Narendra Modi

PM CARES: পিএম কেয়ার্স ফান্ড সরকারি তহবিল নয়! হলফনামা দিয়ে দাবি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের

পিএম-কেয়ার্স (প্রাইম মিনিস্টার্স সিটিজেন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড রিলিফ ইন এমারজেন্সি সিচ্যুয়েশন ফান্ড)-কে তৃণমূল ‘প্রাইম মিনিস্টার কুড নট কেয়ার লেস ফান্ড’ বলে তকমা দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:০৯
Share:

ফের বিতর্ক পিএম-কেয়ার্স তহবিল নিয়ে। ছবি: পিটিআই।

প্রধানমন্ত্রীর নামেই তহবিল। তিনিই চেয়ারম্যান। তহবিলের ঠিকানা সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দফতরের দাবি, পিএম-কেয়ার্স তহবিলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই! এই তহবিল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন নয়। এর কাজকর্মেও সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।

Advertisement

গত বছর মার্চে কোভিডের মোকাবিলায় পিএম-কেয়ার্স তহবিল তৈরি হয়েছিল। শুধু যে প্রধানমন্ত্রী তার চেয়ারম্যান, তা নয়। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী তহবিলের অছি পরিষদের সদস্য। তার ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি রয়েছে। নামের সঙ্গে জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভও রয়েছে। তাতে চাঁদা চেয়ে সরকারি খরচে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, ব্যাঙ্কের কর্মীদের বেতন কেটে তহবিলে টাকা জমা করা হয়েছে। রেল থেকে বিদেশ মন্ত্রক, শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রক— সরকারের প্রতিটি মন্ত্রকই কোটি কোটি টাকা এই তহবিলে অনুদান হিসেবে জমা করেছে।

এমন একটা তহবিলের কোনও হিসাব পরীক্ষা অবশ্য হয়নি গত দেড় বছরে। এ নিয়ে বারবার বিরোধীরা দাবি জানালেও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বারবারই দাবি করা হয়েছে, এটা সরকারি তহবিল নয়। তাতে প্রশ্ন বেড়েছে বই কমেনি। শেষ অবধি মামলায় আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি প্রদীপ কুমার শ্রীবাস্তব দিল্লি হাই কোর্টে হলফনামা দিয়ে দাবি করেছেন, এই তহবিলে বাজেট থেকে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হয় না। শুধু মাত্র স্বেচ্ছায় অনুদানই জমা পড়ে। সংবিধান বা সংসদের তৈরি কোনও আইনের মাধ্যমে এই তহবিল তৈরি করা হয়নি। কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের প্রশ্ন, পিএম-কেয়ার্সের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনও সম্পর্ক না থাকলে তিনি কেন একটা বেসরকারি তহবিলে চাঁদা জোগাড়ের জন্য নিজের পদের অপব্যবহার করেছেন?

Advertisement

পিএম-কেয়ার্সে কত টাকা জমা পড়ছে আর সেই টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে, তা নিয়ে প্রথম থেকেই অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থাকতে কেন আলাদা করে তহবিল তৈরির প্রয়োজন পড়ল, তা নিয়েও বিরোধী নেতানেত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন। তথ্যের অধিকার আইনে এই তহবিলের জমা-খরচ নিয়ে কোনও তথ্য দিতে চায়নি প্রধানমন্ত্রীর দফতর। সরকারি হিসেব পরীক্ষক সংস্থা সিএজি-কেও এর হিসেবনিকেশ পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়নি। বিরোধীরা এ নিয়ে সংসদেও প্রশ্ন তুলেছেন।

