প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
বিমস্টেক-ভুক্ত (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টোরাল টেকনিকাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন) সাতটি দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার কলম্বোতে আয়োজিত বিমস্টেক-এর বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়ে গিয়েছে। বুধবার বিমস্টেকভুক্ত রাষ্ট্রগুলির নেতাদের সঙ্গে ভিডিয়ো মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন মোদী। সাতটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ বাড়ানো এবং সামগ্রিক সহযোগিতার লক্ষ্যে একটি সনদ তৈরি করল বিমস্টেক। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “আজ আমরা একটি সনদ প্রস্তুত করেছি। বিমস্টেককে একটি প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দেওয়ার পথে এটা প্রথম ধাপ।” এই সনদ অনুসারে সদস্য দেশের নেতারা প্রতি দু’বছরে একবার করে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করবেন।
আজ তাঁর বক্তৃতায় ইউক্রেন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মোদী বলেন, “গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউরোপে যে ঘটনা ঘটে চলেছে, তাতে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিমস্টেক-এর আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গোটা বিষয়টিকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়াটা এখন খুবই জরুরি।”
প্রধানমন্ত্রীর এই আঞ্চলিক নকশার বাইরে রয়েছে চিন এবং পাকিস্তান। আর সে কারণেই সার্ক নয়, বিমস্টেক-এর উপর বেশি নজর দিতে চাইছে নয়াদিল্লি। ইউরোপ এবং আমেরিকার সঙ্গে চিন ও রাশিয়ার সংঘাতের নতুন ভূকৌশলগত পরিস্থিতির মধ্যে নিজেদের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত নিরাপত্তা মজবুত করাটা অগ্রাধিকার ভারতের। ভারত ছাড়া এই গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র হল বাংলাদেশ, ভুটান, মায়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও তাইল্যান্ড। অর্থাৎ একমাত্র তাইল্যান্ড বাদ দিলে সমস্ত দেশগুলিই ভারতের ঘরের পাশের প্রতিবেশী। মোদীর ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির সঙ্গে বিমস্টেকের আঞ্চলিক সহযোগিতার সংযোগ রয়েছে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “আজ আমাদের এই অঞ্চল স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রশ্নে চ্যালেঞ্জের মুখে। এই মুহূর্তে একে অন্যের পাশে দাঁড়ানো খুবই জরুরি। এখন সময় এসেছে বঙ্গোপসাগরে সংযোগ, সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার সেতু রচনার।” আঞ্চলিক সংযোগের প্রসঙ্গে মোদী সদস্য দেশগুলির মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাবও দিয়েছেন তাঁর বক্তৃতায়। সেই সঙ্গে সমুদ্র পথে বাণিজ্য বাড়ানোর ব্যবস্থা করার কথাও বলেছেন। বিদেশমন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট কর্তা যুগ্ম সচিব রুদ্রেন্দ্র ট্যান্টন বলেন, “এই সনদপত্রটিতে সই হওয়াটাই এবারের বিমস্টেক সম্মেলনের সবচেয়ে বড় পাওনা। এই সনদপত্রটি তৈরি হওয়ার পর বিমস্টেক-এর আন্তর্জাতিক পরিচয় তৈরি হল। তার প্রতীক হল, পতাকা হল, সব থেকে বড় কথা আনুষ্ঠানিক নীতি নির্দেশিকা তৈরি হল।” বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, বিমস্টেক-এর সচিবালয়ের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভারতের পক্ষ থেকে ১০ লক্ষ ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।