দু’দিন আগে নেতাজি সংক্রান্ত ৬৪টি গোপন ফাইল প্রকাশ করে দিল্লির উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ আংশিক ভাবে সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সক্রিয় হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রের হাতে থাকা নেতাজি ফাইল সর্বসমক্ষে আনা হবে কি না, তা নিয়ে নিরুত্তর থাকলেও নেতাজির ব্যাপারে তিনি যে আন্তরিক, সেটা বুঝিয়ে দিলেন মোদী।
আকাশবাণীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আজ প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেতাজি পরিবারের সমস্ত সদস্যকে তিনি নিজের বাসভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মোদী বলেন, ‘‘কলকাতা সফরে গিয়ে সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের কিছু সদস্যের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। তখনই ঠিক হয়, সুভাষবাবুর পরিবারের সব সদস্য এক বার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আসবেন। গত সপ্তাহে জানতে পেরেছি, ওঁরা প্রায় ৫০ জন মিলে আগামী মাসে আসছেন।’’ মোদীর বক্তব্য, বসু পরিবারের সকলকে অভ্যর্থনা করার সুযোগ পাবেন বলে তিনি রীতিমতো আপ্লুত বোধ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সম্ভবত এই প্রথম বার নেতাজি পরিবারের সকলে এক সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আসছেন। অক্টোবরে ওঁদের অভ্যর্থনা জানানোর যে সুযোগ আমি পাচ্ছি, তা এর আগে কোনও প্রধানমন্ত্রী পাননি।’’
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই নেতাজি অন্তর্ধান রহস্য সমাধানে তৎপরতা দেখাতে শুরু করেছিলেন মোদী। একাধিক বার নেতাজি পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। কেন্দ্রের হাতে থাকা নেতাজি সংক্রান্ত গোপন ফাইলগুলি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গড়েন। বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, এর থেকে দু’ধরনের রাজনৈতিক ফায়দা মিলবে বলে ভাবা হয়েছিল। প্রথমত, নেতাজিকে নিয়ে নেহরু সরকারের মনোভাব কী ছিল, তা সামনে টেনে এনে কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলা। দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গে দলের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বাঙালি ভাবাবেগকে বিজেপির পালে নিয়ে আসা। এপ্রিল মাসেই নেতাজি সংক্রান্ত দু’টি গোপন ফাইল জনসমক্ষে এনেছে কেন্দ্র। তাতে দেখা যায়, স্বাধীনতার পরে প্রায় তিন দশক ধরে কংগ্রেস সরকারের নির্দেশে বসু পরিবারের সদস্যদের উপর পুলিশ নজরদারি চালাত। তাই নিয়ে এক প্রস্ত অস্বস্তির মুখে পড়ে কংগ্রেস শিবির।
কিন্তু এর মধ্যে রাজ্যের হাতে থাকা নেতাজি সংক্রান্ত ফাইলগুলি মমতা প্রকাশ করে দিয়েছেন। ফলে ফাইল প্রকাশের প্রতিযোগিতায় কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছেন মোদী তথা বিজেপি নেতৃত্ব। এখন কেন্দ্র তার সব ফাইল প্রকাশ্যে আনবে কি না, তাই নিয়ে চাপ তৈরি হয়েছে মোদীর উপরে। যদিও নেতাজি সংক্রান্ত গোপন ফাইল প্রকাশে কেন্দ্র এখনও ধীরে চলার পক্ষপাতী। গত কাল সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু স্পষ্ট করে দেন, ‘‘কেন্দ্রের হাতে থাকা ফাইল প্রকাশের আগে দেখতে হবে ওই সব ফাইলে কী রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার কী প্রভাব পড়বে, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে।’’ এর পর আজ ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে খোদ প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে কিছু বলেন কি না, সে ব্যাপারে জল্পনা ছিল পূর্ণমাত্রায়।
মূলত প্রতি মাসের শেষ রবিবার দেশবাসীর উদ্দেশে রেডিওর মাধ্যমে বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আগামী সপ্তাহে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশন উপলক্ষে তিনি আমেরিকায় থাকবেন বলে, আজ তৃতীয় রবিবারেই ওই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। নেতাজি ফাইলগুলির ভবিষ্যৎ কী, সে বিষয়ে মোদী অবশ্য শেষমেশ কিছু বলেননি এ দিন। বসু পরিবারকে আমন্ত্রণের প্রসঙ্গটি এনেই মমতার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, গত ৬৮ বছর ধরে যে ‘উপেক্ষা’র শিকার হয়েছেন নেতাজির উত্তরসূরিরা, তিনিই তার অবসান ঘটাতে চলেছেন।
সেই সঙ্গে মোদী দাবি করেছেন, নেতাজি রহস্য সমাধানে তিনিও আন্তরিক। তিনিও চান নেতাজির অন্তর্ধান সংক্রান্ত তথ্য জনসমক্ষে আসুক। বিজেপির শীর্ষ সূত্রের খবর, অক্টোবর মাসে বসু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকেও ওই বার্তাই দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বসু পরিবারও ওই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। কেন্দ্র যাতে তাদের হাতে থাকা সব ফাইল প্রকাশ করে, তার জন্য আর এক প্রস্ত অনুরোধ জানাবেন তাঁরা। নেতাজির ভাইপো অমিয়নাথ বসুর পুত্র চন্দ্র বসু এ দিন জানান, শুধু কেন্দ্রের হাতে থাকা ফাইলই নয়। রাশিয়া, জাপান, চিন, আমেরিকা, ব্রিটেন, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলিও যাতে তাদের হাতে থাকা নেতাজি-ফাইল প্রকাশ করে, তার জন্য চাপ তৈরি করতে কেন্দ্রকে অনুরোধ করা হবে।