মোদী সরকার বরাবরই যুক্তি দিয়েছে, পিএম- কেয়ার্স পাবলিক চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। এ’টি কোনও সরকারি সংস্থা নয়। অথচ পিএম- কেয়ার্স তহবিল থেকে কোভিডের টিকা, চিকিৎসার ভেন্টিলেটর কেনা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরই বিবৃতি দিয়েছে। পিএম-কেয়ার্সের ওয়েবসাইটে যোগাযোগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আন্ডার সেক্রেটারির নামই রয়েছে। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতরই হাই কোর্টে জানিয়েছে, সরকারি অফিসার নিজের সরকারি কাজের পরে যদি কোনও সংস্থার কাজকর্মে সাহায্য করে থাকেন, তার জন্য সেই সংস্থাকে সরকারি সংস্থা বলা চলে না।

দিল্লি হাই কোর্টে আইনজীবী সম্যক গাঙ্গোয়াল গোটা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলা করেছিলেন। তাঁর আর্জি ছিল, আদালতও যদি মেনে নেয় যে পিএম-কেয়ার্স তহবিল কোনও সরকারি সংস্থা নয়, তা হলে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ছবি, জাতীয় প্রতীকের ব্যবহার বন্ধ করা হোক। আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতর পিএম- কেয়ার্স তহবিলের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক নেই বলে জানিয়ে দেওয়ার পরে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, যদি এটা সরকারি তহবিল না হয়, তা হলে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নাম কেন? কেন সরকারি কর্মচারী, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মীদের বাধ্য করা হয়েছিল এতে টাকা জমা করতে? খোদ অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব দফতর গত বছরের এপ্রিলে সার্কুলার জারি করে জানিয়েছিল, কারও আপত্তি না থাকলে এক বছর পর্যন্ত ইচ্ছুক কর্মীদের প্রতি মাসে একদিনের বেতন কেটে পিএম-কেয়ার্সে জমা করা হবে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, পিএম-কেয়ার্সে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে। সেই টাকা কোথায় গেল?

পিএম-কেয়ার্স (প্রাইম মিনিস্টার্স সিটিজেন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড রিলিফ ইন এমারজেন্সি সিচ্যুয়েশন ফান্ড)-কে তৃণমূল ‘প্রাইম মিনিস্টার কুড নট কেয়ার লেস ফান্ড’ বলে তকমা দিয়েছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, এই তহবিল বিশ্বের সব থেকে অস্বচ্ছ ও অন্ধকারে ঢাকা। গত বছর সেপ্টেম্বর সংসদের অধিবেশনের সময় লোকসভা, রাজ্যসভায় বিরোধীরা পিএম-কেয়ার্স নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এই তহবিলে অনুদানে কর ছাড়, এমনকি বিদেশ থেকে অনুদানেও ছাড় দেওয়া হয়। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এর জবাব দেননি। সরকারের তরফে অনুরাগ ঠাকুর বলেছিলেন, শুধু মাত্র গাঁধী পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল তৈরি হয়েছিল। আজ সরকারি হলফনামার পরে কংগ্রেসের দাবি, পিএম-কেয়ার্সের টাকা কোথায় গেল, নরেন্দ্র মোদীকেই তার জবাব দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন আমলা অনিল স্বরূপ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘অ-সরকারি কাজে ‘প্রধানমন্ত্রী’ শব্দটি ব্যবহার করা যায়? সরকারি তহবিল না হওয়া সত্ত্বেও প্রদানমন্ত্রীর নামে টাকা তোলা যায়? কোথাও কি একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে?’’

দিল্লি হাই কোর্টে প্রধান বিচারপতি ডি এন পটেলের বেঞ্চে ২৭ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানি হবে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর আজ যুক্তি দিয়েছে, পিএম-কেয়ার্স তথ্যের অধিকার আইনে না এলেও সমস্ত তথ্য ওয়েবসাইটেই রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে গত বছর ২৭ মার্চ তৈরি হওয়া পিএম-কেয়ার্সের ওয়েবসাইটে গত বছরেরই ৩১ মার্চ পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র চার দিনের আয়-ব্যয়ের হিসেব রয়েছে। তার পরে এক বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও আর কোনও আয়-ব্যয়ের হিসেব নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement