আবু ধাবিতে প্রথম হিন্দু মন্দিরের উদ্ধোধন নরেন্দ্র মোদীর, বুধবার। ছবি: রয়টার্স।
আবু ধাবিতে প্রথম হিন্দু মন্দিরের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দু’দিনের সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফরের দ্বিতীয় দিনে বুধবার আবু ধাবিতে বিএপিএস (বোচাসনবাসি শ্রী অক্ষর পুরুষোত্তম স্বামীনারায়ণ সংস্থা)-এর উদ্যোগে তৈরি এই মন্দিরের উদ্বোধনের জাঁকজমক কিছু দিন আগের অযোধ্যাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে বলে জানাচ্ছে রাজনৈতিক মহল। আমিরশাহি সফর শেষ করে বুধবার রাতেই মোদী কাতারে পৌঁছেছেন। সে দেশের আমিরের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা। সম্প্রতি গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে দণ্ডিত আট প্রাক্তন ভারতীয় নৌসেনাকে মুক্তি দিয়েছে কাতার। যা দিল্লির বড় সাফল্য বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা।
আড়ম্বরপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন চিত্রতারকা অক্ষয় কুমার, বিবেক ওবেরয়, গায়ক শঙ্কর মহাদেবনের মতো ব্যক্তিত্বরা। আগাগোড়া ছিলেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট শেখ মহম্মদ বিন জায়েদ অল নাহয়ান। প্রধানমন্ত্রী যাঁর উদ্দেশে রাতে বলেন, “আমার ভাই মহম্মদ বিন জায়েদের এই উদারতার জন্য ধন্যবাদ শব্দটিও আজ খুব ছোট শোনাচ্ছে। এত উদারতার সঙ্গে এই কাজটি করলেন তিনি। গোটা বিশ্বই যেন তাঁর এই উদার চিন্তার কথা জানতে পারে। ভারতের প্রতি তাঁর বন্ধুত্বের ভাবনা আমাদের পুঁজি।” মোদীর সফর উপলক্ষে তেরঙ্গা আলোয় সেজেছে বুর্জ খলিফা। বিশ্বের উচ্চতম এই বাড়ির পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরশাহি আজ এক নতুন সাংস্কৃতিক চিহ্ন পেল বলেই দাবি প্রধানমন্ত্রীর। তাঁর মতে, এই মন্দিরের ফলে দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়বে, আধ্যাত্মিক পর্যটনও বাড়বে।
সিপিআইয়ের রাজ্যসভা সাংসদ বিনয় বিশ্বম অবশ্য সমাজমাধ্যমে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘একটি ইসলামি দেশ হিন্দু মন্দির তৈরি করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রণ করে, আর ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ভারতে ৪০০ বছরের বেশি পুরনো মসজিদ ভেঙে ফেলে তার কবরস্থানে মন্দির তৈরি করা হয় এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধন করেন।’
আবু ধাবিতে এটিই প্রথম হিন্দু মন্দির। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে দ্বিতীয়। ওই দেশের বৃহত্তম শহর দুবাইয়ে রয়েছে একটি মন্দির। ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৫ সালে আমিরশাহি সফরে গিয়েছিলেন মোদী। তার পরই সে দেশের সরকার ঘোষণা করে, তারা হিন্দু মন্দির গড়ার জন্য ২০ হাজার বর্গ মিটার জমি বরাদ্দ করবে আবু ধাবির শেখ জায়েদ হাইওয়ের পাশে আবু মুরেইখায়। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “বিএপিএস মন্দিরটি সম্প্রীতি, শান্তি এবং সহিষ্ণুতার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি যে গুণগুলির প্রতি দায়বদ্ধ।”
সে দেশের সরকার এবং শেখ মোহম্মদ বিন জায়েদ অল নাহয়ানের উদ্দেশে মোদী বলেন, “আমার কাছে বিএপিএস মন্দির ভারতের প্রতি আপনাদের ভালবাসার প্রতিফলন। আপনাদের সমর্থন ছাড়া এটা হওয়াই সম্ভব ছিল না। আমাদের প্রথম বৈঠকের দিনই আমি অনুরোধ করেছিলাম যদি এই বিষয়ে কিছু করা যায়। এবং আপনারা তাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেন। আমাকে বলা হয়েছিল, ‘যেখানেই আপনার আঙুল রাখবেন সেটাই আপনার হবে’।”
২০১৯-এর এপ্রিলে শিলান্যাস হয় এই মন্দিরের। ডিসেম্বরে শুরু হয় নির্মাণকাজ। গত বছর ডিসেম্বর মাসে অক্ষর পুরুষোত্তম স্বামীনারায়ণ সংস্থার পক্ষ থেকে মন্দির উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানানো হয় মোদীকে।
এর আগে আজ দুবাইয়ে ‘ওয়র্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট’-এর উদ্বোধনী বক্তৃতা দেন মোদী। তাঁর কথায়, “কোভিডের পর বহু জায়গাতেই সরকারের উপর দেশবাসীর আস্থা কমেছে। কিন্তু ভারতবাসীর ভরসা কোভিডের পর আরও বেড়েছে।” বলেছেন, “কম সময়ে ভারত বিশ্বের স্টার্ট আপ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। প্রান্তের শেষ মানুষটির কাছেও যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনার সুফল পৌঁছয়, তাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ভেদাভেদ অথবা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিইনি।”