রাজৌরিতে সেনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দীপাবলি উদ্যাপন। পিটিআই
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে প্রথম সে রাজ্যের মাটিতে পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পুঞ্চের রাজৌরিতে নিয়ন্ত্রণরেখায় মোতায়েন সেনাদের সঙ্গে দীপাবলি উদ্যাপন করলেন। সেই সঙ্গে উস্কে দিলেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রসঙ্গ। এই প্রথম পাক অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) নিয়ে মুখ খুললেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।
আজ সরাসরি রাজৌরিতে বি জি ব্রিগেডের সদর দফতরে যান মোদী। সঙ্গে ছিলেন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত। সেখানে সেনাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বিমান পৌঁছনোর কিছু ক্ষণ আগেই রাজৌরি সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় সেনার পোস্ট লক্ষ্য করে হামলা চালায় পাকিস্তান। জবাব দেয় ভারত। দীপাবলির মিষ্টি বিনিময় হয়নি আজ।
‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনির মধ্যে সেনার জ্যাকেট গায়ে জওয়ানদের মিষ্টি বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সেনাদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘দেশভাগের পরে কাশ্মীর দখলের ছক কষেছিল পাকিস্তান। আমাদের সেনারা সেই ছক ব্যর্থ করে দেন। কিন্তু কাশ্মীরের কিছু অংশ ওদের হাতে থেকে গিয়েছে। বেআইনি ভাবে ওরা সেই অংশ দখল করে আছে। সেই যন্ত্রণা আমরা ভুলিনি।’’ এর আগে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্য নিয়ে মুখ খুলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ দাবি করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে কেবল পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই আলোচনা হতে পারে। সম্প্রতি আবার সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত বলেছেন, ‘‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’ আজ মোদীও সেই সুরে মুখ খোলায় পিওকে নিয়ে সরকার ধাপে ধাপে সুর চড়াচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনীতিকেরা।
রাজৌরির সদর দফতরে উপস্থিত প্রায় এক হাজার সেনার উদ্দেশে মোদী বলেন, ‘‘আপনাদের বীরত্বের জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার এমন সব সিদ্ধান্ত নিতে পারছে যা আগে অসম্ভব বলে মনে করা হত।’’ রাজনীতিকদের মতে, পরোক্ষে পুলওয়ামা হামলার পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযান এবং জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের কথা বলেছেন মোদী।
১৯৪৭ সালে এ দিনই প্রথম কাশ্মীরে পা রেখেছিলেন ভারতীয় সেনারা। সেই ঘটনার স্মৃতিতে পালন করা হয় ‘ইনফ্যান্ট্রি ডে’। দীপাবলির পাশাপাশি মোদীর সফরের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে সেনার সেই উৎসবও।
২০১৪ সাল থেকেই সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন সেনা ও আধাসেনাদের সঙ্গে দীপাবলি উদ্যাপন শুরু করেন মোদী। সিয়াচেন, পঞ্জাব, হিমাচল, উত্তর কাশ্মীর এবং উত্তরাখণ্ড সীমান্তে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে রাজৌরি সেক্টরকে বেছে নেওয়ায় মোদীর সফর অন্য মাত্রা পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজৌরির পরে পঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটিতেও যান তিনি।
মোদীর সঙ্গে কথা বলে স্পষ্টতই উল্লসিত সেনারা। এক জন বললেন, ‘‘কখনও ভাবিনি প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে দীপাবলি উদ্যাপন করবেন। এটা আমাদের কাছে বড় বিস্ময়। ওঁর সঙ্গে দেখা করে আমরা গর্বিত।’’
এরই মধ্যে সরকারকে চিন্তায় রেখেছে কাশ্মীরে জঙ্গিদের নয়া কৌশল। বৃহস্পতিবার শোপিয়ান জেলায় জঙ্গি হামলায় দুই ট্রাকচালক নিহত হওয়ার পরে তল্লাশি শুরু করে যৌথ বাহিনী। জওয়ানেরা দেখতে পান, ৪০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইন কাটা রয়েছে। ক্ষতি করা হয়েছে একটি টাওয়ারেরও। প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, ওই টাওয়ার ভেঙে পড়লে কাশ্মীরের নানা অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত।