আলিমুদ্দিনেও যে দৃশ্য বিরল, আজ তা-ই দেখা গেল দিল্লির এ কে গোপালন ভবনে! সাংবাদিক বৈঠক করতে একই সঙ্গে হাজির হলেন সীতারাম ইয়েচুরি, সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু ও মহম্মদ সেলিম।
বিষয়: কলকাতায় ডিসেম্বরে প্লেনামের প্রস্তুতি। পলিটব্যুরোর চার নেতার একসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেল, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে এই প্লেনামকে সামনে রেখেই দলের সংগঠনকে যতটা সম্ভব চাঙ্গা করতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
বিধানসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা হবে কি না, সেই প্রশ্নে আজ ফের সম্ভাবনা খোলাই রেখেছেন ইয়েচুরি। তাঁর বক্তব্য, বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে এখনও আলোচনাই শুরু হয়নি। আপাতত প্লেনামের আগে সংগঠন মজবুত করার দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘রাজনৈতিক কৌশল যা-ই হোক, সংগঠন দুর্বল হলে কোনও লাভ হবে না। যে রাজনৈতিক কৌশলই নেওয়া হোক, তাকে কার্যকর করার জন্য সংগঠনের ক্ষমতা থাকা জরুরি। তাই সংগঠন মজবুত করাটাই আমাদের অগ্রাধিকার।’’ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির চলতি বৈঠকে সেই প্লেনামে আলোচনার জন্যই সাংগঠনিক রিপোর্ট ও তার ভিত্তিতে কর্মসূচির প্রস্তাব চূড়ান্ত হচ্ছে।
সালকিয়ার ৩৭ বছর পরে এই প্রথম সংগঠনের বিষয়ে দলীয় প্লেনাম কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পিছনে সিপিএমের লক্ষ্যই ছিল, পশ্চিমবঙ্গের ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনকে চাঙ্গা করা। কেরলে পঞ্চায়েত ও পুরভোটে বিপুল জয় দক্ষিণী ওই রাজ্যে বামেদের অনেকটাই উজ্জীবিত করেছে। এ বার ইয়েচুরিরা চাইছেন বাংলায় ভোটের আগে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে। সেই লক্ষ্যেই প্লেনামের শুরুতে ২৭ ডিসেম্বর ব্রিগেডের সভায় ১০ লক্ষের জনসমাবেশ করার লক্ষ্য হাতে নিয়েছেন সূর্যবাবু-বিমানবাবুরা। ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে পদযাত্রা (জাঠা) শুরু হয়ে গিয়েছে। এর পরে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধেও প্রচার চলবে। ততে যোগ দেবে বামফ্রন্টের বাইরের বাম দলগুলিও।
বঙ্গে দলের সংগঠনে ইতিমধ্যেই কিছুটা প্রাণ এসেছে বলে মনে করছেন রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু। তাঁর যুক্তি, লোকসভা ভোটের পরে আপাত ভাবে মনে হচ্ছিল, বিজেপিই যেন প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু তারা সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে সরব হতেই পারেনি। এখন এটা স্পষ্ট যে, বামেরাই একমাত্র বিকল্প।
সিপিএম নেতৃত্বের আশঙ্কা, ব্রিগেডের সমাবেশ বা কলকাতায় প্লেনামে তৃণমূল বা রাজ্য সরকারের তরফে বাগড়া দেওয়া হতে পারে। কারণ জাঠা বা পদযাত্রা করতে গিয়েই সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। সূর্যবাবুর অভিযোগ, জাতীয় সড়ক আইনের দোহাই দিয়ে মেচেদায় তাঁর সভা আটকানোর চেষ্টা হয়েছিল। এমন নয় যে, সভা জাতীয় সড়কের উপরে হচ্ছিল। সরকারি অতিথিশালায় তাঁর থাকার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করা হয়। প্লেনাম বা তার আগে ব্রিগেডের প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও একই সমস্যা তৈরি করা হতে পারে বলে সিপিএমের আশঙ্কা। তবে সূর্যবাবুর দাবি, যে বাধাই আসুক, ব্রিগেডে বহু লক্ষ মানুষের সমাবেশ হবেই। যে কোনও ধরনের হামলাই রুখে দেওয়া হবে!