(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জেপি নড্ডা (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
মহারাষ্ট্র জয়ের পরে বিজয়ী ভাষণের ছত্রে ছত্রে কংগ্রেসকেই বিঁধলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কখনও বললেন, ‘‘মিথ্যার পরাজয় হয়েছে।’’ কখনও, ‘‘হেরে গিয়েছে পরিবারতন্ত্র।’’ কখনও আবার, কংগ্রেসের সমালোচনাকে হাতিয়ার করেই বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য় ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করলেন তিনি। দেশবাসীকে বার্তা দেওয়ার ছলে যেন দিল্লির আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে পরোক্ষে বার্তা দিলেন আম আদমি পার্টিকেই!
এই নিয়ে তৃতীয় বার। মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র। কংগ্রেস-সহ ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’র তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছে বিজেপি একাই। নির্বাচনের ফল নিয়ে শনিবার বিকেলেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন মোদী। বলেছিলেন, এনডিএ-র এই জয় ‘ঐতিহাসিক’। শনিবার রাতে দিল্লিতে বিজেপির প্রধান কার্যালয় থেকে ভাষণ দেওয়ার মুহূর্তেও মোদীর গলায় ছিল একই সুর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্রে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। আর যাঁরা তোষণের রাজনীতির পিছনে দৌড়য়, তাদের স্বরূপ চিনে ফেলেছে মানুষ। বিজেপির সুশাসনের উপর আস্থা রয়েছে জনতার। বিধানসভা নির্বাচনে সেটাই দেখিয়ে দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের জনতা-জনার্দন! এ নিঃসন্দেহে বিজেপির ঐতিহাসিক জয়।’’ এর পরেই ফের উচ্চারণ করেন সেই চেনা স্লোগান, ‘‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায় (ঐক্যবদ্ধ থাকলেই নিরাপদে থাকা যাবে)!’’ উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রে ভোটপ্রচার পর্বেও মোদীর মুখে শোনা গিয়েছিল এই স্লোগান। ‘ঐক্যবদ্ধ’ থাকার সেই জাদুমন্ত্রেই বাজিমাত হয়েছে বিজেপির।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দিল্লিতে দলের প্রধান কার্যালয়ে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল মোদীর। কিন্তু রাত ৮টারও পরে মঞ্চে ওঠেন তিনি। অপেক্ষারত জনতার সামনে প্রথমে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন। নড্ডার বক্তৃতা শেষে ৮টা ২২ মিনিট নাগাদ ‘জয় ভবানী’ বলে ভাষণ শুরু করেন মোদী। যখন ভাষণ শেষ হয়, তখন রাত ৯টা বেজে ১০। প্রায় ৫০ মিনিটের ভাষণের ছত্রে ছত্রে বিরোধীদের নিশানা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মহারাষ্ট্রে বিজেপির জয় প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘সুশাসনের জয় হয়েছে।’’ বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের জন্যই ভরাডুবি হয়েছে মহাবিকাশ আঘাড়ীর।’’ অথচ সন্তর্পণে এড়িয়ে গিয়েছেন ঝাড়খণ্ড-প্রসঙ্গ! সেখানে কংগ্রেস-সহ ‘মহাগঠবন্ধন’-এর জয় নিয়ে বেশি বাক্য খরচ করেননি। শুধু আশ্বাস দিয়েছেন, ঝাড়খণ্ডের উন্নয়নের জন্য আরও পরিশ্রম করবে তাঁর দল।
লোকসভা নির্বাচনের ছ’মাসের মাথায় চলতি মাসেই মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোট হয়েছে। শনিবার ভোটগণনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। মহারাষ্ট্রে মূল লড়াই ছিল বিজেপি-শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে)-এনসিপি (অজিত)-র ‘মহাজুটি’ এবং কংগ্রেস-শিবসেনা (ইউবিটি)-এনসিপি (শরদ)-র ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’র মধ্যে। মহারাষ্ট্রে মোট আসনের সংখ্যা ২৮৮। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ১৪৫। সেখানে ২৩৩টি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন ‘মহাজুটি’। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’ জিতেছে ৪৯টি আসনে। অন্য দিকে, ৮১ সদস্যের ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৪১টি আসন। সেখানে মূল লড়াই ছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র সঙ্গে ক্ষমতাসীন জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি-সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর ‘মহাগঠবন্ধন’-এর। ঝাড়খণ্ডে ৫৫টি আসনে জয়ী জেএমএম নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থীরা। এনডিএ ঝাড়খণ্ডে ২৫টি আসন জিতেছে।