চার গুণ বৃদ্ধিই ঘটেনি, বিদেশেও খাদিকে ছড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে সফল ভাবে। গত আট বছরে (অর্থাৎ মোদী জমানায়) খাদির ব্যবসা ছাড়িয়ে গিয়েছে ১ লক্ষ কোটি টাকা। এই সময়কালে এক কোটি ৭৬ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই শিল্পে। আর এই সব কিছুর পথপ্রদর্শক হিসাবে তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের কালপর্বের জয়গান করেছেন প্রধানমন্ত্রী। নাম না-করে কংগ্রেস সরকারকে আক্রমণ করে আজ মোদীর বক্তব্য, তিনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে খাদির প্রসারে যা করার চেষ্টা করেছেন, তা নিয়ে হাসাহাসি হয়, অপমান করা হয়।
স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের সঙ্গে আজ খাদিশিল্পকে যোগ করেছেন মোদী। সেই সঙ্গে সাবরমতী নদীর উপরে ফুটব্রিজ, ‘অটল সেতু’-র উদ্বোধন করেছেন। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, গুজরাতের নির্বাচনে মোদীর অন্যতম তাস যে দেশপ্রেম, তা কোনও ভাবেই আর প্রচ্ছন্ন নেই। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সময়কে এর আগেও নানা ভাবে ঊহ্য রেখে তিনি গান্ধীর দর্শনের সঙ্গে নিজেকে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত দেখিয়েছেন। আজ অক্লেশে স্বরাজের ডাকও দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। মোদীর বক্তব্য, “দূরদর্শনে ‘স্বরাজ’ নামের একটি সিরিয়াল শুরু হয়েছে। আজকের নবীন প্রজন্মকে অনুরোধ, গোটা পরিবারকে নিয়ে তাঁরা এই সিরিয়ালটি রবিবার করে দেখুন। বিভিন্ন প্রান্তে কত মানুষ দেশের জন্য আত্মবলিদান দিয়েছেন তা বিস্তারিত বলা হচ্ছে এখানে। আগের প্রজন্ম দেশের জন্য কী করেছে দেখুন। দেশে রাষ্ট্রভক্তি, রাষ্ট্রচেতনা যেন বাড়ে।”
বিরোধীরা এর আগে বারবার অভিযোগ তুলেছেন যে, মোদী সরকার নিজেদের মতো করে ইতিহাস তৈরি করতে চাইছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একটা অংশের বক্তব্য, ইতিহাস বদলানো এক বিষয়। কিন্তু বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব সুকৌশলে যেটা করছেন, তা হল স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসকে আত্মসাৎ করে নেওয়া। অমৃত মহোৎসবের যে আবেগ তৈরি করা হয়েছে, তাতে নবীন প্রজন্মের মনে হতে বাধ্য স্বাধীনতার লড়াইয়ে সরাসরি যুক্ত ছিল মোদী এবং তাঁর দল। আজ মোদী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “গুজরাতে যে ভাবে গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে তেরঙ্গা নিয়ে উৎসাহ-আনন্দ দেখেছি, যে রাষ্ট্রভক্তি বিকশিত হতে দেখেছি, তা ভারতের সংকল্প। খাদি উদ্যোগেও স্বাধীনতার ছাপ লেগে আছে। এই খাদি গোলামির দেওয়াল ভেঙে দিয়েছে।”