এম ভি গোবিন্দন মাস্টার।
পিনারাই বিজয়নের অনুপস্থিতিতে কেরলের ভারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে এম ভি গোবিন্দন মাস্টারকে। সিপিএম সূত্রের খবর, দলে বিস্তর আলাপ-আলোচনার পরে শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়েছে। বিজয়নের পরে তা হলে গোবিন্দনকেই মুখ হিসেবে সামনে আনা হতে পারে কি না, এই জল্পনায় ইন্ধন যোগ হয়েছে কেরল সিপিএমের পদক্ষেপে।
আগামী সপ্তাহেই চিকিৎসার জন্য আমেরিকার রচেস্টার রওনা হওয়ার কথা বিজয়নের। মুখ্যমন্ত্রী সরকারি সফরে বা অন্য কাজে দেশের বাইরে থাকলে মন্ত্রিসভার বর্ষীয়ান কোনও সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালাতে দেওয়াই রীতি। অতীতে পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানায় মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বিদেশে গেলে বিনয় চৌধুরীকে যেমন ভারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে দেখা যেত। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বিদেশ সফরে সময়ে নির্দিষ্ট এক জনকে না দিয়ে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের একটি দলকে সমন্বয় করে কাজ চালানোর ভার দিয়ে গিয়েছেন, এমন নজিরও আছে। কিন্তু এ বারের কেরলে সমস্যা ছিল অন্য। টানা দু’বার বা তার বেশি সময় বিধায়ক ছিলেন, এমন কাউকে গত বছর বিধানসভা ভোটে আর প্রার্থী না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএম। বিজয়ন ছিলেন ‘ব্যতিক্রম’। এখন বিজয়নের অনুপস্থিতিতে মন্ত্রিসভার তেমন অভিজ্ঞ সদস্য খুঁজে পাওয়া তাই দুষ্কর!
এই প্রেক্ষিতেই ভারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। কেরলে অতীতে এলডিএফ মন্ত্রিসভায় বিজয়নের আস্থাভাজন মন্ত্রী ছিলেন কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন, তাঁর হাতেই ছিল পুলিশ দফতর। বিজয়ন তখন দলের রাজ্য সম্পাদক। এখন আবার বালকৃষ্ণন রাজ্যে দলের দায়িত্বে। আলাপ-আলোচনার পরে বিজয়ন-বালকৃষ্ণনেরা স্থানীয় স্বশাসন, গ্রামোন্নয়ন ও আবগারি দফতরের মন্ত্রী গেবিন্দনকে বেছে নিয়েছেন বলেই দলীয় সূত্রের খবর। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গোবিন্দন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন ও রাজ্য সম্পাদক বালকৃষ্ণনের মতোই কান্নুর জেলার নেতা। কান্নুরের তালিপরম্বা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দু’বার বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। তার পরে আবার তাঁকে প্রার্থী করা হয় ২০২১ সালে। কেরল সিপিএমের মালয়ালম মুখপত্রের এক সময়ে সম্পাদক ছিলেন তিনি। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, ভারপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিকতার জন্য গোবিন্দনকে বেছে নেওয়ার মধ্যে সিপিএমের ‘কান্নুর লবি’র আধিপত্যের বার্তা আবার প্রতিষ্ঠিত হল। প্রসঙ্গত, চার বছর আগে বিজয়ন যখন বিদেশে গিয়েছিলেন, সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাজ চালানোর ভার দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী ই ভি জয়রাজনকে।
মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের হাতেই এখন কেরলে পুলিশ দফতর। রাজ্য জুড়ে নানা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে এ বার কেরল সিপিএমের কয়েকটি জেলা সম্মেলনে সরব হয়েছেন দলের প্রতিনিধিদের একাংশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে দলীয় মুখপত্রে কলম ধরে দলের রাজ্য সম্পাদক বালকৃষ্ণন বার্তা দিয়েছেন, পুলিশের কোনও অংশ ক্ষমতা বা পদের অপব্যবহার করলে বা ভুল কাজ করে থাকলে সরকার নিশ্চয়ই তা দেখবে। কিন্তু কোনও ‘কারণেই’ পুলিশের কাজে দলীয় কর্মীদের হস্তক্ষেপ চলবে না, ‘দুষ্কৃতী’দের পাশে দাঁড়ানোও নয়। নাগরিক হিসেবে দলীয় কর্মীরাও পুলিশের দ্বারস্থ হতে পারেন মাত্র।