‘ভাই-ভাতিজাবাদ’কে তীব্র আক্রমণ প্রধানমন্ত্রীর। ছবি— পিটিআই।
ভারতের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণে পরিবারতন্ত্রের কথা আলাদা করে তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশে পরিবারতন্ত্রের দাপট যে আর রাজনীতির গণ্ডিতে আবদ্ধ নেই, তা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তীব্র আক্রমণ করলেন ‘ভাই-ভাতিজাবাদ’কে। স্পষ্ট জানালেন, বাবা-মা কিংবা পরিবারের কল্যাণে নয়, উৎকর্ষের স্বীকৃতিই আধুনিক ভারতের মূল ভিত্তি হবে।
লালকেল্লার ‘র্যামপার্ট’ থেকে প্রধানমন্ত্রী কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন ভারতের পরিবারবাদী মানসিকতাকে। তিনি বলেন, ‘‘যখন আমি ভাই-ভাতিজাবাদ এবং পরিবারতন্ত্রের কথা বলি তখন মানুষ মনে করেন আমি কেবল রাজনীতির কথাই বলছি। কিন্তু না। দুর্ভাগ্যক্রমে রাজনীতির জগতের এই খারাপ জিনিসটি ভারতের প্রতিটি সংস্থায় পরিবারতন্ত্রকে জল-হাওয়া দিয়েছে। যত ক্ষণ না দুর্নীতি এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রতি ঘৃণার ভাব তৈরি হচ্ছে, সামাজিক ভাবে তাকে ঘৃণ্য বলে ভাবতে বাধ্য না হচ্ছি, তত ক্ষণ এই মানসিকতা শেষ হবে না।’’ দেশের প্রধানমন্ত্রীর মতে, তা যে কোনও সংস্থার এগিয়ে চলার পথে একান্ত আবশ্যক।
এর পরেই মোদী সরাসরি চলে আসেন রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের দাপট প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতিতেও পরিবারতন্ত্রের ফলে প্রচুর লোকসান হয়েছে। পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি পরিবারের জন্যই করা হয়, এর সঙ্গে দেশের কোনও দেওয়ানেওয়া নেই।’’ তার পরেই দেশবাসীর কাছে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, ‘‘আসুন, ভারতের রাজনীতির শুদ্ধকরণ, ভারতের প্রতিটি সংস্থার শুদ্ধকরণের জন্য যোগ্যতাকেই মানদণ্ড ধরে এগোনোর প্রয়াস নিতে শুরু করি।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, মোদীর এই মন্তব্যের আসল নিশানা সদ্য বিহারে ক্ষমতায় আসা আরজেডি। যেখানে নীতীশ কুমার বিজেপিকে ত্যাগ করে লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বীর হাত ধরেছেন। ঘটনাচক্রে, নীতীশ ভাই (বাংলায় বড় দাদা) বলে সম্বোধন করেন লালুকে। সেই অনুযায়ী তেজস্বী নীতীশের ভাতিজা (বাংলায় ভাইপো) হন।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে বার বার পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন মোদী-সহ বিজেপি নেতৃত্ব। ২০২১-এ বাংলায় বিধানসভা ভোটের সময় মমতা ও অভিষেককে আক্রমণ করতে গিয়ে ‘বুয়া-ভাতিজা’ শব্দবদ্ধ ব্যবহার করেছিল বিজেপি। একই শব্দবন্ধ দিয়ে উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী-অখিলেশকেও আক্রমণ করেছিল গেরুয়া শিবির। তবে সম্ভবত এই প্রথম, রাজনীতি জগতের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও পরিবারতন্ত্রের দাপট নিয়ে সরব হলেন মোদী। তা-ও আবার একেবারে লালকেল্লার ‘র্যামপার্ট’ থেকে। তাতে ভিন্ন রাজনৈতিক তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছেন পর্যবেক্ষকেরা।